রবিবার, আগস্ট ২৪

আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার ও সহকারী সুপার নিয়োগ যোগ্যতায় বিএড/বিএমএড এবং এমএড/এমএমএড কোর্স

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির যুগে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদে যারা নিয়োগ পাবেন তাদেরকে অবশ্যই বিএড/ বিএমএড এবং এমএড/এমএমএড বাধ্যতামূলক করা উচিত। কারণ একজন বিএড/ বিএমএড এবং এমএড/এমএমএড কোর্স সম্পন্ন করা শিক্ষকের সাথে নন-বিএড/ নন-বিএমএড শিক্ষকের সাথে তুলনা করলে আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা যায়। বিএড/ এমএড কোর্সে শুধু পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কেই পড়ানো হয় না। বরং শিক্ষা দর্শন, শিক্ষা বিজ্ঞান, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা এবং পরিচালনার কর্ম কৌশল সম্পর্কে শেখানো হয়। তাই মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদে যিনি আসবেন, তিনি যদি কীভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করতে হয় তাই না জানেন, তাহলে কিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়?

বর্তমানে নন-বিএড ও নন-এমএড শিক্ষক সুপার ও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের কোনো “শিক্ষা বিজ্ঞান ” সংক্রান্ত বিষয়ে আলাদা কোনো ডিগ্রি নেই! যিনি সারা জীবন শিক্ষা বা শিক্ষা প্রশাসন নিয়ে কাজ করবেন তিনি কেন শিক্ষা নিয়ে ভালোভাবে জানবেন না?কেন তাদের জন্য বিএড/ এমএড কোর্স বাধ্যতামূলক করা হবে না?

√বিএড কোর্স না করলে যেই বিষয়গুলো অজানা থেকে যায়:
১. শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম সম্পর্কে সঠিক ধারণা পায় না।
২. স্তরভিত্তিক (ইবতেদায়ী ও দাখিল স্তর) শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং জাতীয় শিক্ষা নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা কঠিন।
৩. দেশের চাহিদা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা অসম্ভব হয়ে যায়।
৪. শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা সংক্রান্ত অনেক কিছু অজানা থাকে।
৫. মাদ্রাসা পরিচালনার নিয়মনীতি ও কৌশল সম্পর্কে অজানা থাকে।
৬. বিভিন্ন ছুটি ও দিবস উদযাপন সঠিকভাবে হয় না।
৭. শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে অজানা থাকে।
৮. শিখনফল বের করার কৌশল জানে না।
৯. পাঠ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে না।
১০. সঠিকভাবে মাদরাসা পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না।

√বিএড /বিএমএড কোর্সে যেই বিষয়গুলো পড়ানো হয় :
১. প্রাথমিক শিক্ষা।
২. মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা।
৩. শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল।
৪. শিক্ষায় আইসিটি।
৫. মাদ্রাসা শিক্ষা।
৬. বিষয়ভিত্তিক শিক্ষণ।

একটা সময় বিএড /বিএমএড কোর্স করার সুযোগ ছিলো খুবই সীমিত। কিন্তু বর্তমানে এই সমস্যা কেটে গেছে। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেটভাবে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে একটা সহজতর ক্ষেত্র হলো বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড/বিএমএড করা যায়। কারণ এর ক্লাস টাইম হলো ছুটির দিনে [শুক্রবার ও শনিবার]। তাই মাদ্রাসার সুপার ও অধ্যক্ষরা এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন।

অথচ দেখা যায় মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক / মৌলভীরা বিএড/বিএমএড কোর্স করতেছে। এতে সমস্যার সৃষ্টি হয় পাঠদানে। কারণ সুপার ও অধ্যক্ষ সাহেব নন-বিএড আর তার নিচের পোস্টের শিক্ষক বিএড কোর্স সম্পন্ন করা।

একজন অধ্যক্ষ মাসে পঞ্চাশ হাজার [গ্রেড-৪] টাকা বেতন এবং একজন সুপার মাসে উনত্রিশ হাজার [গ্রেড-৭] টাকা বেতনে চাকরি করেন অথচ জীবনে একটা “শিক্ষা বিজ্ঞান” বিষায়ক [বিএড/বিএমএড] ডিগ্রি নেই! একজন প্রশাসনিক লোকের জন্য এমফিল, পিএইচডি করা খুবই কষ্টের ব্যাপার। এমফিল, পিএইচডি সুবিধাজনক হতে পারে প্রভাষকদের জন্য। এটা সবার জন্য সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। কাজেই অধ্যক্ষ এবং সুপার নিয়োগে বিএড /বিএমএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করাটা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত বিষয়।এর সাথে সাথে মাদ্রাসার দাখিল স্তরের সকল সহকারী শিক্ষক ও মৌলভীদেরকে স্কুলের ন্যায় ৮ম গ্রেড প্রদান করে সিনিয়র শিক্ষক পদ সৃজন করা।

মাদ্রাসার শিক্ষার উন্নয়ন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে এবং মাদ্রাসা থেকে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা জন্য সুপার ও অধ্যক্ষ নিয়োগের যোগ্যতায় বিএড/বিএমএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ে দাবি।

অনেকে আবার মনে করতে পারেন যে এই নিয়ম চালু হলে অধ্যক্ষ ও সুপার পদে জনবল পাওয়া কষ্টকর হবে।এক্ষেত্রে সংকট কাটানোর জন্য প্রথম পর্যায়ে বিএড/বিএমএড ডিগ্রি ছাড়াই সুপার ও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের সুযোগ প্রদান করে পরবর্তীতে তাদেরকে অবশ্যই বিএড/বিএমএড করে নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *