বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৬

খুলনায় তীব্র লোডশেডিং: রামপাল কেন্দ্র বন্ধ, আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চল

|| শেখ শাহরিয়ার || জেলা প্রতিনিধি (খুলনা)।।

অন্ধকারের নিচে আলো-

খুলনায় দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে বিদ্যুৎ সংকট। প্রতিদিনই ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী ও শিল্প এলাকা। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে খালিশপুর, দৌলতপুর, সোনাডাঙ্গা,বৃহত্তর টুটপাড়া, রূপসা এলাকা সহ সারা খুলনায়—যেখানে দিন-রাত নির্বিশেষে বারবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আবহাওয়ার ভ্যাপসা গরম তার সাথে সারাদিন রাতে ৬ থেকে ৭ বার লোডশেডিং, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে, শিশু বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই লোডশেডিং জন-জীবনকে অসহনীয় ও বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

রামপালে কয়লার ঘাটতি, বন্ধ একটি ইউনিট-
সম্প্রতি রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে কয়লা আমদানি ব্যাহত ও জ্বালানি স্বল্পতার কারণে। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বৃদ্ধি ও আমদানির জটিলতায় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। কয়লার একটি চালান এখন রামপালে এসে পৌঁছেছে এবং কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বন্ধ ইউনিট পুনরায় চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

রামপাল কেন্দ্রের দুই ইউনিটের একটি বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। কেন্দ্র সচল রাখতে দৈনিক প্রায় ১২-১৪ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হলেও, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তা পাওয়া যাচ্ছিল না।

আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহও কম-
এদিকে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোদ্দা জেলার আদানি পাওয়ার লিমিটেড প্লান্টের একটি ইউনিটও বন্ধ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশে সরবরাহ কমে গেছে প্রায় ২০০ মেগাওয়াট। অন্য ইউনিটটি সচল থাকলেও পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কাছে পূর্বের সর্বোকৃত বিদ্যুতের বকেয়া পাওনা আছে।যা পরিশোধ করতে না পারায় আদানি পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

খুলনা ও আশপাশের ২১ জেলার মোট চাহিদা ছিল ৬৩৩ মেগাওয়াট, কিন্তু গতকাল রাত ৮টার হিসাব অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ৫৭৭ মেগাওয়াট, অর্থাৎ ঘাটতি ছিল প্রায় ৫৬ মেগাওয়াট।

খুলনায় লোডশেডিংয়ে জনজীবন স্থবির-
খুলনা পিডিবি ও ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে খুলনা অঞ্চলের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৬৫০ মেগাওয়াট হলেও সরবরাহ মিলছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪২০ মেগাওয়াট। অনিয়মিত বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ায় নগরবাসী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেশিন বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। হাসপাতাল, দোকান ও রেস্তোরাঁয় জেনারেটরের ডিজেল খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

কালীপূজার আলোকসজ্জায় চাহিদা দ্বিগুণ-
এরই মধ্যে আসন্ন কালীপূজা উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা শুরু হয়েছে, যা বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে।

ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, “রামপালে কয়লার স্বল্পতা ও আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় খুলনা অঞ্চলে তীব্র ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কালীপূজার আলোকসজ্জা, উৎসব ও রাতের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।”

সম্ভাবনা ও আশাবাদ-
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবীর আব্বাসী জানিয়েছেন,“রামপালের দুটি ইউনিটের একটি বন্ধ ছিল। এখন কয়লা এসেছে, দ্রুত চালু করার প্রক্রিয়া চলছে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক হলে কয়েক দিনের মধ্যেই রামপালের উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে। তবে আদানি ইউনিট সচল না হওয়া পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতি পুরোপুরি কাটবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *