শুক্রবার, নভেম্বর ১৪

চলতি পথের গল্প: এক চাকার ঠেলা

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

খুলনা নগরীর পি.টি.আই মোড়ে প্রতিদিন বিকেলের পর দেখা যায় এক চাকার ঠেলা ঠেলতে এক কিশোরকে। ঠেলায় সাজানো থাকে নানা রকম চপ— রসুনের চপ, ডিমের চপ, চিংড়ি চপ, এমনকি চিকেন চপও। দাম পকেটসই— ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।

কিশোরটির নাম আলী, বয়স আনুমানিক ১৫ বছর। বাড়ি রূপসা নদীর পূর্ব পাড়ে বাগমারা গ্রামে। সেখানকার বাগমারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সে। দিনের বেলা স্কুলে যায়, আর বিকেল নামলেই ঠেলাভ্যানে সাজিয়ে নেয় তার ক্ষুদে ব্যবসার পসরা।

চুলায় গরম তেলে ভাজে মুখরোচক চপ, আর কড়াই থেকে নামতেই খদ্দেরদের ভিড়। অর্ডার পেয়ে আলী কাগজে মুড়ে চপ সাজায়, উপরে ছিটিয়ে দেয় সামান্য লবণ— আর হাসিমুখে তুলে দেয় ক্রেতার হাতে।

খদ্দের দাম দেয়, আর আলী টাকাগুলো যত্ন করে ব্যাগে রাখে। প্রতিদিনের এমন ব্যস্ত বিকেলই তার সংসার চালানোর সহায়।

কথায় কথায় জানতে চাওয়া হলো— দিনে বেচাকেনা কেমন হয়?

নিষ্পাপ চোখে আলী জানায়, “হয় মামা, এক্কেরে খারাপ না।”
আরও জানতে চাইলে প্রথমে গোপন রাখলেও শেষে হেসে বলে,
“মামা, সইন্ধ্যা থেইক্যা রাইত এগারোটা পর্যন্ত থাকলে আঠাইশশো-তিনহাজার বেচাকেনা হয়। লাভ হয় আধা আধি।”

লাভের টাকায় কী করে জানতে চাইলে আলী জানায়,
“নিজের লাইগ্যা অল্প কিছু রাখি, বাকিটা মা’রে দিয়া দেই।”

পি.টি.আই মোড়েই দেখা মেলে আরেক কিশোর বিক্রেতা মারুফের।
সে রাস্তার অন্য পাশে চপ বিক্রি করে। আলী জানায়, দু’জনই একই এলাকার, একই স্কুলের এবং একই ক্লাসের ছাত্র।
বেচাকেনা শেষে তারা একসাথে নদী পেরিয়ে ফিরে যায় বাগমারা গ্রামে।

হাতে ক্যামেরা দেখে মারুফ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
“মামা, কি ছবি তোলেন? ভিডিও করেন?”
জবাবে বলা হলে— “কেন রে?”
সে বলে, “ভিডিও ভাইরাল করে দেন।”

চলতি পথের এই ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের গল্পে ফুটে ওঠে সংগ্রাম, পরিশ্রম আর আত্মসম্মানের এক উজ্জ্বল চিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *