সোমবার, জুন ১৬

খুলনার আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগারের কাজ সমাপ্ত

|| শেখ শাহরিয়ার | খুলনা প্রতিনিধি ||

খুলনায় আন্তর্জাতিকমানের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার (গমের স্টীল সাইলো)’র নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। খুলনার দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা খাদ্য গুদামের অভ্যন্তরে ভৈরব নদীর তীরে প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৫৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশী কোম্পানি ম্যাক্স গ্রুপ এবং তুর্কির খ্যাতনামা কোম্পানি আল-তুনতাস যৌথভাবে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় খুলনায় আন্তর্জাতিকমানের আধুনিক গমের স্টিল সাইলোটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক যৌথভাবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। স্টিল সাইলোটিতে ৭৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন গম সংরক্ষণ করা যাবে এবং ৩ বছর পর্যন্ত গমের গুণগতমান বজায় থাকবে। তুরস্কের খ্যাতনামা কোম্পানি আল তুনতাস সাইলোর জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করেছে এবং কিছু কাজও করেছে। বাকি প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ সম্পন্ন করেছে নিজস্ব জনবল, অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে।

প্রকল্পের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ভৈরব নদীর পাড়ে জেটি নির্মাণ করা। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকৌশলী ওমর ফারুক জানান, “বিশ্বমানের এই জেটির কাজটি ছিল সবচেয়ে জটিল। স্টিল পাইপ ক্যাচিং পদ্ধতিতে একেকটি ৪২ ফুট দীর্ঘ পাইপ বসিয়ে এবং কংক্রিট দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপর স্নাপ দিয়ে ফিনিশিং করা হয়েছে।” জেটির ৯০ শতাংশ মালামাল এসেছে জার্মানি, তুরস্ক, থাইল্যান্ডসহ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। ব্যবহার করা প্রতিটি উপকরণের মান যাচাই করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। নদীপথে কার্গো থেকে গম আনলোডের জন্য জেটিতে বসানো হয়েছে দুটি আধুনিক মেশিন, এর একটি বাল্কশিপ আনলোডার ও একটি ব্যাগ আনলোডার, যেগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করা। জার্মানির টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টদের মাধ্যমে এগুলোর ইনস্টলেশন সম্পন্ন হয়েছে।

“আলোকিত দৈনিক” এর প্রতিনিধিকে প্রকল্পের পরিচালক ও প্রকৌশলী ওমর ফারুক আরো জানান, স্টিল সাইলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেবল বিদ্যুৎ সংযোগের অপেক্ষা। ওজোপাডিকো থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পরই মেশিনারিজের টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, ১ জুলাই থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে প্রকল্প হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই সাইলো নির্মিত হওয়ার ফলে খুলনা অঞ্চলে খাদ্য সংরক্ষণে বড় সুবিধা তৈরি হবে, বিশেষ করে দুর্যোগকালীন সময়ে নদীপথে দ্রুত খাদ্য সরবরাহ সহজ হবে।”

কোন হাতের স্পর্শ ছাড়া সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর মেশিন দ্বারা স্টিল সাইলোর ৬ টি ঢোল, চুল্লি বা বিনে গম সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতিটি ঢোল, চুল্লি বা বিনের ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার ৭০০ টন।প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে খাদ্যশস্যের গুণগতমান বজায় রেখে তিন বছর পর্যন্ত গম সংরক্ষণ করা যাবে এবং খাদ্যশস্য নষ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

এ ব্যাপারে খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমদানিকৃত গমের ৬০ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরে, বাকি ৪০ শতাংশ মোংলা পোর্টে খালাস হয়। মোংলা পোর্টে স্লো খালাসের কারণে কস্টিং বেশি পড়ে যায়। এটি চালু থাকলে লাইটার জাহাজ, এসডি, সিএসডি কস্টিং কম্র যাবে। স্টিল সাইলোতে সংরক্ষণ করা গম তিন বছর পর্যন্ত গুণগতমান বজায় থাকবে। খুলনা বিভাগের দশটি জেলাসহ উত্তরবঙ্গে এবং নদীপথে বরিশাল বিভাগেও গম সরবরাহ করতে সক্ষম হব’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *