
|| প্রফেসর ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী | ইবি ||
বাংলাদেশের দুই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
১. সাধারণ শিক্ষা ও
২. মাদ্রাসা শিক্ষা।
সাধারণ শিক্ষাধারা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই সরকারি অনুদানে তথা এমপিও (monthly payment order) তে পরিচালিত। আর কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি সরকারি অর্থে পরিচালিত হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষা আবার দুটি ধারায় প্রচলিত :
১. কাওমি ধারা তথা দরছে নিজামিয়া পদ্ধতি।
এ ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ জনগণের অনুদানের অর্থে পরিচালিত হয়।
২. আলিয়া শিক্ষা ধারা। এধারার শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারি আর্থিক অনুদানে তথা এমপিও (monthly payment order) তে পরিচালিত পরিচালিত হয়। তবে সরকারি নয়।
এ দুই ধরনের শিক্ষা ধারায় সামাজিক অর্থনৈতিক এবং সরকারের আনুকূল্য তদারকি এবং পর্যবেক্ষণ না থাকার কারণে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি তাদের ক্লাসে অনুপস্থিতির হারও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ মুহূর্তে মাদ্রাসাগুলো নিয়ে দেশবাসী সরকার যদি ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা না করে, তাহলে অচিরেই নিউ স্কিম মাদ্রাসার মত এসব মাদ্রাসা সরকার কর্তৃক বন্ধ করতে হবে না। আপনা আপনি ধর্মীয় শিক্ষার উদারনীতির প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
তাই মাদ্রাসাগুলোকে বাঁচাতে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে আমার পক্ষ থেকে নিম্নের প্রস্তাবনা গুলো রাখছি।
প্রস্তাবনা
সরকার কর্তৃক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ
১. স্তরভিত্তিক মাদ্রাসা আলাদা করা:
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে। যার কারণে তারা কুয়োর ব্যাঙের মতো একই জায়গায় অবস্থান করে। একারণে দেশ জাতি সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা আসে না। একটি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত একটি কামিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর জ্ঞান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী সমান হতে বাধ্য। কারণ ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার কারণে তাদের মধ্যে পরিবেশ আচরণ গত তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না।
এজন্য সাধারণ শিক্ষা প্রাথমিক মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এর মতো ইবতেদায়ী দাখিল আলিম ফাজিল এবং কামিলকে স্তর অনুযায়ী আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভক্ত করা।
২. ফিডার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা:
উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সাপ্লাইয়ের জন্য নিম্নতর প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন দাখিল মাদ্রাসাগুলোর জন্য ইবতেদায়ী মাদ্রাসা আলেম মাদ্রাসার জন্য দাখিল মাদ্রাসা, ফাজিল কামিল মাদ্রাসার জন্য আলিম মাদ্রাসাগুলোকে শক্তিশালী করা।
শক্তিশালী করতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ক. সকল ইবতেদায়ী মাদ্রাসা সরকারিকরণ।
খ. প্রতিটি উপজেলায় একটি করে দাখিল আলিম বালক ও মহিলা মাদ্রাসা এবং প্রতিটি জেলায় একটা করে কামিল মাদ্রাসা আপাতত সরকারি করা।
গ. মাদ্রাসার সকল স্তরের শিক্ষকদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা।
ঘ. মাদ্রাসার প্রধানদের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে টেনিং দেওয়া।
ঙ. ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় নুরানী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।
চ. সকল স্তরে শিক্ষা অবৈতনিক করা।
ছ. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ফ্রিতে সরবরাহ করণ।
জ. সকল শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির ব্যবস্থা করণ।
ঝ. শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করতে কম্পিউটার ভোকেশনাল শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
ঞ. আরবি ভাষা রপ্ত করার জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা।
ট. ফাজিল কামিল মাদ্রাসা গুলোতে আবাসিক হল নির্মাণ করা।
ঠ. মধ্যপ্রাচ্যের সাথে চুক্তি করে মাদ্রাসার ছাত্রদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরীর ব্যবস্থা করা।
ড. মাদ্রাসা শিক্ষিতদেরকে দেশের সেবক হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া।
৩. অধ্যক্ষ কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ
ক. অধ্যক্ষ কর্তৃক সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করা।
খ. সকল ক্লাসে শিক্ষকদের যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করণ করা।
গ. শিক্ষকদের ক্লাস প্রস্তুত করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করা।
ঘ. শিক্ষার্থীর হাজিরা নিশ্চিত করা।
৪. হাজিরা নিশ্চিত করতে নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ক. হাজিরার জন্য নির্ধারিত নাম্বার থাকা।
খ. শতভাগ উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা ।
গ. ফলাফল প্রদানের সময় অভিভাবক সমাবেশ করা।
ঘ. সপ্তাহের নিয়মিত অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের তালিকা করা। এভাবে মাসিক রিপোর্ট তৈরি করা।
ঙ. প্রতিটি শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইলে
মাসিক রিপোর্ট প্রদান করা।
চ. কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জরিমানা নির্ধারণ করা।
ছ. বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় অন্তত 20 নাম্বার শিক্ষকদের হাতে থাকা।
জ. সপ্তাহে অন্ততত একটি করে টিউটোরিয়াল/ পরীক্ষা গ্রহণ করা।
ঝ. অন্তত ২৫% অনুপস্থিত থাকলে এবং পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া।
ঞ. নকলমুক্ত রাখতে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলোতে পরিদর্শনে কড়াকড়ি আরোপ করা।
ট. মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ এবং কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল এর ভিত্তিতে অন্তত ১০ জনকে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
ঠ. এতিম দুস্থ গরিব। শিক্ষার্থীদের ফ্রি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা।
ড. শিক্ষার্থীরা অলস না হয়ে কর্মমুখী হবে এজন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থা করা।
এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অন্তত ২০-৩০% শিক্ষার্থী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে ।
লেখক: প্রফেসর, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ও সাবেক ডিন, ধর্মতত্ত্ব অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।