
|| মোঃ আজিজুল হক | ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||
কুড়িগ্রামের কচাকাটা থানার টুংকার চর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় একটি বালুখেকো চক্র অবৈধভাবে সংকোশ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। ডিজেলচালিত স্যালো/ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে নদীর তলদেশ কেটে বালু তুলে বিক্রি করছিল তারা। অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়া ছাড়াও আশপাশের জনপদ, রাস্তা-ঘাট, কৃষিজমি ও সরকারি সম্পত্তি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকি ছিল চরমে।
গোপন সংবাদে বিষয়টি জানার পর ভুরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুনতাসির মামুন মুনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কচাকাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ লুৎফর রহমান, এসআই মিন্টু মিয়া ও পুলিশের বিশেষ টহল টিম। ১৯ নভেম্বর ২০২৫ বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
পুলিশ জানায়, তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বালু উত্তোলনে জড়িতরা দ্রুত নৌকা যোগে স্যালো ও ড্রেজার মেশিন নিয়ে নদীর দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যায়। পলাতক আসামিরা হলো বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের গোডাউন পাড়া গ্রামের শাহজাহান আলীর পুত্র স্বপন মিয়া(৪৩), একই ইউনিয়নের খাসমহল গ্রামের শাহিনুর রহমানের পুত্র আল আমিন(৩০)। পুলিশের উপস্থিতি টেরপেয়ে পালিয়ে গেলেও, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ৭৭ ফুট প্লাস্টিকের পাইপ, ৯ ফুট লম্বা হুস পাইপ,২টি তেলের জারিকেন, ২টি স্যালো মেশিনের লোহার হ্যান্ডেল, সব মিলিয়ে উদ্ধারকৃত সরঞ্জামের আনুমানিক মূল্য ১২ হাজার ৭০০ টাকা।
পুলিশ জানায়, পলাতক আসামিরা কোনো অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ডিজেলচালিত ড্রেজার ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করছিল, যা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে সংকোশ নদীর পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট, কৃষিজমি ও বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে বালুখেকো চক্র রাতের অন্ধকারে দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল।
এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুনতাসির মামুন মুন বলেন, “অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন নদী ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে পুলিশি অভিযান চলমান থাকবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশের এ অভিযান স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়েছে। এলাকাবাসী আশা করছেন, কঠোর নজরদারি থাকলে অবৈধ ড্রেজারচক্র আর নদী ও জনপদের ক্ষতি করতে পারবে না।
