
|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||
খুলনার পাইকগাছা–কয়রা সড়ক আজ চলাচলের অনুপযোগী। গর্তে ভরা রাস্তা, খানাখন্দে আটকে থাকা ট্রাক ও বাস, এবং দীর্ঘ যানজটে অতিষ্ঠ জনজীবন—এটাই এখন খুলনা–পাইকগাছা–কয়রা রুটের বাস্তব চিত্র। তবু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসীর মনে।
২০২০ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল ৩৩৯ কোটি টাকা। তিন দফায় সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৫৩৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে, কিন্তু এখনো সম্পন্ন হয়নি অর্ধেকও।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কাজের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে কিছু অংশে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে জমি অধিগ্রহণ ও মামলা-মোকদ্দমার অজুহাতে প্রকল্পটি প্রায় বন্ধ করে রেখেছে। বর্তমানে সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে তা পরিণত হয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়।
বাস মালিক রফিকুল গাজী জানান, “আগে পাইকগাছা থেকে খুলনা যেতে দেড় ঘণ্টা লাগত, এখন লাগে চার ঘণ্টা। গাড়ির জ্বালানি খরচ তিনগুণ বেড়েছে, ক্ষতি হচ্ছে লাখ টাকার।”
পথচারী সোহেল রানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এ রাস্তায় বের হওয়া মানে অনিশ্চয়তার যাত্রা। সময়মতো পৌঁছানোই ভাগ্যের ব্যাপার।”
নাগরিক ফোরামের নেতারা বলেন, “সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি, সংবাদ প্রকাশ—সব হয়েছে। কিন্তু কাজের কোনো গতি নেই। এক মাসের মধ্যে উদ্যোগ না নিলে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, “জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে কাজ আটকে ছিল। বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে, দ্রুত সমাধান আশা করছি।”
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক জানান, “ভূমি অধিগ্রহণের সমস্যা সমাধানের পরই বাকি কাজ শুরু হবে। কিছু অংশে কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।”
তালা থেকে পাইকগাছা হয়ে কয়রা পর্যন্ত এই ৬০ কিলোমিটার সড়ক খুলনা অঞ্চলের প্রাণরেখা হিসেবে বিবেচিত। অথচ এ পথেই প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে ভোগান্তি। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালিতে, বর্ষায় কাদায়—এ পথ এখন জনদুর্ভোগের প্রতীক।
এলাকাবাসীর দাবি, কথার ফুলঝুরি নয়—বাস্তব উন্নয়ন দেখতে চায় তারা এখনই।
