
|| খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ||
খাগড়াছড়ি ও গুইমারা এলাকায় সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি ও অস্থিতিশীলতা ছড়ানোর পেছনে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো জড়িত।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুন হত্যাকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। সেই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে তারা আবারও প্রতিবাদ মিছিল, অবরোধ ও সহিংসতার চেষ্টা চালায়।
২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ। এরপরও ইউপিডিএফ-এর অঙ্গসংগঠন পিসিপি নেতা উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও হরতালের ডাক দেওয়া হয়। অনলাইনে প্রবাসী ব্লগার ও কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির উস্কানিমূলক প্রচারণায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
২৬ সেপ্টেম্বর অবরোধ চলাকালে ইউপিডিএফ কর্মীদের প্ররোচনায় উশৃঙ্খল জনতা সেনা টহল দলের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে তিন সেনাসদস্য আহত হন। তবে সেনাবাহিনী ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।
২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলো গুলি, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা ও রাস্তা অবরোধ করে পরিস্থিতি অবনতির দিকে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সারারাত কাজ করে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়া প্রতিহত করে।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ কর্মীরা অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে উস্কে দেয়। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে গেলে তারা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে তিন কর্মকর্তাসহ ১০ সেনাসদস্য আহত হন। একই সঙ্গে বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
অপরদিকে, পাশের পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দল অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে প্রায় ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে পাহাড়ি-বাঙালি ও সেনাসদস্যদের মধ্যে অনেকে আহত হন। পরে সেনাবাহিনীর ধাওয়া খেয়ে সন্ত্রাসীরা এলাকা ত্যাগ করে। এসময় বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা রামসু বাজারে অগ্নিসংযোগ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় জড়ায়। অতিরিক্ত সেনাদল মোতায়েনের পর বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সেনাবাহিনী দাবি করে, ইউপিডিএফ নারীদের ও স্কুল শিক্ষার্থীদের নাশকতায় ব্যবহার করছে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দাঙ্গা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে কাপ্তাইয়ে বিজিবি চেকপোস্টে যাত্রীবাহী বাস থেকে বিপুল দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র স্পষ্ট। সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সকল রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ জনগণকে সংযত থাকার আহ্বান জানায় এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করে।
সেনাবাহিনী দৃঢ়ভাবে জানায়, সব অপপ্রচার ও উস্কানির বিরুদ্ধে তারা দেশের অখণ্ডতা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।