
|| প্রফেসর ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী | ইবি, কুষ্টিয়া ||
বাংলাদেশে আগের তুলনায় আরবি চর্চার একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। কাওমি আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়াও ছয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি চর্চা হচ্ছে।
আরবি শিক্ষার মূল মাধ্যম হলো আরবি অভিধান। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোন কোন ব্যক্তির উদ্যোগে আরবি-বাংলা, বাংলা-আরবি, আরবি-বাংলা-ইংরেজি ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কিছু অভিধান প্রকাশিত হয়েছে।
আরবি ভাষা চর্চায় এগুলোর ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য তেমনি বাংলা ভাষা সমৃদ্ধিতে এগুলোর ভূমিকাও সুদূর প্রসারী।
দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান আরবি অভিধান বাংলায় অনুবাদ করে এদের অন্যতম হলো মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা, বাংলা একাডেমী এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে আল মুফিদ নামে প্রথম আরবি-বাংলা অভিধান প্রকাশিত হয়।
বাংলা একাডেমি আরবি-বাংলা অভিধান প্রকাশ করে। এরপর ইসলামিক ফাউন্ডেশন আরবি-বাংলা অভিধান প্রকাশ করে।
ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কয়েকজন আরবি-বাংলা অভিধান প্রকাশ করেন। তন্মধ্যে বর্তমানে শীর্ষ আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ডঃ মোঃ ফজলুর রহমান।
তিনি আরবি-বাংলা-ইংরেজি, বাংলা-আরবি-ইংরেজি, ইংরেজি-বাংলা-আরবি এ তিনটি অভিধান প্রকাশ করেন।
ডঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আল মুনির নামে একটি অভিধান প্রকাশ করেন। এরপর আবু তাহের মেসবাহসহ আরো অনেকেই আরবি-বাংলা অভিধান প্রকাশ করেন।
আরবি ভাষা ছাড়াও বাংলা ভাষা সমৃদ্ধিতে এসব অভিধানের ভূমিকা কতটুকু এবং অভিধানগুলো সম্পর্কে একত্রে জানা শোনার জন্য তেমন কোনো গবেষণা প্রবন্ধ/গ্রন্থ রচিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
তবে প্রফেসর ডঃ মোঃ ফজলুর রহমান Arabic lexicography বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি করেন।
তাই এ বিষয়ে সুন্দর একটি গবেষণা হতে পারে।
এ ধরনের একটি গবেষণা হলে সেখানে আলোচ্য বিষয়গুলো হইতে পারে –
১. আরবী বাংলা অভিধানের ইতিবৃত্ত ,
২. আরবি বাংলা অভিধান রচয়িতাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
৩. আরবি বাংলা অভিধান পরিচিতি
৪. অভিধানগুলো আরবি ভাষা চর্চায় কতটুকু উপকারী সে বিষয়ে আলোকপাত করার অবকাশ রয়েছে।
৫. অভিধানগুলো বাংলা ভাষা উন্নয়নে কতটুকু অবদান রেখেছে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়া যেতে পারে।
মোটকথা এ ধরনের একটি গবেষণা হলে এদেশের আরবিপ্রেমী শিক্ষার্থী গবেষক শিক্ষক নিম্নে বর্ণিত বিষয়ে উপকৃত হতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
১. আল কোরআন ইসলাম ধর্মের মৌলিক উৎস গ্রন্থ, কিন্তু এটি আরবি ভাষায় রচিত হওয়ায় এটি বোধগম্য করা বাংলা ভাষাভাষীদের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। তাই ধর্মীয় গ্রন্থ তেলাওয়াত শিখার জন্য আরবি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ অত্যাবশ্যক। আরবি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে অভিধান এর কোন বিকল্প নেই। তাই যতগুলো অভিধান আরবি থেকে বাংলায় অনূদিত অথবা রচিত হয়েছে, এ সম্পর্কে আমাদের সাধারণ মানুষরা কিছুই জানেন না। এ প্রবন্ধের মাধ্যমে এ বিষয়ে তারা সম্যক অবহিত হতে পারবে।
২. অভিধানগুলো সম্পর্কে একত্রে জানা শোনার বিষয়ে কোনো গবেষণা প্রবন্ধ রচিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তাই এ বিষয়ে একটি গবেষণা অত্যাবশ্যক।
৩. বাংলা ভাষা সমৃদ্ধিতে এসব অভিধান কতটুকু ভূমিকা রেখেছে, সে বিষয়টিও স্পষ্টভাবে জানতে পারবে।
৪. আমাদের দেশের শিক্ষাক-শিক্ষার্থীরা অভিধান বিমুখ, যার কারণে উচ্চতর শিক্ষা তথা এমএ পাস করেও একজন শিক্ষার্থী আরবি বা ইংরেজি সম্পর্কে তেমন ধারণা লাভ করতে পারে না। এ প্রবন্ধের মাধ্যমে তারা অভিধান অধ্যয়নে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
৫. অভিধানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট ধারণা থাকলে তারা অভিধানের প্রতি আগ্রহী হবে এবং ভাষা সম্পর্কে তাদের স্কিল বৃদ্ধি পাবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যসহ আরবি ভাষাভাষী দেশে আমরা যোগ্য মানবসম্পদকে প্রেরণ করতে সক্ষম হব। তাই এটি দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
৬. বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। ইসলাম আমাদের জীবন ব্যবস্থার নাম। কিন্তু ইসলাম ধর্মের মূল উৎস গ্রন্থ আরবি। মাতৃভাষা ধর্মচর্চার গুরুত্ব অনেক। কিন্তু আরবি গ্রন্থগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদ অত্যাবশ্যক। আরবি ভাষা বিশুদ্ধভাবে অনুবাদ করতে আরবি অভিধানের কোন বিকল্প নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তি কেন্দ্রিক এ পর্যন্ত যতগুলো আরবি বাংলা বাংলা আরবি অভিধান রচিত হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কোন ধারণা নেই। তাই দেশের প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান এবং প্রসিদ্ধ ব্যক্তির রচিত প্রকাশিত অভিধান নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচিত হতে পারে। এখানে আরবি বাংলা অভিধান রচনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হবে, অভিধান রচয়িতাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হবে এবং অভিধারগুলোর পরিচিতি বাংলা ভাষা সমৃদ্ধিতে এগুলো কতটুকু অবদান রেখেছে, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে প্রবন্ধে।
এ বিষয়ে কোনো প্রবন্ধ বা কোনো গবেষণা হয়েছে অথবা কোনো গ্রন্থ রচিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক। তাই এ বিষয়ে গবেষণা খুব যে সহজ হবে তাও নয়। তাই এর ক্ষেত্র নির্ধারণ করে গবেষণা পরিচালনা করা যেতে পারে। এতে দেশ জাতি অনেক উপকার পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: সাবেক ডিন, থিওলজী এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।