
|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||
খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আগামী ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। রবিবার (০২ নভেম্বর) দুপুর ২টায় সমিতির ১নং হলরুমে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমিতির সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
তবে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ আইনজীবীরা। তারা অভিযোগ করেছেন, অ্যাডহক কমিটি অগণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন স্থগিত করে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
রবিবার (০২ নভেম্বর) বিকেলে প্রেসক্লাবে পৃথক দুই সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল ও স্বতন্ত্র আইনজীবী পরিষদের প্রার্থীরা।
প্রথম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ল’ইয়ার্স কাউন্সিল মনোনীত সভাপতি প্রার্থী এড. মো. আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. শেখ জাকিরুল ইসলাম এবং সংগঠনের সেক্রেটারি এড. মনিরুল ইসলাম পান্নাসহ অন্যান্য প্রার্থীরা।
এড. মনিরুল ইসলাম পান্না বলেন, “গত বছরও একই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এবারও সাধারণ সভার নামে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। এটা অগণতান্ত্রিক ও নব্য ফ্যাসিস্টের বহিঃপ্রকাশ।”
তিনি আরও বলেন, “৩০ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বিক্রির তারিখে ফরম না দিয়ে ২ নভেম্বরের কথা বলা হয়। সেদিনও দেওয়া হয়নি। এরপরই হঠাৎ করে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হলো। এটা স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
সংগঠনের সভাপতি এড. শাহ আলম বলেন, “বিএনপি সমর্থিত অ্যাডহক কমিটি ভোটে পরাজয়ের আশঙ্কায় নির্বাচন বানচাল করেছে। সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় দিলাম—এর মধ্যে নির্বাচন না দিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
অন্যদিকে, বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র আইনজীবী পরিষদ। সভাপতি প্রার্থী এড. আক্তার জাহান রুকু বলেন, “আগে আওয়ামী লীগপন্থীরা ভোটে কারচুপি করতো, এখন বিএনপিপন্থীরা ভোট না দিয়েই ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছে। মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো মানে জাতীয় নির্বাচনের আগে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সোমবার বিকেল ৩টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ না নিলে আমরা নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠন ও ইসি কক্ষে তালা দেব।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. নিহিত কান্তি ঘোষ, এড. সাবিত্রি চক্রবর্তী, এড. এস এম মাসুদুর রহমান, এড. হাফিজুর রহমান শান্ত প্রমুখ।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, “আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু অ্যাডহক কমিটি সাধারণ সভার সিদ্ধান্তে নির্বাচন স্থগিতের কথা জানিয়েছে।”
অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা বলেন, “সদস্যদের উদ্বেগ ও নিরাপত্তা বিবেচনায় ৯৪ জন আইনজীবীর লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ সাধারণ সভায় নির্বাচন ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিতের এই সিদ্ধান্তে খুলনার আইনজীবী অঙ্গনে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে। দুই প্যানেলই অভিযোগে-প্রতিআরোপে মুখর। এখন সবার নজর সোমবার বিকেল পর্যন্ত—নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।
