মঙ্গলবার, জুলাই ১

ইসলামিক স্কলারদের চোখে মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন কি?

|| জলিলুর রহমান | ঢাবি প্রতিনিধি ||

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করা মুসলমানদের জন্য হারাম ঘোষণা দিয়ে গেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রাক্তন মহাসচিব ও দারুল উলুম হাটহাজারীর প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী (মরহুম)।

ইতোপূর্বে সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, পহেলা বৈশাখের দিন বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নামে বিভিন্ন জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করা মুসলমনাদের ঈমান-আক্বীদা বিরোধী একটি অনৈসলামিক ও বিজাতীয় সংস্কৃতি।

তিনি বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে নারী পুরুষের মুখে উল্কি আঁকা, বড়বড় পুতুল, হুতোম পেঁচা, হাতি, কুমির সাপ, বিচ্ছু ও ঘোড়াসহ বিভিন্ন জীব-জন্তুর মুখোশ পড়া, প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ একসঙ্গে অশালীন পোশাক পরে অশ্লীল ভঙ্গিতে ঢোল বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করে র‌্যালি করার হিন্দুয়ানী যে রীতি রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমানদের ওপর জোর করে চালু করা হচ্ছে, তা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।

প্রখ্যাত এই ইসলামী চিন্তাবিদ ও হাদীস বিশারদ আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করার নির্দেশদাতাদের নিকট প্রশ্ন রেখে বলেন, পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের শোভাযাত্রায় কার কাছে মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হচ্ছে? জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তি কী মানুষের কোন কল্যাণ করতে পারে? তিনি বলেন, মুসলমানদের ইসলামী বিধিবিধান মানতে হবে। ইসলামী শরীয়ত মতে কোন জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তির কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে ঈমান থাকবে না।

মুসলমানদের আকীদা হলো ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সবকিছুই মহান আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। মুসলমানদেরকে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর নিকট। আমরা সবসময় সুরায়ে ফাতেহায় আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করি “ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন” হে আল্লাহ, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। সুতরাং যেসব মুসলমান আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করে, তাদের জন্য বিজাতীয় মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই।

হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণসহ সকল অনৈসলামিক ও বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকার জন্যে মুসলিম জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্কুল কলেজের মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে ঈমান আকীদা বিরোধী সংস্কৃতি পালনে রাষ্ট্র কখনো বাধ্য করতে পারে না। এটা সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা বিরোধী। কারণ, বাংলাদেশের সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বিদ্যমান আছে।

এ অবস্থায় কেউ ক্ষমতার জোরে সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশের জনগণের ওপর ভিন্ন ধর্মের অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে পারে না। ভিন্ন ধর্মের রীতিনীতি দেশের শতকরা ৯২ জন মুসলমানের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালালে তার পরিণতি শুভ হবে না। তিনি বলেন, আমরা দেশীয় রীতি ও সংস্কৃতি বিরোধী নই। তবে বাঙ্গালী সংস্কৃতির নামে মুসলমানদের ঈমান হরণ করার কোন হিন্দুয়ানী আয়োজন হলে নিরব বসে থাকতে পারি না। ইসলামী তাহজীব-তামাদ্দুন, সভ্যতা-সংস্কৃতি ধ্বংস করে বিজাতীয় কালচার মুসলমানরা মেনে নিতে পারে না।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী আরো বলেন, হিন্দু সমাজে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিনে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী পেঁচা, রামের বাহন হিসেবে হনুমান, দুর্গার বাহন হিসেবে সিংহের মুখোশ ও দেবতার প্রতীক হিসেবে সূর্য এবং অন্যান্য জীব-জন্তুর মুখোশ পরে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে থাকে। নারী-পুরুষ মুখে উল্কি আঁকা, জীবজন্তুর মুখোশ পরা, নারীরা লাল-সাদা শাড়ি পরা, কপালে শাখা-সিঁদুর লাগিয়ে সম্মিলিত উলুধ্বনি দেয়া সবই হিন্দু ধর্মীয় রীতি। আমরা হলাম ইসলাম ধর্মের অনুসারী, সুতরাং মুসলমানদের জন্যে এসব পালনের কোনই সুযোগ নেই।

বিবৃতিতে হেফাজত মহাসচিব আরো বলেন, যারা পান্তা-ইলিশে খেয়ে একদিনে বাঙ্গলী হয় গ্রাম-বাংলার খেটে খাওয়া কৃষক, মজদুর, নিরন্ন, দরিদ্র, অসহায় মানুষের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। জাতীয় সংস্কৃতিতে কখনো ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা পার্থক্য হতে পারেনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পান্তা-ইলিশ দেশের কত ভাগ মানুষ খাওয়ার সুযোগ পায়?

তিনি বলেন, আমরা গভীরভাবে লক্ষ করেছি যে, বেশ কয়েক বছর থেকে বহুবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ভিবিন্ন জায়গায় নারীদের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন-নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানীর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। যা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও চলাফেরার কুফল। এসব অনুষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তাতো নেই বরং ক্ষতির আশংকাই বেশি। সে জন্যে ইসলাম বিরোধী বিজাতীয় এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য দেশের নারী সমাজের প্রতি তিনি আহবান জানান। এবং ঈমান-আক্বীদা বিরোধী হিন্দুয়ানী এসব শিরকী অপসংস্কৃতি বন্ধ করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *