বুধবার, অক্টোবর ২৯

একাধিক বিস্ফোরক মামলার আসামী বক্কর এখনো অধরা

|| লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ||

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ছাত্র জনতার উপর হামলায় দায়ের করা মামলার আসামী অধিকাংশ আটক হলেও অদৃশ্য কারণে গ্রেপ্তার হচ্ছে না আবু বক্কর ছিদ্দিক নামক এক জনপ্রতিনিধি।

অভিযুক্ত আবু বক্কর ছিদ্দিক বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মুন্সি পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ গনির পুত্র ও একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

সে লোহাগাড়া থানায় ছাত্র জনতার উপর হামলা, ভাংচুর ও বিস্ফোরক আইনে ২ টি মামলার এজাহার নামীয় আসামী।

এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মারামারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে, অভিযোগ রয়েছে সে তৎকালীন লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রয়াত জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য হওয়ার সুবাদে স্থানীয় ইউপি সদস্য পদটি ভাগিয়ে নেন।

অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার কাছে আসা বিচার প্রার্থীদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্হানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, কাদের মঞ্জিল সড়কের নামে ২ লক্ষ টাকার প্রকল্প আসে, সেখানে অর্ধেক কাজ করে বাকী কাজ বন্ধ করে টাকা আত্মসাৎ করে খেয়ে ফেলে, কেউ প্রতিবাদ করলে ফ্যাসিস্ট সরকারের দালালীর ক্ষমতাবলে মামলার হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখত।

একই এলাকার হিন্দু পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য বাবু মিহির সরকার অভিযোগ করে বলেন, অনেক দেনদরবার করে আমাদের হরি মন্দিরের উন্নয়নের জন্য ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাই, সেখান থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকার মত কাজ করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, তাকে বললে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে।

একই এলাকার রাশেদুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী জানান, রমজান মাসে আমার চাচার সাথে জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে সামান্য ঝামেলা হয়, আমার সাথে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বক্করের সাথে নির্বাচনী সমর্থন নিয়ে শত্রুতা ছিল, এটার রেষ ধরে প্রতিশোধ প্রবণ হয়ে আমার চাচার পক্ষ নিয়ে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে এবং আমার ভাইকে বিচার মিমাংসার নাম করে অফিসে ডেকে নিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়।

এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারিসহ অসংখ্য অভিযোগ।

হোসেন নগর এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী মো: সোলাইমান জানান, আমাদের পাড়ার শুরুতে আব্দুস সালামের ছেড়া বাড়িতে প্রতিদিন সময়ে অসময়ে আসা যাওয়া করত, অনেক সময় গভীর রাতে তাঁকে সেখানে প্রবাসী আবু সাঈদের বউয়ের সাথে একাকী গল্প করতে দেখা যায়, আমাদের সন্দেহ হলে তাঁকে নজরদারিতে রাখি, একসময় গভীর রাতে প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে অসামাজিক কার্যকলাপ করাকালে হাতেনাতে ধরে ফেলি এবং কিছু ছবি তুলি, সেই ছবি তোলা ও অসামাজিক কাজে বাধা দেওয়ায় আমাদের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে কয়েক দফায় হামলা করে। পরে তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে জোর পূর্বক মুচলেকা নিয়ে আমার কাছ থেকে ৬০হাজার টাকা আদায়ও করে নেয় সে। টাকা আদায় করেও ক্ষান্ত হয়নি, পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে দুইবার নিজেই পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়, সেই প্রবাসীর বউয়ের সাথে এখনো পরকীয়া অব্যাহত আছে, সম্প্রতি সেই নারীর স্বামী বিদেশ থেকে আসলে স্বামীর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং বর্তমানে সেই নারী স্বামীর যাবতীয় টাকা পয়সা সবকিছু নিয়ে অভিযুক্ত বক্করের সহযোগিতায় একটি বাসা ভাড়ায় থাকছে, যেখানে বক্করের নিয়মিত যোগাযোগসহ অনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রযেছে বলেও জানান তিনি।

নারী কেলেঙ্কারি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি বরাদ্দের আত্মসাৎয়ের আরও অনেক অভিযোগ।

সেনের হাট বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আবু বক্কর ছিদ্দিক ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া, সে হাজি পাড়ার একজন শাহ আলম নামের একজন ভদ্র রিক্সা চালকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধরও করেন। তিনি আরও জানান, জেলা পরিষদ হতে সেনের হাট বাজারে সিসি ক্যামেরা স্থাপনার জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়, সেখান থেকে মাত্র ৬ টি ক্যামেরা স্থাপন করে ৬০ হাজার টাকা মত খরচ করে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে উদ্যত হয়ে গালিগালাজ করে বলেন, কাজ আমি এনেছি, আমি খাচ্ছি এতে তোমাদের কাজ কি?

তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি সেনের হাট বাজারের মসজিদটিও, সেখানেও নগদ ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী এনে মসজিদ দখল করে সেটিকে ভেঙে মার্কেট নির্মাণ করেন। এত সব জঘন্য অভিযোগের পরেও সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রশাসনের সাথে ছবি তুলতে দেখা গেছে, এটা নিয়ে এলাকায় দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

অভিযোগ রয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। যার বেশ কয়েকটি ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবু বক্করের নিকট জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা বলে সাফ জানিয়ে দেন।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, আমরা নিয়মিত আসামী গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।

সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে এবং পুলিশ বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *