
|| ডা. আনোয়ার সাদাত ||
দেশ জুড়ে বিরোধী মত দমন করতে, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে নাগরিকদের গুম করা, বিচারবহির্ভূত হত্যা করা, মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা ক্ষমতাশীনদের অতি পুরোনো কৌশল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন রাষ্ট্র নাগরিকদের গুম করা শুরু করে আইনগত জটিলতা এড়ানোর জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুম, যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্দেশ্যে নুরেমবার্গ ট্রায়ালসহ মানবাধিকার বিষয়ক একাধিক কনভেনশন ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো আন্তর্জাতিক আদালতে সাজার ভয়ে নাগরিকদের আটক করে নির্যাতন বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পথ থেকে সরে আসে। কিন্তু এতে রাষ্ট্রের অত্যাচারী চরিত্রের খুব বেশি বদল হয়নি। বরং ভিন্নমত ও চিন্তাকে দমনের নতুন কৌশল অবলম্বন করে।
শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা দখল ও কুক্ষিগত করে রাখার অপরাজনীতির ফলাফল হচ্ছে রাষ্ট্রীয় গুম বা বলপূর্বক নিখোঁজ করা। শাসকেরা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নিজ দেশের নাগরিকদের যেমন গুম করে, আবার আঞ্চলিক রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বৃদ্ধিতেও গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো নির্মম পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেক সময় কখনোই আর খোঁজ পাওয়া না। গেলেও ছায়া হয়ে সবাইকেই তাড়া করে ফেরে। নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন, পরিজনের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘায়িত হতেই থাকে। চিরদিনের মতো ছবি হয়ে যান নিখোঁজ ব্যক্তিরা।
আমাদের দেশেও রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, অধিকারকর্মীদের গুম করার অসংখ্য নজির আছে। তবে গুম, নির্যাতন করেও শেষ রক্ষা হয় না শাসকদের। গত শতকে গুম বা
বলপূর্বক নিখোঁজ করার সঙ্গে জড়িত শাসকদের কমবেশি অনেকে বিচারের মুখোমুখী হয়েছে।
গুম কমিশন বলছে, ভুক্তভোগীদের জোরপূর্বক গুম করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে নিজেরাই আইন ভঙ্গ করেছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে আইনের এই লঙ্ঘন মেনে নেওয়া যায় না। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে আইনের এই লঙ্ঘনকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশে গুম-খুনের ঘটনা বন্ধ করতে, রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ফিরিয়ে আনতে, সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে অতীতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি গুম-খুনের ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচারের দাবি এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেক গ্রহন করার দাবি সচেতন নাগরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
লেখক: ইসলামিক স্কলার, সাংবাদিক ও চিকিৎসক (খুলনা)।
