
|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||
খুলনায় মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। সিটি করপোরেশনের কাছে নেই পর্যাপ্ত ফগার মেশিন, কার্যকর ওষুধ ও জনবল। বর্তমানে যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কর্মকর্তারা। ফলে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হলেও মশা নিধনে কোনো কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে করপোরেশনের দায়িত্বশীল সূত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মশা নিধনের জন্য ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বাজেট থাকলেও কাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কর্মকর্তাদের মতে, মশা নিধনের জন্য এই অর্থ যথেষ্ট নয়।
গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে খুলনা শহরকে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রভাব না থাকলেও মশার উপদ্রবের কারণে নগরবাসী আবারও আতঙ্কে ভুগছেন। শহরের টুটপাড়া, মরিয়মপাড়া, দারোগাপাড়া, সোনাডাঙ্গা ও নিরালা আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা জানান, দিনের বেলাতেও মশার কয়েল জ্বালিয়ে ঘরে থাকতে হচ্ছে। ছোট শিশুদের রাখতে হচ্ছে মশারি টানিয়ে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান বলেন,
“শহরের ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না হওয়ায় জ্যাম হয়ে আছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে জনবল সংকট রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ফগার মেশিন আছে, পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ দলের কাছে আরও ২৫টি মেশিন আছে। যখন যেখানে সমস্যা দেখা দেয়, সেখানে ভ্রাম্যমাণ দল পাঠানো হয়। তবে ড্রেনগুলো ঢেকে দেওয়ায় সর্বত্র ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
শনিবার (৩০ আগস্ট) সিটি করপোরেশনের যানবাহন গ্যারেজে মশক নিধনের ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান দিনা এন্টারপ্রাইজ সরবরাহকৃত সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি ব্যবহার করা হয়। উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনূর জাহান, ভেটেরিনারি সার্জন ড. পেরু গোপাল বিশ্বাস, কনজারভেন্সি অফিসার মো. ওয়াহিদুজ্জামান খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
পরীক্ষায় দেখা যায়, ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছিটানোর ২০ মিনিট পরও একটি মশাও মারা যায়নি।
দিনা এন্টারপ্রাইজের প্রধান নির্বাহী সরফুদ্দিন টিপু দাবি করেন,
“আইসিডিডিআরবি পরীক্ষাগারে বদ্ধ ঘরে এই ওষুধ প্রয়োগ করলে ২০ মিনিটে ৯০ শতাংশ এবং ২৪ ঘণ্টায় শতভাগ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।”
তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন—খোলা জায়গায় ব্যবহারের জন্য ওষুধের ক্ষেত্রে বদ্ধ ঘরের পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে প্রযোজ্য? জবাবে তিনি বলেন,
“এখানে ৫ লিটার ডিজেলের সঙ্গে ৩৫০ মিলি ওষুধ মেশানো হয়েছে। যদি দ্বিগুণ বা তিনগুণ মেশানো হয়, তাহলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে।”
পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে আগামী তিন দিনের মধ্যে নতুন ওষুধ দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
