
|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||
খুলনার চুকনগর বাজারের ৭০ ফুট প্রশস্ত যতিন-কাশিম সড়ক এখন কার্যত মাত্র ৩২ ফুটে সঙ্কুচিত। সড়কের দুপাশে গড়ে ওঠা ৭০টি দোকানঘরকে অবৈধ ঘোষণা করে গত ৬ নভেম্বর তিন মাসের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু রায় পাওয়ার পর এক মাস পেরোলেও মাঠে নামেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বরং খুলনা জেলা পরিষদ জানিয়েছে, তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, অবৈধ স্থাপনা সরালে ভারী পরিবহনসহ সব যান চলাচল নির্বিঘ্ন হবে। সড়কের প্রাণ ফিরে আসবে। কিন্তু রায়ের পরও স্থবিরতা থাকায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে সড়কের সব অননুমোদিত দোকান, ভবন, টিনশেডসহ স্থায়ী-অস্থায়ী কাঠামো অপসারণ করে ৭০ ফুট মূল প্রস্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি জেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নতুন করে কোনও ইজারা, অনুমতি বা দখল না দিতে নিষিদ্ধ করা হয়।
তদন্ত নথিতে উঠে এসেছে, সড়কের দুপাশে ১৮ ও ২০ ফুট দখল করে ৭০টি দোকানঘর নির্মাণ করেছে জেলা পরিষদ। প্রতিটি দোকান ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ইজারা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এতে ৭ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। অথচ জেলা পরিষদের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুযায়ী জনসাধারণের ব্যবহার্য সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না।
২০২১ সালে যানজট কমাতে সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল জেলা পরিষদ। কিন্তু সড়ক সম্প্রসারণের বদলে ২০২২ সালে আবারও দোকানঘর নির্মাণ করে ইজারা দেওয়া শুরু হয়। বাধা দিতে গেলে ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগও ওঠে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী পার্থ কুমার কুন্ডু মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করলে তদন্তে নিশ্চিত করা হয়, সিএস ও এসএ রেকর্ডে সড়কটি জনসাধারণের রাস্তা। ৭০ ফুট প্রস্থের সড়কের ৩৮ ফুট জায়গা দখল করে দোকানঘর তোলা হয়েছে। জনস্বার্থে জমি ব্যবহার না করার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে।
খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক হুসাইন শওকাত বলেন, “রায়ের বিরুদ্ধে জেলা পরিষদ আপিল করবে। আপিলে রায় বহাল থাকলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।”
চুকনগরের মানুষ এখন তাকিয়ে আছে—হাইকোর্টের রায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কি সড়ক ফিরে পাবে তার ৭০ ফুটের পুরনো রূপ?
