
|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||
বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ এসোসিয়েশন নীতিগতভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগের সাথে সম্পূর্ণ একমত জানিয়ে বলেছে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অপসারণ নয়, সহযোগী ভাবুন।
এসোসিয়েশনটির দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি- চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা গত ইউপি নির্বাচনে প্রায় ৭৫% এর উপর সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতিতে প্রতিযোগিতাপূর্ণ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বমোট ৪৫৮০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৬৫% চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র, বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। স্থানীয় সরকার কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আইন-শৃংখলা রক্ষা, গ্রামীন অবকাঠামো-সহ স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বিক সহায়তা করে থাকে। জন্ম, মৃত্যু, অন্ধ, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধি ও দুঃস্থদের নিবন্ধন করা, যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদ ও মৃত্যু সনদ প্রদান করা, বিধবা, এতিম, গরীব ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের মাঝে সরকারি সহায়তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ, গ্রামের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা এবং গ্রামীণ জনসাধারণের ঝগড়া-বিবাদের মীমাংসা ও মামলা-মোকদ্দমা নিস্পত্তির মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন এর নেতৃবৃন্দ বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে আসছি এবং বাংলাদেশের জনগণের বহুল কাঙ্ক্ষিত একটি দুর্নীতিমুক্ত জনকল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন এতে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ এসোসিয়েশন নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ একমত। আরও বলেন, সংস্কার কাজে তাদের জোরালো সমর্থন রয়েছে এবং এই সংস্কার কাজে চেয়ারম্যান-মেম্বারগণ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করতে চায়।
কিন্তু কিছুদিন যাবত সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ হয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিতিদের অনুপস্থিতির কারণে জনসেবা বিঘ্নিত হওয়ার অজুহাতে বর্তমান সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রান্তিক পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিকল্পহীন প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের সকল চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অপসারনের উদ্যোগ নিয়েছেন। অথচ ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার একটি রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বমোট ৪৫৮০ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩,১৬৪ জন চেয়ারম্যান উপস্থিত রয়েছেন এবং ১,৪১৬ জন চেয়ারম্যান ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী আন্দোলন বিরোধী নাশকতামূলক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততায় মামলা মোকদ্দমার আসামি হওয়া বা গ্রেপ্তার হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অনুপস্থিত অথবা পলাতক রয়েছেন যার কারণে ঐসব ইউনিয়নে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। এই কারণে বাংলাদেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের অপসারণ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগের আত্মঘাতী উদ্যোগ নিচ্ছেন। কতিপয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণের অনুপস্থিতির কারণে এ ধরনের আত্মঘাতী উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ চরমভাবে সেবা বঞ্চিত এবং হয়রানির শিকার হবেন এবং সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালনে সর্বদা উপস্থিত ৩,১৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্দোষ চেয়ারম্যানদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হবে। জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে প্রশাসক দ্বারা একটি ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি করে বলেন, মাথাব্যথার জন্য মাথা কাটা নয়, মাথা ব্যাথার জন্য সঠিক চিকিৎসা করে এই নীতির আলোকে অনুপস্থিত পলাতক চেয়ারম্যানদেরকে অপসারণ করে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ আইনের আওতায় বিধি মোতাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব অর্পণ করে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার মাধ্যমে সেবা প্রদান এবং পরিষদে উপস্থিত দায়িত্বরত চেয়ারম্যান মেম্বারদের অপসারণ না করে মেয়াদকালীন সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার হোক।