শনিবার, জানুয়ারি ৪

চাচী ভাতিজার পরকীয়ার জেরে সাংবাদিককে হুমকি

|| নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি ||

নরসিংদীর রায়পুরায় স্বামীর মৃত্যুর পর ভাতিজার সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়া। এ নিয়ে এলাকায় চলছে চাঞ্চল্য অবস্থা। এমনি এক ঘটনা উঠেছে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দুইটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাচী-ভাতিজার এমন পরকীয়ার ঘটনায় স্থানীয় বখাটেরা সাংবাদিককে হুমকিও দিচ্ছেন।

মৃত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম ভাতিজা দুলাল মিয়ার পরকীয়া খবর জানাজানি হলে গৌরীপুর এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। স্থানীয় এলাকাবাসীর হাতেনাতে ধরা পড়ার পর পরকীয়ার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত ফেরদৌসী।

জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার গৌরীপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আলীর সাথে তের বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের ইউনুছ মিয়ার মেয়ে ফেরদৌসীর।

এই দম্পত্তির ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ ২০১৭ সালে স্বামী মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর হয়।

এরপর থেকে দুই সন্তানের জননী ফেরদৌসী অনেকটা একাকিত্বে ভোগেন। চাচার মৃত্যুর পর ভাতিজা বাড়িতে যাওয়া আসা শুরু করে। ওই সময় ভাসুরের ছেলে দুলালের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন চাচী ফেরদৌসী বেগম। চাচী ও ভাতিজার মধ্যে তৈরি হয় পরকীয়া। দুলাল নিজেও বিবাহিত তারও রয়েছে চার সন্তান। তিন মাস আগে পরকীয়া করতে গিয়ে একসাথে একরুমে ধরা পড়েন ফেরদৌসী ও দুলাল। তখন স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের আটক করলে তারা বিয়ের কাবিননামা দেখিয়ে বলেন তারা নাকি স্বামী স্ত্রী।

ভাতিজা দুলাল মিয়ার প্রথম স্ত্রী হাসি বেগম ভিডিও বক্তব্যে জানান, ২০১৭ সালে দুই সন্তানের জননী ফেরদৌসীর স্বামী মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর আমার স্বামীর সঙ্গে নিয়মিত পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আমাদের দাম্পত্য জীবনে চার সন্তান রয়েছে। প্রায় তিন মাস পূর্বে পরকীয়া করতে গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর হাতেনাতে ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় তাদের বিচারের দাবি উঠলে এলাকাবাসী স্থানীয় একটি সালিসি দরবারে লিখিত স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারবদ্ধভাবে একে অপরকে তালাক দেওয়া ফেরদৌসীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তাছাড়া তিনি আরও ভিডিও বক্তব্যে জানান, ফেরদৌসী বেগম কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি কামাল পাঠান, বিপ্লব ও ওয়াসিমসহ আরও কয়েকজন জড়িত থাকায় তাদের সহযোগিতায় ফেরদৌসী বেগম আবার তার মৃত স্বামী মোহাম্মদ আলীর ঘরের তালা ভেঙে উঠে। আমার স্বামী দুলাল মিয়া এখনও আমার সংসারে অশান্তি ও অত্যাচার করতে থাকে প্রতিনিয়তই।

ভাতিজা দুলাল মিয়ার চাচা আবু বক্কর জানান, বেশ কিছুদিন পূর্বে আবার হঠাৎ কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আমার ভাই মৃত মোহাম্মদ আলীর ঘরের তালা ভেঙে ফেরদৌসী বাড়িতে উঠে। সে ফিরে আসাকে মেনে নিতে পারি নাই বলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অফিসার ইনচার্জের বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করি। এ নিয়ে আমাদের গ্রামে উত্তেজনা ও অশান্তি বিরাজ করছে। এছাড়াও ফেরদৌসী আমাকে মিথ্যা বানোয়াট মামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ফেরদৌসীকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে প্রশাসনের সহযোগিতায় দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে এ প্রতিনিধি মুঠোফোনে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফেরদৌসী বেগম জানান, আমি কিছু বলতে পারবো না। কারণ কামাল পাঠান, মুসা পাঠান ও মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তার বক্তব্য দিতে রাজি নন।

এরপর পরই একের পর এক, একজন বিভিন্ন সময়ে কামাল পাঠান, মামুন ও মুসা পাঠান এ প্রতিনিধিকে তারা পর্যায়ক্রমে তাদের নিজস্ব মুঠোফোনে জানান, এলাকার শান্তি বজায় রাখার জন্য আমরা এলাকাবাসী মিলে স্থানীয় একটি সালিসি দরবারে লিখিত স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারবদ্ধভাবে সমাধান করে দিছি। এখন এই বিষয়ে আমরা নাই।

তাছাড়া কামাল পাঠান তার নিজস্ব মুঠোফোনে প্রতিনিধিকে বলেন, তুমি কতবড় সাংবাদিক হয়েছো, আমি এটা দেখে নিবো। পারলে আমার সামনে আসো বলে আরও হুমকিস্বরূপ মন্তব্য করেন।

ভাতিজা দুলাল মিয়া তার নিজস্ব মুঠোফোনে প্রতিনিধিকে জানান, এ বিষয়ে স্থানীয় একটি সালিসি দরবারে লিখিত স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারবদ্ধভাবে সমস্যা সমাধান করে। যদি ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে আমার কোনোরকম ভবিষ্যতে সম্পর্ক প্রমাণিত হলে আমার জরিমানা দিতে হবে। এখন আমি আমার সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছি। আর আমি এইসবের মধ্যে নাই। আমার প্রথম স্ত্রী হাসি বেগম আমার বিরুদ্ধে অযথা মিথ্যা বানোয়াট লিখিত অভিযোগ দায়ের করছে।

রায়পুরা থানা পুলিশ উপ-পরিদর্শক আল-মামুন জানান, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিব। সাংবাদিককে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাংবাদিকদের রক্ষায় থানাপুলিশ কাজ করে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *