
|| জাকারিয়া শেখ | ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা ঘটেছে। ফুলশয্যার রাতেই স্বামী খালেকুজ্জামান ডিউট (৪৫)-এর মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন নববধূ লাভনী আক্তার (২০)। জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় রাত যে এমন বেদনার স্মৃতি হয়ে থাকবে, তা হয়তো কোনোদিন ভাবেননি লাভনী।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কবিরমামুদ গ্রামের শাহ জামালের মেয়ে লাভনী আক্তারের সঙ্গে শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের আছিয়ার বাজার এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে, শিমুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেকুজ্জামান ডিউটের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের দিন দুই পরিবারে ছিল উৎসবের আমেজ, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশিদের মধ্যে চলছিল আনন্দ-উৎসব ও আপ্যায়ন।
রাত ১২টার দিকে বর ডিউট আত্মীয়দের সঙ্গে কথা শেষ করে নববধূর কক্ষে প্রবেশ করেন এবং এক গ্লাস পানি চান। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি মেঝেতে পড়ে যান। নববধূর চিৎকারে বাড়ির লোকজন ছুটে এসে চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাননি। পরে স্থানীয় ডাক্তার ও অভিজ্ঞরা নিশ্চিত করেন, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
শুক্রবার বিকেলে মেহেদী রাঙানো হাত, লাল শাড়ি ও অশ্রুসজল নয়নে শেষবারের মতো স্বামীকে বিদায় জানান লাভনী আক্তার। সেই দৃশ্য উপস্থিত সবার চোখে জল এনে দেয়।
নববধূর চাচা, সাবেক ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, “খালেকুজ্জামান ডিউট প্রায় ১৮ বছর আগে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রী জান্নাতি আক্তার মুক্তার ঘরে এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বিচ্ছেদের পর এবার আমার ভাতিজির সঙ্গে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। কে জানতো বিয়ের রাতেই এমন ঘটনা ঘটবে! অল্প বয়সেই আমার ভাতিজি বিধবা হলো, এটি খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ঘটনা।”
শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম মিয়া শোহেল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “নিয়তির ওপরে তো কারো হাত নেই। তবে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা খুব কমই দেখা যায়। বিয়ের রাতেই স্ত্রী বিধবা—এটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক।”
শুক্রবার বিকেল ৩টায় পারিবারিক কবরস্থানে খালেকুজ্জামান ডিউটের দাফন সম্পন্ন হয়।