সোমবার, জুলাই ২১

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সচল রাখতে কর্তৃপক্ষের করণীয়: কিছু প্রস্তাবনা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস খুব সুখকর নয়। প্রতিষ্ঠার পরও গত ৪৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি আপন সত্ত্বায় ফিরতে পারেনি। বর্তমানে এটি একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামান্তর মাত্র।

প্রস্তাবনা সিদ্ধান্ত ছাড়াই যেখানে এদেশে পাঁচ দশটি বিশ্ববিদ্যালয় একনেকের একটি বৈঠকে পাস হয়। আর সেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে হয় এদেশের মানুষকে সুদীর্ঘ ৫৬ টি বছর।

১৯১৫ সালে জয়পুরহাটে এক ইসলামী মহা সম্মেলনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য মাওলানা আকরাম খাঁ ও মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীসহ একটি কমিটি গঠিত হয়। আর এর বাস্তবায়ন হয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে। ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়ার শান্তিরডাঙ্গা দুলালপুরে পৌনে দু’শ একর ভূমির উপরে বর্তমান অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়।

স্বভাবতই বিশ্ববিদ্যালয় নতুন হওয়ায় এর শীর্ষ তিন ব্যক্তি ভিসি, প্রভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগপ্রাপ্ত হন বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

দুই এক জনকে বাদ দিলে তাদের অনেককেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করতে দেখা যায়নি।
তারা ধর্মের ধার শোধ করতে আসেন। তারা শুধু চাকুরি করেন। নিজের পদ পদবি ধরে রাখতে দলের আনুগত্য প্রকাশ করতে মাসে সপ্তাহে এক দু দিনের কাজের অছিলায় দু চার দশ দিন করে ঢাকায় অবস্থান করেন।
একজন ভিসির আমলে আমি ডিন থাকাকালীন দু বছরে ৮৪ দিন ভিসির দায়িত্বে থাকতে হয় আমাদের ডিন পরিষদকে। অর্থাৎ এই ৮৪ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তি- ভিসি, প্রোভিসি ট্রেজারার এ তিনজনের কেউই ক্যাম্পাসে ছিলেন না।

ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে না আসতেই সপ্তাহের দুদিন ছুটি নিকটে আসে। আবারো তাদের কেউ কেউ অথবা সবাই দৌড় দেন ঢাকায় অথবা তাদের নিজ নিজ স্থানীয় বাসভবনের দিকে। এভাবেই তাদের এক দুই তিন চার বছর শেষে তাদের পদের মেয়াদ পূর্ণ হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্যের আর পরিবর্তন হয় না।

তারাই বা কি করবেন? তারা নিজেদের চেয়ার ঠিক রাখবেন না আখের গোছাবেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করবেন। তাই উপরের দুটি ঠিকই হয় কিন্তু নিচেরটা আর হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউন্ডারি হওয়ার আগে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। এবং সেটাও আমার বিভাগে। আমার বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্র (ফাস্ট বয়) নিহত হয় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়টি অরক্ষিত থাকার কারণে। আমি তখন একেবারে নিচের দিকের শিক্ষক।

একটি মিটিংয়ে ভিসি মহোদয়কে লক্ষ্য করে বলেছিলাম “আমার এই ছাত্রের রক্তের মূল্য আপনার কাছে বাউন্ডারির খরচের চাইতে বেশি না কম? তিনি কোন উত্তর করতে পারেননি। তবে এরপর বাউন্ডারির কাজ পরিপূর্ণ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পুকুরটি কেন খনন করা হয় জানি না। তবে পুকুর চুরির জন্যই পুকুরটি খনন করা হয় মর্মে কিছু কথা প্রচলিত আছে।

সে যা হোক। পুকুরে পড়ে নিহত হয় এর আগে আরো কয়েকজন ছাত্র। আমার বিভাগের সাজিদকে সে পুকুরেই ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। সে পুকুরে পড়ে মারা যাক অথবা কোন দুষ্কৃতীর হাতেই নিহত হোক না কেন বিষয়টি পুকুরের পাড়েই পুকুরকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে।

অতএব এ পুকুরটি ভরাটসহ নিম্নের কাজগুলো অতি দ্রুত নিষ্পন্ন করা প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

১. প্রশাসনিক বিল্ডিং প্রতিটি হল প্রতিটি অনুষদ ভবন এবং গেটে এক সপ্তাহের মধ্যেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা।

২. প্রতিটি ভবনে অন্তত দুজন করে আনসার ২৪ ঘন্টা ডিউটির জন্য নিয়োগ করা।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউন্ডারি আরো উঁচু করে তার ওপরে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরাও করা।

৪. মেডিকেলে একজন করে ডাক্তার কাম সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া। (যাতে আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া যায়)

৫. হলের প্রভোস্ট এবং হাউস টিউটরদের দ্রুত আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ।

৬. প্রাক্টোরিয়াল বডির সকলকে ২৪ ঘন্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান বাধ্যতামূলক করন।

৭. প্রতিটি অনুষদ ভবনে একজন করে সহকারী ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ প্রদান করা। (যারা সব সময় তার কাছে উপদেশ গ্রহণ করতে পারবেন)

৮. আন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড খেলাধুলা বিতর্ক প্রতিযোগিতা বিভিন্ন ক্লাব লেখক ফোরাম করে শিক্ষার্থীদেরকে সেগুলোর সাথে যুক্ত করন।

৯. মিটিং মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় অচল অবস্থা হতে পারে এমন পরিস্থিতি উদ্ভূত হওয়ার আগেই প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।

১০. শিক্ষার্থীদের মোটিভেশনের জন্য প্রতি অনুষদের সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি করে মোটিভেশন সভা করা।

১১. প্রতিটি বিভাগের সেশনজট দূরীকরণে ক্লাস নিশ্চিত করা।

১২. প্রতিমাসের শেষ সপ্তাহে বিকেলে টিউটোরিয়াল ইনকোর্স পরীক্ষাগুলো প্রতিদিন দুটি করে অনুষ্ঠান করা। (এতে প্রতি সেমিস্টারে পাঁচটি কোর্সের টিউটোরিয়াল ইনকোর্স এর জন্য পাঁচ সপ্তাহ শিক্ষার্থীদেরকে ব্যস্ত রাখা যাবে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাশমুখী হবে তাদের হাজিরা বৃদ্ধি পাবে।)

১৩. শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদেরকে আত্মসচেতন করে তুলতে পারে, এজন্যে প্রতিটি শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে সাক্ষাৎ বাধ্যতামূলক করন।

বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সৌভাগ্য যে, এবার শীর্ষ তিন পদধারীর তিনজনই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আশা করে তারা আগের শীর্ষস্থানীয়দের মতো ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন। শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা দূরীকরণে আন্তরিক হবেন। এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়কে মৌলিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তার মৌলিক ধারায় ফিরিয়ে আনবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *