শুক্রবার, নভেম্বর ২২

আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনা : সংকট ও নিরসন ভাবনা

ভূমিকা

মানব সভ্যতার উম্মেষ থেকেই জ্ঞান চর্চা ও শিক্ষার সূচনা। আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথম নির্দেশ হয় শিক্ষার। ইরশাদ হচ্ছে, إقرأ بسم ربك الذي خلق পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (আল-কুরআন: সূরা আল আলাক: আয়াত-১) আল-কুরআনের এসব আয়াত শিক্ষার প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানায়। আর কুরআনিক শিক্ষা যেসব প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়, সেসব মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। প্রায় নব্বইভাগ মুসলিম অধ্যুষিত এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলিক ভাবেই দু’টি ধারা বিদ্যমান। ধর্মীয় শিক্ষা তথা মাদ্রাসা শিক্ষা ধারা। অন্যটি সাধারণ শিক্ষাধারা। মাদ্রাসা শিক্ষা ধারা আবার দু’টি ধারায় প্রবাহিত- আলীয়া ও কওমী বা দরসে নিযামী।

আলীয়া মাদ্রাসার সূচনা

বাংলাদেশে দু’প্রকারের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা। মাদ্রাসা (আরবি: مدرسة, বহুবচনে مدارس) আরবি শব্দ درس দারসুন থেকে উদ্ভূত যার অর্থ ‘পাঠ’। আরবী মাদ্রাসা শব্দের অর্থ পাঠশালা/স্কুল/ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রথম প্রতিষ্ঠান ছিল সাফা পর্বতের পাদদেশে যায়েদ-বিন-আরকামের বাড়িতে। যেখানে স্বয়ং মুহাম্মাদ ছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ছিলেন তার কয়েকজন অনুসারী নওমুসলিম।

مدرسة (মাদ্রাসা) শব্দটি আরবী একবচন। বহুবচনে مدارس (মাদারিস) درس (দরস) ধাতু হতে উৎকলিত। আরবী অভিধানগুলোতে দরস (درس) শব্দটির একাধিক অর্থ পরিলক্ষিত হয়। যেমন- মিটিয়ে দেয়া, কাপড় পুরাতন হওয়া। শিক্ষা দেয়া, শিক্ষাদান করা, শিক্ষা গ্রহণ করা, পড়ানো, একনিষ্ঠতার সাথে মুখস্ত করানো, মিলন হওয়া, আটা পিষা, ঋতুস্রাবী হওয়া, একে অন্যকে পাঠ দেয়া, অংশ গ্রহণ করা, কাপড় পুরাতন করা, খুশী হওয়া, পাঠ করা, বারংবার পড়া,মুখ¯ত করা। চুলকানী হওয়া, অক্ষম হওয়া, গাঢ় মোটা হওয়া, হাড্ডী মোটা হওয়া, মাথা মোটা হওয়া, সভ্যতা, উটের শরীর মোটা হওয়া, তুলনা করা, বপন করা, কাপড় ছিড়ে যাওয়া, ঠিক হওয়া, সঠিক হওয়া, সমান হওয়া, ফিরে আসা, ঘষা-মাজা করা, সঠিক কথা বলা, দৃঢ় অঙ্গীকার করা, ব্যবস্থা করা, উটকে সোজা করা, পাপাচার করা, অপছন্দনীয় হওয়া, নির্ধারিত পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করা, লোহা ঠিক করা, ইত্যাদি। অধ্যবসায়, চেষ্টা সাধনা পাঠ,পাঠন, বক্তৃতা, সবক, শিক্ষা, নসীহত, চশমা, দর্শন, দৃশ্য, সাক্ষাৎ,গোপন রা¯তা, তরবারী বর্ম, মাথার আচ্ছাদন, খাদক, নিশ্চিহ্ন রাস্তা, উটের লেজ, ব্যায়াম, বিছানা, কর্মচারী, পাগল, লেকচার,ওয়াজ, বীর পুরুষ, সিংহ ইত্যাদি।
মাদ্রাসা স্থানবাচক বিশেষ্য। অর্থ পাঠশালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষায়তন ইত্যাদি। আর ইসলামী পরিভাষায় মাদ্রাসা শব্দটি মুলিমদের ধর্মীয় পাঠশালাকে বুঝায়। অর্থাৎ মাদ্রাসা হচ্ছে আরবি ভাষা ও ইসলামি শিক্ষা বিষয়ক অধ্যয়ন পঠণ পাঠণের বিশেষ প্রতিষ্ঠান। ইরান ও ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত: শিশুকিশোরদের প্রাথমিক পর্যায়ের কুরআন শরীফ,দীনিয়াত ও আরবী শিক্ষার স্থানকে মক্তব এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কদের ইসলামী বিষয়াদি অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার স্থানকে মাদ্রাসা বলা হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ হতে অদ্যাবধি এ শিক্ষা ধারা অব্যাহত আছে।

আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষার বিকাশ

রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগ ঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম মাদ্রাসা ছিল গারে সওর। এখানেই তিনি জিব্রীল মারফত ঐশী শিক্ষা লাভ করেন। তিনি শিক্ষক হওয়ার পর ৬১৪ সালে মক্কায় সাফা পাহাড়ের পাদদেশে হযরত আরকাম রা.এর বাড়ীতে সর্বপ্রথম “দারুল আরকাম” মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। হিজরতের রাসূলুল্লাহ স. বহিরাগত মুহাজির এবং মদীনার বাস্তুহারা শিক্ষার্থীদের অবস্থানের জন্য মসজিদে নববীর উত্তর পূর্ব সংলগ্ন ‘সুফ্ফা’ নামক একটি আবাসিক মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। এর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন,হয়রত আব্দুল্লাহ ইবন সাঈদ,আল‘আছ ও ‘উবাদা বিন সামিত।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র বিশ জন। হযরত আনাস রা. এর বর্ণনা মতে সুফফা মাদরাসার ৭০ জন ছাত্র মদীনার বিভন্ন মাদ্রাসায় সকাল পর্যন্ত পড়াশুনা করত। ইবনে সাদের মতে মদীনায় ‘দারুল কুররাহ’ নামক একটি মাদ্রাসা ছিল এবং মদীনার আরো ৯টি মসজিদ শিক্ষায়তন হিসেবে ব্যবহৃত হত। ৬২২ খ্রীষ্টাব্দে মসজিদে নববী প্রস্তুত সম্পন্ন হলে নবী করিম সা.নিজেই এখানে শিক্ষাদান শুরু করেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখানে এসে ভীড় জমাতেন।
১৭৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলিকাতার কতিপয় বিশিষ্ট ইসলামী শিক্ষানুরাগীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ মাদ্রাসার শুরুর দিকে দরসে নিযামী কোর্স থাকলেও পরবর্তীকালে এটিই আলীয়া মাদ্রাসাসমূহের সূতিকাগার হয়। ফলে এ মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে এদেশে বহু আলীয়া মাদরাসা।

আলীয়া মাদ্রাসার সাথে সাধারণ শিক্ষার ব্যবধান

বৃটিশ সরকার সাধারণ শিক্ষা মাদ্রাসা শিক্ষা এ দু’ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার কারণো সমাজে দু’ ধরণের শিক্ষিত লোকের সৃষ্টি হয়। এদের এক শ্রেণী আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, বস্তুবাদী ও জাগতিক বিষয়ে পারদর্শী অথচ জীবন ও জ্ঞান সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী তথা ইসলামী জ্ঞান সম্পর্কে একেবারে অনভিজ্ঞ। অপর শ্রেণী ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু আধুনকি জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে তত ওয়াকিবহাল নন। প্রচলিত উভয় শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও ধর্মকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে এবং এ দু’টো একই উৎস থেকে উৎসারিত নয়। ধর্ম ও বিজ্ঞান এক ও অভিন্ন এ ধারণা সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুপস্থিত করা হয়েছে। অথচ শিক্ষার মূল উৎস আল-কুরআন বিশ্বের সকল আধুনিক জ্ঞান -বিজ্ঞানের উৎস।

আলীয়া মাদ্রাসার উন্নয়নে গঠিত বিভিন্ন কমিশন

আধুনিক জ্ঞান -বিজ্ঞানের সাথে মাদ্রাসা শিক্ষার সংযোগ করতঃ পাহাড়সম বৈষম্য দূরীকরণে আলীয়া মাদ্রাসার উন্নয়নে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন কমিশন গঠিত হয়। কম বেশি সকল কমিশনই আলীয়া মাদ্রাসার উন্নয়নে বিভিন্ন সুপারিশ প্রদান করে। কিন্ত কোন কমিশনই এসব সুপারিশ হুবহু বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে আন্তরিক ছিল না। এভাবেই গত পৌনে একশ বছর চলে যায়। ১৯৪৯-৫১ সালের মওলানা আকরম খাঁর East Bengal Education System Reconstruction Committee, 1956 সালের আশরাফউদ্দীন চৌধুরী কমিটি, ১৯৫৭ সালের আতাউর রহমান শিক্ষা সংস্কার কমিশন, ১৯৫৮ সালের এম.এম শরীফ জাতীয়শিক্ষা কমিশন, ১৯৬৩ সালের ড. এস.এম হোসাইনের Islamic Arabic University Committee, 1969 সালের ইমামুদ্দীন চৌধুরীর Madrasae Review Committee, 1972-73 সালের বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন, ১৯৭৩ সালের মাদ্রাসার শিক্ষা সংস্কার সংস্থা মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন সুপারিশ করে। ১৯৭৫ সালের কুদরত-ই-খুদা কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে প্রফেসর মুস্তফা বিন কাসিমের নেতৃত্বে ঝবহরড়ৎ Senior Madrasah Education System Committee গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে কাসিম কমিটির সুপারিশের আলোকে সাধারণ শিক্ষার স্তরের সঙ্গে মাদ্রাসা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ঢেলে সাজানো হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে দাখিল এসএসসির সমমান হলে আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার এক দিগন্তকারী পরিবর্তন আসে। ২০০৬ সালে ফাজিল কামিল মাদ্রাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মাদ্রাসার মান সকল স্তরে সমমান হয়। মানের দিক থেকে উন্নয়ন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে ফলে ফাযিল কামিল শ্রেণীতে ভালমানের আশানুরূপ শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আলীয়া মাদ্রাসার কিছু উন্নয়ন হলেও প্রকৃতপক্ষে ধর্মীয় বিষয়ের গুরুত্ব কমতে থাকে। এতে মাদ্রাসা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হতে থাকে।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বলতে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশাসনকে বোঝায়। শিক্ষা হল জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, অভ্যাস এবং মনোভাবকে শেখার অভিজ্ঞতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব যেমন পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পর্ষদ, শিক্ষক পর্ষদ এবং কর্মচারী পর্ষদ অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান প্রধান- অধ্যক্ষ/ হেডমাস্টার/ সুপার, শিক্ষকতা কর্মী, অশিক্ষক কর্মী, প্রশাসনিক কর্মী এবং অন্যান্য শিক্ষা পেশাজীবী সবই শিক্ষাব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত। এশিক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন জাতীয়শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি(NAEM: National Academy for Educational Management,) বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি যেখানে সর্বস্তরের শিক্ষক এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আলীয়া মাদ্রাসায় সংকট

মাদ্রাসাগুলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষিত লোক দায়িত্বে না থাকা এবং সবসময় সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে মাদ্রাসা শিক্ষা আজ অধঃপতনের চ‚ড়ান্ত সীমায় পৌছে গেছে। সর্বাঙ্গে ঘা ঔষধ দিব কোথা। মাদ্রাসা শিক্ষার রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধু সংকট আর সমস্যা। মাদ্রাসা অধিদপ্তরসহ বোর্ডে কর্মরত ভিন্ন ধর্মের কর্মকর্তা, বোর্ডের সর্বোচ্চ পদসহ ১২টি পদে মাত্র একজন মাদ্রাসা শিক্ষিত কর্মকর্তা, মাদ্রাসাগুলোর ভৌত অবকাঠামোগত সংকট, শিক্ষা সংকট, শিক্ষার্থী সংকট, মানগত শিক্ষক সংকট, শিক্ষকদের পদোন্নতি সংকট, সামাজিক সংকটসহ অসংখ্য সংকট লেগেই আছে। এত স্বল্প পরিসরে সকল দিকভাগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার কোন সুযোগ নেই।

প্রথমত: মাদ্রাসা শিক্ষার অবনতির অন্যতম মূল কারণ হল শিক্ষা অব্যবস্থাপনা। মাদ্রাসার এমন অধ্যক্ষ আছেন যারা একই মাদ্রাসাং এবতেদায়ীতে ভীর্ত হয়ে কামিল পাশ করেছেন। শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর তার কোন ট্রেনিং নেওয়ার সুযোগ হয় নি। তাহলে এই শিক্ষক যদি অধ্যক্ষ হন তাহলে তিনি শিক্ষা প্রশাসনের কি বুঝবেন কিভাবেই বা তিনি সকলকে ম্যানেজ করে প্রতিষ।ঠান পরিচালনা করবেন? এ সংকট উত্তরণে প্রতিটি বিভাগীয় অঞ্চলে একটি করে মাদ্রাসা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত: উভয় শিক্ষা ব্যবস্থাতেই মানুষের মধ্যে দুনিয়া ও পরকালীন জীবনে সমন্বয় সাধন করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেআধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে দুনিয়ামূখী করে পরকালীন জীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে উদাসীন করা হয়েছে। পক্ষান্তরে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে দুনিয়াত্যাগী মনোভাব পোষণের শিক্ষা প্রদানের কারণে এরা জাগতিক বিষয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। এই মুল সমস্যার কারণে একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের অভিভাবক তার সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়াতে চাচ্ছে না। এতে দিন দিন মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংকট হচ্ছে।

তৃতীয়ত: দেশের ৬৫ হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসাও সরকারী নেই। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেভাবে খাদ্যসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তা ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় নেই। তাই আলীয়া মাদ্রাসার ফিডার প্রতিষ্ঠান ইবতেদায়ী মাদ্রাসা হতে আশানুরূপ উচ্চ ক্লাশে শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো সরকারী হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

চতুর্থত: মাদ্রসায় দাখিল এবং আলিম পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার সাথে মান এক হলেও তাদের চাই ২০০-৫০০নাম্বারের জন্য অতিরিক্ত কোর্স বেশি পড়তে হয়। এজন্য তারা দাখিল পাশ করে কলেজে চলে যায়। ফলে মাদ্রাসায় আশঙ্কাজনকহারে শিক্ষার্থী হ্রাস পাচ্ছে। যুগে যুগে মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের ফলে আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯০৭-২০০৬ সালের Islamic University (Amendment) Act, 2006 মোতাবেক সাধারণ শিক্ষার সাথে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা সমন্বিত করার কারণে ফাযিল (ডিগ্রী) ৩ বৎসর এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) ২বৎসর মোট ৫বৎসরের কোর্স চালু হয়। উক্ত এ্যক্ট-অনুসারে ১০৮৬ টি ফাযিল(স্নাতক) ও ১৯৮টি কামিল(স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা মোট ১২৮৪ টি মাদ্রাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীভুক্ত হয়। ২০১৫ সালে ফাযিল (স্নাতক) এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসাগুলো ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষ হতে ৩১ টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে বর্তমানে ৭৯ টি মাদ্রাসায় ৫টি বিষয়ে ৭৯ টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু হয়। ২০০৬সালে ফাজিল কামিল মাদ্রাসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত হলে বিশ্বিবদ্যালয়ের সাথে মাদ্রাসার মান সকল স্তরে সমমান হয়। মানের দিক থেকে উন্নয়ন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ বিশ্বিবদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে ফলে ফাযিল কামিল শ্রেণীতে ভালমানের আশানুরূপ শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। এত মাদ্রাসা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে।

পঞ্চমত: আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষয়িক প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অপরদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষয়িক প্রয়োজনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তাই উভয় শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটিপূর্ণ। দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের হেয় করে দেখা হয়। যার কারণে তার হীনমণ্যতায় ভোগে। অতএব রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির সার্বিক কল্যাণের প্রয়োজনেই শিক্ষার নীতিমালা প্রণয়ন অত্যাবশ্যকীয়। দেশের কল্যাণের জন্য দু’ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
সংকট নিরসনে ভাবনা

৯০% সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে মাদ্রাসা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা যতটুকু অগ্রসর হওয়া উচিৎ ছিল তা সম্ভব হয়নি এর সাথে প্রতিটি সরকারের বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে। মাদ্রাসাগুলো থেকে এসব সংকট নিরসন করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়বে। তাই আমি আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে নিম্নে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করছি।

সামগ্রীক প্রস্তাবনা

  1. মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদ- গভর্ণিং বডির প্রধান, মাদ্রাসা প্রধান, মাদ্রাসা বোর্ড প্রধানসহ সকল কর্মকর্তা, অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা মাদ্রাসা শিক্ষত হতে হবে।
  2. ইসলামী বিশ্ববিদালয়, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদালয়, মাদ্রাসা বোর্ড, মাদ্রাসা অধিদপ্তর, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ ধর্মীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগে শুধু মাদ্রাসা শিক্ষিতদের নিয়োগদান করতে হবে। সেখানে এম .ফিল. পিএইচডি ডিগ্রিধারীদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
  3. মাদ্রাসার ফিডার প্রতিষ্ঠান সকল এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ করতে হবে।
  4. প্রতি উপজেলায় একটি করে দাখিল বালক বালিকা, আলিম বালক বালিকা, ফাজিল বালক বালিকা এবং সকল জেলায় একটি করে কামিল বালক বালিকা মাদ্রাসা জাতীয়করণ করতে হবে।
  5. সকল শিক্ষার্থীকে পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষার উপকরণ ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা।
  6. প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মডেল মাদ্রাসা স্থাপন করতে হবে।
  7. মাদ্রাসা সিলেবাসে দাখিল ও আলিমে বাংলা ও ইংরেজীতে ২০০ নম্বর বাতিল করে। মাদ্রাসা শিক্ষা ধারা অক্ষুন্ন রেখে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধন করতে হবে।
  8. মাদরাসা, স্কুল ও কলেজ এবং সরকারী মাদরাসা, স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের ও কর্মচারীদের মধ্যকার বিরাজমান বৈষম্য দূর করতে হবে।
  9. পদোন্নতির ক্ষেত্রে এম .ফিল. পিএইচডি ডিগ্রিধারীদেরকে ন্যূনতম তিন বৎসর রেয়াত প্রদান করা।
  10. এম.ফিল., পিএইচডি. ধারীদেরকে ৫০% অনুপাতের মধ্যে রেখে “সহকারী অধ্যাপক” পদে পদোন্নতি প্রদান করা।
  11. অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রিধারীদের জন্য সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরির অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিল আইন বাস্তবায়ন করা।
  12. বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে উচ্চতর ডিগ্রী(এম.ফিল-পি.এইচ.ডি) প্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা করা।
  13. ইসলামী আরবী বিশ্ববিদালয় অধীন একটি উচ্চতর নিয়োগ বোর্ড গঠন করে ফাজিল/কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
  14. এটিআরসিএ-এর অধীন একটি উচ্চতর নিয়োগ বোর্ড গঠন করে দাখিল/আলিম মাদ্রাসার সুপার/অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
  15. এমফিল পিএইচডি ডিগ্রীধারীদের ১০% সরকারী কলেজে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া।
  16. এমফিল পিএইচডি গবেষণাইচ্ছুদের ৩ বছরের শিক্ষা ছুটি এবং স্কলারশীপের ব্যবস্থা করতে হবে।
  17. অনার্স মাদ্রাসাগুলোতে সাবজেক্টওয়ারী ৭ জন করে শিক্ষক প্যাটার্ন মঞ্জুর বাস্তবায়ন এবং তাদের বেতনভাতাদির ব্যবস্থা না থাকা।
  18. সকল কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ খোলা এবং স্টাডিজের অনার্স অনুমোদন না দেয়া।
  19. বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এদেশে বৃটিশ রচিত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে ধর্শী শিক্ষা প্রাধান্য এবং অক্ষুন্ন থাকে সেভাবে স্বাধীন উপযোগী ও বাস্তবমূখী করে ঢেলে সাজাতে হবে।
  20. আধুনিক শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্ম ও বিজ্ঞানকে পরস্পর সাংঘর্ষিক ধারায় প্রবাহিত করা হয়েছে। অথচ ধর্ম ও বিজ্ঞানে কোন সংঘাত নেই বরং কুআন বিজ্ঞানের পরিপুরক। তাই মানবের সার্বিক কল্যাণে ধর্ম ও বিজ্ঞান উভয়টির সমন্বিত জ্ঞানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  21. বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ লোক মুসলিম। কিন্তু এদেশে বিদ্যমান শিক্ষানীতির কোন আদর্শ নেই। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষের ঈমান আক্বীদার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। তাই আদর্শ ও উদ্দেশ্যহীন এ শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা অতীব প্রয়োজন।
  22. বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের প্রণীত দ্বিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত দু’টি স্রোতধারা জাতীয় ঐক্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই একটি আদর্শবান ও ঐক্যবদ্ধ জাতি তৈরীর জন্য একমূখী আদর্শ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা দরকার।
  23. শিক্ষার সর্বস্তরে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্বলিত বিজ্ঞানমনষ্ক পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করে অচিরেই কার্যকর করা।
  24. মাদ্রাসা কামিল উত্তীর্ণ যোগ্য শিক্ষণার্থীদের উচ্চশিক্ষা যথা এম. ফিল, এম. এস ও পি.এইচ.ডি ডিগ্রীসহ মৌলিক গবেষণার সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা। গবেষণার জন্য প্রচুর বৃত্তির ব্যবস্থা করা।
  25. মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ নিয়োগে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী/স্টাডিজ ও সরকারী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ করা।
  26. মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলা কোটা বাতিল করা।
  27. নিবন্ধন পরীক্ষায় সংস্কার সাধন করে প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় ৮০% নাম্বার কুরআন হাদীস আরবী থেকে প্রশ্ন করা। নিবন্ধনকৃতদের সময়সীমা ৫ বছর বিধি বাতিল করা।
  28. উচ্চতর গবেষণার লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শিক্ষক প্রেরণের ব্যবস্থা চালু করা।
  29. শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে বিশেষ বৃত্তি চালু করন।
  30. শিক্ষা ও প্রশাসনিক তদারকি বৃদ্ধিতে প্রতি উপজেলায় একজন করে মাদ্রাসা পরিদর্শক নিয়োগ দান করতে হবে।
  31. মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ন্যায় এনসিটিবিতে মাদ্রাসার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষিতদের নেতৃত্বে আলাদা এনসিটিবি গঠন করতে হবে।
  32. এবতেদায়ী স্তর
  33. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসায় উপবৃত্তি ও বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণের করতে হবে।
  34. স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের মত সি, এন, এড ট্রেনিং বাধ্যতা মূলক করা।
  35. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নসহ ক্লাস্টার পদ্ধতির আওতাভুক্ত করা।
  36. এবতেদায়ী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি জেলা শহরে শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে।
  37. এবতেদায়ী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে আনুপাতিক হারে শিক্ষক নিয়োগ করা।
  38. নির্বাচনী পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা।
  39. এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতনক্রম ও চাকুরির শর্তাবলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা।
  40. এবতেদায়ী মাদ্রাসা সমূহেরজন্য স্বতন্ত্র পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি করা।
  41. এবতেদায়ী স্তরের স্বাতন্ত্র ও গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে এবতেদায়ী ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর সমন্বয় করা।
  42. প্রতিটি এবতেদায়ী মাদ্রাসায় নুরানী শিখ্ষা পদ্ধতি চালু করত তাদের বেতন ভাতাদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অনুরূপ করতে হবে।
  43. দাখিল ও আলিম স্তর
  44. আলিম স্তরে বাংলা ও ইংরেজী১০০ নম্বর করে ঠিক মাদ্রাসা শিক্ষার মূলধারা অক্ষুন্ন রেখে সাধারণ শিক্ষার সাথে সমন্বয় সাধন করা।
  45. আরবী ইংরেজী উভয় ভাষায় স্কিল বাড়াতে একটি করে ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  46. এস, এস, সি ও এইচ, এস, সি পর্যায়ে বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষাতেও সরকারের সমভাবে সহযোগিতা করা।
  47. শিক্ষার মান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান সহ সকল শিক্ষককে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ অর্জনের ব্যবস্থা অনতিবিলম্বে করা।
  48. আলিম মাদ্রাসায় সিনিয়র প্রভাষক পদ বিলুপ্ত করে ৫০% প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগদান করা।
  49. ফাজিল ও কামিল স্তর
  50. ফাজিল ও কামিল উভয় স্তরের শিক্ষাক্রম ও শিক্ষাসূচী আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইসলামের নবতর গবেষণালব্ধ উচ্চতর জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সিলেবাস আধুনিকায়ণ করা।
  51. ফাজিল স্তরে বিষয়ভিত্তিক কমপক্ষে দুজন এবং ও কামিল স্তরে কমপক্ষে ৭ করে শিক্ষক নিয়োগ দান করা।
  52. ফাজিল মাদরাসায় অনার্স কোর্সের জন্য ১ জন অধ্যাপক ১ জন সহযোগী অধ্যাপক, ২ জন সহকারী অধ্যাপক, ৪ জন প্রভাষক পদের শিক্ষক নিয়োগ দান নিশ্চিত করা। এবং অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক এদের বেতন ভাতাদির ব্যবস্থা করা\ এমফিল পিএইচডি ধারীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগদান করা।
  53. মাদ্রাসায় কর্মরত এমফিল পিএইডি ডিগ্রিধারীদের দেশ জাতির জন্য করণীয়
  54. সিলেবাস সংশোধন কমিটি: দেশ জাতি মুসলিম উম্মাহর কল্যাণকর বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা। ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস প্রণয়ন করা।
  55. মাদ্রাসা পিডিয়া: দেশের সকল ফাজিল কামিল মাদ্রাসার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে একটি মাদ্রাসা পিডিয়া রচনা করা।
  56. মাদ্রাসা শিক্ষা অতীত ও বর্তমান: দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা। সকল এমফিল পিএইচডিধারীদের বাধ্যতামূলক একটি করে আর্টিকেল রচনা করা।
  57. সকলের এমফিল পিএইচডির সংক্ষিপ্ত সার ফাজলাকা নিয়ে গ্রন্থ রচনা করা।
  58. সকল সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেলে মাদ্রাসা পাশকৃত অধ্যানরতদের তালিকা প্রণয়ন।
  59. একটি জার্ণাল প্রকাশ করতে হবে।

উপসংহার

আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষার মূল উৎস কুরআন ও হাদীস। আর কুরআন ও হাদীসের মূল শিক্ষা যে প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয় তাই মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত। রাসূলুল্লাহ (স.) এর যুগ হতে শুরু হয়ে অদ্যাবধি এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। আলীয়া ও কওমী এ দু’টি ধারাই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় চালু আছে। যুগে যুগে আলীয়া মাদ্র্রাসা শিক্ষা আধুনিকিকরণে বিভিন্ন সরকারের আমলে গঠিত হয় শিক্ষা কমিশন। ফলে আজ আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার সাথে সুসামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে সমমান করা হয়। এতে আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যতটুকু অগ্রসর হওয়া উচিৎ ছিল তা সম্ভব হয় নি এর সাথে প্রতিটি সরকারের বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে। মাদ্রাসাগুলো থেকে এসব সংকট নিরসন করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়বে। তাই আমি আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

সহায়ক গ্রন্থ:

  • আঃ রশীদ নোমানী, লুগাতুল কুরান, দারূল ইশায়াত উর্দ্দু বাজার করাচী, ১৯৯২, ২ সং, ১ম খন্ড।
  • আবুল ফজল মাওঃ আব্দুল হাফিজ বেলইয়াভী, মিসবাহুল লুগাহ, মাকতুবায়ে বুরহান উর্দ্দু বাজার জামে মসজিদ দিল্লী, ১৯৫০।
  • আহমদ, মাওলানা মমতাজ উদ্দীন,মাদ্রাসা-ই-আলীয়ার ইতিহাস,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ,ঢাকা,২০০৪।
  • আবদুস সাত্তার, তারীখ মাদ্রাসা-ই-আলীয়া,ঢাকা,১৯৫৯।
  • আলী, মোহাম্মদ ইলিয়াস, যুগে যুগে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষার উত্তরণ, জাগবলী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৯।
  • ইব্ন মানজুর, লিসানুল আরব, দারুল হাদীছ কাহেরা ২০০৩, ৩য় খন্ড।
  • ইবরাহীম মো¯তফা ও সঙ্গিবৃন্দ, মু’জামুল অসিত, কুতুবখানা হোসাইনিয়া দেওবন্দ, ইউ,পি, ২য় সংস্করণ, ১৩৯২/১৯৭২।
  • ফরিদী, আব্দুল হক, মাদ্রাসা শিক্ষা, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
  • মোস্তাফিজুর রহমান. মোহাম্মদ, মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ণ ঃ ঐতিহাসিক পটভূমি, এম.ফিল অপ্রকাশিত থিসিস, আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া,২০০৯।
  • মাদ্রাসা শিক্ষা যুগে যুগে, প্রফেসর ড. আ. ব.ম. সাইফুল ইসলাম সিদ্দীকী, আল-জময়িত স্মারক ১৯৯৩।
  • মাদ্রাসা শিক্ষা : উৎপত্তি ও বিকাশ, প্রফেসর ড.আ.ব.ম. সাইফুল ইসলাম সিদ্দীকী, জবংবধৎপয ঔড়ঁৎহধষ, ওওঊজ.
  • মোস্তফা হারুন,আলীয়া মাদ্রাসার ইতিহাস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা,১৯৮০।
  • সম্পাদনা পরিষদ,ইসলামী বিশ্বকোষ,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, ১৯৮৫।
  • হাসানাত, শরীফা সুলতানা,আরবী ও ইসলামী শিক্ষা চর্চায় মাদ্রাসা-ই-আলীয়ার অবদান, এম.ফিল অপ্রকাশিত থিসিস, আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া,২০০৪।
  • MS Islam Shafiqu, English Language Teaching (elt) in Madrasah Education Of Bangladesh: A Search For An Effective Method, Department Of Al-Quran & Islamic Studies , Islamic University, Kushtia, 2021
  • Dr. A.K.M. Ayyab Ali, History of Traditional Islamic Education in Bangladesh, 1983.
  • Ibrahimi, Dr. Sekandar Ali, Reports on Islamic Education and Madrasah Education in Bengla (1-5)
  • Banglapedia, Madrasah, Dr.A.B.M. Saiful Islam Siddiqi.
  • Banglapedia, Alia Madrasah, Dr.A.B.M. Saiful Islam Siddiqi.
  • Banglapedia, Islamic University, Dr.A.B.M. Saiful Islam Siddiqi.
  • Islamic University (Amendment) Act, 2006.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *