
|| লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ||
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনের দাবীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বরাবর স্মারকলিপি দিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রীয় সংগঠক সাদিক কায়েমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংস্কার এবং ৬ লেনে উন্নীত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
স্মারকলিপিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের চলতি সমস্যা চিহ্নিত করে ৬ লেনে উন্নীত করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ৯টি দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবি-১. অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে অবিলম্বে ৬ লেনে উন্নীত করার ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন।
দাবি-২. মহাসড়কের বিপদজ্জনক স্থানগুলো চিহ্নিত করে, বিশেষ করে জাঙ্গালিয়ার মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার বাঁকগুলোর নকশাগত পরিবর্তন করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো।
দাবি-৩. মহাসড়কে পৃথক এক্সপ্রেস লেন, ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন ও ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা।
দাবি-৪. পর্যাপ্ত ট্র্যাফিক পুলিশ নিয়োগ এবং পর্যটন মৌসুমে অতিরিক্ত ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
দাবি-৫. স্মার্ট ট্র্যাফিক সিস্টেম চালু ও নিয়মিত তদারকি করা, যাতে বিপজ্জনক বাঁকগুলোতে ডিজিটাল সাইনবোর্ড ও ট্র্যাফিক লাইট স্থাপন করা যায়।
দাবি-৬. প্রাথমিকভাবে মহাসড়কের সংস্কার, প্রশস্তকরণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
দাবি-৭. মহাসড়কে লবণবাহী ট্রাক চলাচলের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করে রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ার সমস্যা দূরীকরণ।
দাবি-৮. পর্যটন মৌসুমে বিশেষ ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জোরদার করণ।
দাবি-৯. হাটবাজার ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় নিরাপদ বাংলাদেশ চাই প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র রায়হান উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠক তারেকুজ্জামান, অ্যাক্টিভিস্ট ফরহাদ শাকিব ও হোটেল রয়েল বিচের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নুরুল আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রীয় সংগঠক সাদিক কায়েম জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অনেক বছর ধরে একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা হচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে শত শত তাজা প্রাণ। এর মূল কারণ, সরু-সংক্ষীর্ণ ও সংস্কারহীন সড়ক, যা ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে বিপজ্জনক রূপ ধারণ করেছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে একটি সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককের বিষয়ে তাঁকে অবহিত করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ত্রুটিপূর্ণ নকশা এবং সরু রাস্তা সংস্কার করে এই সড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করে নিরাপদ সড়কের দাবি জানানো হয়।
এর আগে, গত ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। একই দাবীতে গত ৯ এপ্রিল আমরা ১১ জন (নিহত) ব্যানারে লাশের অবয়ব ধারণ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পদযাত্রা ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। ঐ দাবিতে ১১ এপ্রিল নগরের সিআরবি রেল ভবনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে স্মারকলিপি দেন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন বাস্তবায়ন পরিষদ।
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি ঈদের দিন থেকে টানা চারটি দূর্ঘটনায় ১৬ জন নিহতসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহতের ঘটনায় ঘাতক মহাসড়কের সেই ঘটনাস্থল চুনতি জাঙ্গালিয়া পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক।