মঙ্গলবার, জুলাই ৮

আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে বান্দার ভালোবাসার বন্ধন

|| ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী ||

ফিকাহ শাস্ত্রের কথা হল, নামায, ইবাদত সঠিক নিয়মে শুদ্ধ হতে হবে। তাহলেই আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে। সূফিসাধকদের শিক্ষা হল, ইবাদত সহীহ শুদ্ধ হওয়া বা আদায় হওয়াই শেষ কথা নয়। তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কিনা দেখতে হবে। আল্লাহকে সম্মুখে হাজির নাজির জেনে ইবাদত করতে হবে। একাগ্রতা থাকতে হবে। তবেই তাকওয়ার জীবন লাভ হবে। তার জন্য নানা আনুষ্ঠানিকতা ও কসরতের মাধ্যমে মনকে তৈরি করতে হবে।

এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবচে দ্রুত ও কার্যকর একটি পথ মহব্বত। মহব্বত শব্দটির ধাতুমূল হুব্ব। অর্থ ভালোবাসা, প্রেম। সূফিসাধকদের কথা হল, আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক মনিব ও দাসের সম্পর্ক নয়। বরং হতে হবে ভালোবাসার সম্পর্ক। এ ধরনের সম্পর্কের কথা উল্লেখ আছে কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে। যেমন:
يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ
“…তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে ভালোবাসেন এবং তারাও (ঈমানদাররাও) তাঁকে ভালোবাসে।” -(সূরা মায়েদা, আয়াত-৫৪)
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ
“আর যারা ঈমানদার তারা আল্লাহকে সর্বাধিক ভালোবাসে।” –(সূরা বাকারা, আয়াত-১৬৫)

নমুনা স্বরূপ কুরআন মজীদের উল্লেখিত দুই আয়াতে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় আল্লাহর সাথে বান্দার ভালোবাসার সম্পর্কের কথা ব্যক্ত হয়েছে।

আল্লাহকে ভালোবাসার সাথে সাথে রাসূল (সা)-এর সাথেও ভালোবাসার সম্পর্ক থাকা অপরিহার্য। নচেৎ ঈমানের দাবি সঠিক হবে না। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে :
“হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ (পূর্ণ) ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ আমি (রাসূল) তার কাছে তার পিতামাতা ও সন্তান সন্তুতির চেয়ে অধিক প্রিয় না হব। মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াতে বর্ণিত : যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পরিবার পরিজন, তার ধনসম্পদ ও সকল মানুষের চাইতে অধিক ভালো না বাসব।” -(বুখারী : ১৫; মুসলিম : ৪৪)

এ সম্পর্কিত আলোচনার পরিধি অনেক দীর্ঘ। আমরা এখানে শুধু বলতে চাই, তাযকিয়া ও ইহসান অর্থে তাসাউফ সাধনা এবং সূফিতত্ত্বে আল্লাহ প্রেমের দর্শন ইসলামের মূল শিক্ষা ও দর্শন থেকেই উৎসারিত হয়েছে। একে অস্বীকার করা হলে ইসলামের সুন্দর ভবনে বসবাসের পরিবেশ থাকবে না। সূফিয়ায়ে কেরাম আমাদেরকে সেই ভবন থেকে ভালোবাসার ভুবনে নিয়ে যেতে চান। যেখান থেকে আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসার নেটওয়ার্কে সমস্ত সৃষ্টজীবের ভালোবাসায় মন উদ্বেলিত হবে। গোটা সৃষ্টিকে স্রষ্টার প্রেমে আকৃষ্ট করার প্রচন্ড তাগাদা তাড়া করবে। নিজে সেই ভালোবাসার সাগরে নিমজ্জিত অবস্থার আনন্দে বিভোর থাকবে। তখন সত্যিকারের ইবাদতের স্বাদ নসীব হবে। এই শ্রেণীর লোকেরা সওয়াবের আশায় বা আজাবের ভয়ে ইবাদত করে না। বরং আল্লাহর ভালোবাসায় জীবনের সবকিছু সমর্পণ করতে প্রস্তুত থাকে।

লেখক: সুফি গবেষক, লেখক ও সাংবাদিক এবং পরিচালক, বায়তুশ শরফ ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *