সোমবার, নভেম্বর ৩

খুলনা-২ আসনে মঞ্জুকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করতে তারেক রহমানের নির্দেশ

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করার নির্দেশ পেয়েছেন দলটির সাবেক সংসদ সদস্য ও খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁকে পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দেন।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘রবিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সরাসরি আমাকে ফোন দেন। তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করুন। নির্বাচনে সবাইকে লাগবে—পক্ষ-বিপক্ষ, পছন্দ-অপছন্দ যাই থাকুক, সবাইকে সঙ্গে নিতে হবে।’
গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। প্রায় চার বছর পর ওই বৈঠকের মাধ্যমে তিনি আবারও দলে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরেন।

বৈঠক শেষে খুলনায় ফেরার পর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকেরা তাঁর দেহে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শনাক্ত করেন। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী অবস্থায় আছেন এবং চিকিৎসাধীন।
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডিতে পরপর দুটি পোস্ট দেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

প্রথম পোস্টে (সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিটে) তিনি লেখেন—
“মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি শুকরিয়া। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দ্রুত সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

এর পরের পোস্টে (সন্ধ্যা ৬টা ৩৪ মিনিটে) তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন—
“দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে উল্লাস প্রকাশ, আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ নিষেধ। কাউকে খাটো করা, বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণ করা বা ‘এবার দেখে নেব’-ধরনের উক্তি থেকে বিরত থাকুন। আমরা সবাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মেনে চলব।”

পোস্টগুলো প্রকাশের পর থেকেই খুলনা বিএনপির নেতা-কর্মী ও অনুসারীরা মঞ্জুকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অনেকেই মন্তব্যে লিখেছেন, “মঞ্জু ভাইয়ের নেতৃত্বে খুলনা-২ আবার প্রাণ ফিরে পাবে।”

কেউ কেউ তাঁর পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, “নেতা ফিরে এসেছেন, এবার ঐক্যের রাজনীতি চাই।”

২০২১ সালের ডিসেম্বরে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ হারান নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সে সময় আহ্বায়ক করা হয় শফিকুল আলম মনাকে এবং সদস্যসচিব করা হয় শফিকুল আলম তুহিনকে। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্জুর অনুসারীরা খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা তখন পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে মঞ্জুকে কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে পদ হারানোর পরও রাজনীতি থেকে সরে যাননি তিনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, মানববন্ধন, শোভাযাত্রা এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থেকেছেন।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু একাধিকবার খুলনা-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ২০০৮ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবেও লড়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মাঠে ফেরা খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি ও ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে।

তাঁর নেতৃত্বে সংগঠনের ভেতরকার বিভক্তি নিরসন এবং ঐক্যের পরিবেশ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা সিনিয়র নেতাদের সক্রিয় করতে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *