প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রামিং ক্লাব ‘কোড উইজার্ড’ নামে সম্প্রতি একটি আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং কম্পিটিশনের আয়োজন করেছে। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি অফিস অব দা স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ারস এন্ড ক্যারিয়ার সার্ভিস এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই কম্পিটিশন আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য ছিল কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও ইইই (EEE) ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে তুখোর ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বের করে আনা। উক্ত কম্পিটিশনে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইইই (EEE) ডিপার্টমেন্টের ২০ টি টিম অংশগ্রহণ করে। এই কম্পিটিশনের মধ্য দিয়ে মূলত কোডিং এ আগ্রহী প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষতার প্রতিফলন ঘটে।
‘কোড উইজার্ড’ কম্পিটিশনটি আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং কম্পিটিশন ‘কোড উইজার্ড’ আয়োজনের লক্ষ্য কেবল একটি কম্পিটিশন আয়োজনই নয়। এই কম্পিটিশন আয়োজনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উদ্ভাবনী দক্ষতা, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমস্যার সমাধানের সংস্কৃতি বিকশিত করা। এই কম্পিটিশন অংশগ্রহণকারীদের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে যেখানে তারা তাদের প্রোগ্রামিং স্কিল, লজিক্যাল রিজনিং এবং অ্যালগরিদম ভিত্তিক চিন্তার দক্ষতা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সুযোগ পেয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় প্রবলেমগুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে তাদের দক্ষতা এবং প্রবলেম সল্ভিং ক্যাপাসিটি যাচাই করা যায়।
‘কোড উইজার্ড’ এর মত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজনে গুরুত্ব :
বর্তমানে সতত পরিবর্তনশীল টেক দুনিয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রযুক্তিবিদ্যায় দক্ষ জনশক্তি রূপে গড়ে তুলতে হলে ‘কোড উইজার্ড’ এর মত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা দরকার। আমাদের দেশে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্য থেকে প্রযুক্তি নেতৃত্ব তৈরিতে এ ধরনের প্রতিযোগিতা ব্রিডিং গ্রাউন্ড হিসেবে কাজ করে। কারণ এই ধরনের প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণকারীদের কম্পিউটার সায়েন্স এর মত ডায়নমিক ফিল্ডে প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিম্নে আলোচিত হলো –
১. দক্ষতা বৃদ্ধিতে : ‘কোড উইজার্ড’ এর মত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণকারীদের কোডিং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কারণ এই ধরনের প্রতিযোগিতায় এমন ধরনের সমস্যা অংশগ্রহণকারীদের সমাধান করতে দেয়া হয় যেগুলো সমাধান করতে হলে সততা পরিবর্তনশীল কম্পিউটার জগতের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়।
২. ক্রিটিকাল থিংকিং : ‘কোড উইজার্ড’ প্রোগ্রামিং কন্টেস্টে সমস্যাগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন অংশগ্রহণকারীরা সমস্যাগুলোকে ক্রিটিকালি ভাবতে বাধ্য হয় এবং একটি ভালো সমাধান বের করতে পারে। ফলশ্রুতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রবলেম সলভিং মাইন্ডসেট ডেভেলপ করে।
৩. আন্তঃ টিম সহযোগিতা : এই ধরনের প্রতিযোগিতা যেহেতু একক প্রতিযোগিতা নয় বরং প্রতিযোগীকে একটি টিমের ভেতর কাজ করতে হয়, তাই প্রতিযোগীদের ভেতর পারস্পরিক সহযোগিতা, যোগাযোগ এবং পারস্পরিক শক্তিকে কাজে লাগানোর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ কোন একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজে টিমভিত্তিক কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৪. ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান : ‘কোড উইজার্ড’ আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় হাইপোথেটিক্যাল সমস্যার পরিবর্তে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত সমস্যা উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে এইসব অংশগ্রহণকারীরা তাদের ক্যারিয়ের যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে সেইসব সমস্যা সমাধানে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫. নেটওয়ার্কিং এর সুযোগ: ‘কোড উইজার্ড’ এর মত প্রোগ্রাম ছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যে গভীর ইন্টারেকশনের সুযোগ তৈরি করে। ফলশ্রুতিতে ছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যে একটা কমিউনিটি সেন্স ডেভেলপ করে যা ইউনিভার্সিটির অভ্যন্তরে একটি প্রোগ্রামিং ইকোসিস্টেম তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষক মন্ডলীর অংশগ্রহণ :
এই ধরনের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজনে শিক্ষকমন্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, অংশগ্রহণ এবং সমন্বয় ছাড়া এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন প্রায় অসম্ভব। আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘কোড উইজার্ডে’ প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের সম্মানিত শিক্ষকগণ জাজ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অংশগ্রহণকারীরা প্রতিযোগিতায় যেসব সমাধান উপস্থাপন করেছিল, সম্মানিত শিক্ষকগণ তাদের মেধা, প্রজ্ঞা এবং দক্ষতার মাধ্যমে এগুলোর মূল্যায়ন করেছেন। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় শিক্ষকমন্ডলীর অংশগ্রহণ কেবল প্রোগ্রামটিকে গ্রহণযোগ্যতাই দেয়নি, পাশাপাশি তাদের ফিডব্যাক এবং বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং স্কিলকে দক্ষ এবং উন্নত করেছে।
‘কোড উইজার্ড’ কম্পিটিশন আয়োজনে কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের লেকচারার এবং প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রামিং ক্লাবের সম্মানিত মডারেটর মিস সামিরা আক্তারের ভূমিকা অনবদ্য। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টা, সহযোগিতা এবং প্রজ্ঞাপুর্ণ নির্দেশনার কারণে ‘কোড উইজার্ড’ প্রোগ্রামটি এমন এক অনন্য উচ্চতায় আরোহণ করেছে যে সব ধরনের অংশগ্রহণকারী এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
উপসংহার :
আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘কোড উইজার্ড’ মূলত প্রোগ্রামিং এ উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীদের সামগ্রিক বিকাশে সহযোগিতা করার জন্য প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির যে প্রত্যয় তারই বহিঃপ্রকাশ। অংশগ্রহণকারীদের সামনে সমস্যা উপস্থাপন, টিম ওয়ার্কে উৎসাহ প্রদান এবং ইন্ডাস্ট্রি রিলিভেন্ট সমস্যা প্রদান করার মাধ্যমে ‘কোড উইজার্ড’ প্রতিযোগিতাটি তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। পরিশেষে বলা যায়, যেহেতু প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আমাদের বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে, তাই কোড উইজার্ডের মত প্রোগ্রামিং কনটেস্ট আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কিল ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখার প্রয়োজনীয়তা কখনো শেষ হবে না।