ভূমিকা :
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত ইসলাম। ইসলামের একটি অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় ইবাদত সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে ‘আযান’। সাধারণভাবে সালাতে বা নামাযের জন্য আহ্বান করার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিকে আযান বলা হয়ে থাকে। মুসলিম সমাজে আযান কেবল নামাযের দিকে আহ্বানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। বিশেষতঃ কোনো মুসলিম পরিবারে সন্তান জন্মলাভ করলে নবজাতকের কানে আযান দেয়া, কোনো শুভ কাজের সূচনালগ্নে এবং বালা-মসিবত বা কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপদাপদের সময় তা থেকে পরিত্রাণলাভে আযান দেয়ার প্রচলন রয়েছে।
ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য আযানের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একত্মবাদ, বড়ত্ব ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। প্রত্যহ পাঁচবার আযানের সুমধুর ধ্বনিতে মুখরিত হয় আকাশ-বাতাস, মুমিনের হৃদয়ে ঈমানের জোয়ার আসে, খোদাপ্রেমে সিক্ত হয় মুমিনের অন্তরাত্মা। মুয়ায্যিনের সুমধুর সুরে মানবহৃদয় বিগলিত হয় বলেই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রি.) গেয়েছেন-
“দূর আযানের মধুর ধ্বনি, বাজে, বাজে মসজিদের-ই মিনারে।
মনেতে জাগে, হাজার বছর আগে, হযরত বেলালের অনুরাগে।
তার খাস এলাহান, মাতাইতো প্রাণ। ভাঙ্গাইতো পাষাণ, জাগাইতো মহিমারে।
দূর আযানের মধুর ধ্বনি, বাজে, বাজে মসজিদের-ই মিনারে”
আযানের সুমধুর ধ্বনি কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হওয়া মাত্র মুসলমানগণ সব ভেদাভেদ ভুলে মসজিদে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আল্লাহর বড়ত্ব, মহানত্ব ও একত্মবাদের ঘোষণা দেয় এবং তাঁর সমকক্ষ হওয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানায়। আর সেই অপূর্ব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে যুগে যুগে অসংখ্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ঈমান এনে ধন্য হয়েছেন। সঙ্গত কারণেই সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আযানের গুরুত্ব ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অপরিসীম। আযানের ধর্মীয় আধ্যাত্মিক গুরুত্বের সাথে সাথে সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশীল সমাজ বিনির্মাণে এর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। আযানের এই ভূমিকা ইসলামী ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।
আযানের সংজ্ঞা
‘আযান’ (الأَذَان) আরবী শব্দ। শব্দটি اسم المصدر القياسي- ‘আযান’-এর শাব্দিক অর্থ- ঘোষণা ধ্বনি (الإعلام)। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের বাণী :
وَأَذَانٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ-
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে।
সাধারণভাবে বলা হয় ‘আযান’-এর অর্থ ঘোষণা করা, আহ্বান করা, ডাকা ইত্যাদি।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ‘আযান’-এর অর্থ হচ্ছে, নামাযের সময় হাদীসে বর্ণিত বিশেষ শব্দাবলীর মাধ্যমে ঘোষণা বা আহ্বান করা। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,
وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ –
আর যখন তোমরা নামাযের দিকে আহ্বান করো (আযান দাও)।
নামাযের জন্য ঘোষণা দিতে আযান দেয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে-
فَقَالَ عُمَرُ أَوَلاَ تَبْعَثُونَ رَجُلاً يُنَادِي بِالصَّلاَةِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ يَا بِلاَلُ قُمْ فَنَادِ بِالصَّلاَةِ ”.
অতঃপর ওমর (রা.) বললেন, সালাতের ঘোষণা দেয়ার জন্য তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পারো না? তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে বিলাল, উঠ এবং সালাতের জন্য ঘোষণা দাও।
আযানের পারিভাষিক সংজ্ঞায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (মৃত্য: ৮৫৫ হিজরী) বলেন,
الأذان إعلام مخصوص بألفاظ مخصوصه في أوقات مخصوصة.
অর্থাৎ- আযান হচ্ছে নির্দিষ্ট ঘোষণা, যা নির্দিষ্ট শব্দাবলীর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে দেয়া হয়ে থাকে।
আযানের পারিভাষিক সংজ্ঞায় হাফেজ আহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হাজার আসকালানী (৭৭৩-৮৫২ হিজরী) বলেন,
الإعلام بوقت الصلاة بألفاظ مخصوصة.
অর্থাৎ- (আযান হচ্ছে) সালাতের সময় নির্দিষ্ট শব্দাবলীর মাধ্যমে ঘোষাণা করা।
আযানের পারিভাষিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইবনে হাজার আসকালানী (৭৭৩-৮৫২ হিজরী) সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী’তে ইমাম কুরতুবী’র (১২১৪-১২৭৪ খ্রি.) ভাষ্য উল্লেখ করেছেন,
قال القرطبي وغيره: “الأذان على قلة ألفاظه مشتمل على مسائل العقيدة، لأنه بدأ بالأكبرية، وهي تتضمن وجود الله وكماله، ثم ثَنَّى بالتوحيد، ونفي الشرك، ثم بإثبات الرسالة لمحمد صلى الله عليه وسلم، ثم دعا إلى الطاعة المخصوصة عقب الشهادة بالرسالة، لأنها لا تُعرف إلا من جهة الرسول، ثم دعا إلى الفلاح وهو البقاء الدائم، وفيه الإشارة إلى المعاد، ثم أعاد ما أعاد توكيدًا، ويحصل من الأذان الإعلام بدخول الوقت، والدعاء إلى الجماعة، وإظهار شعائر الإسلام، والحكمة في اختيار القول له دون الفعل سهولة القول وتيسره لكل أحد في كل زمان ومكان”.
অতএব, উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, হাদীসে বর্ণিত বিশেষ শব্দাবলীর মাধ্যমে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সালাত তথা প্রার্থনার জন্য মুয়ায্যিন কর্তৃক যে ঘোষণা বা আহ্বান করা হয়, তাকে ‘আযান’ বলে।
আযান প্রচলনের ইতিবৃত্ত :
আযান ইসলামের প্রতীক। ভিন্ন কোনো দেশে অপরিচিত জায়গায় গিয়ে যদি আযানের ধ্বনি শোনা যায়, তবে ধরেই নেয়া যায় যে, এখানে মুসলমানের অস্তিত্ব বিদ্যমান। ইসলামের এই অন্যতম নিদর্শন বর্তমানে প্রচলিত নামাযের জন্য আহ্বান তথা ‘আযান’ মহানবী (সা.)-এর হিজরত পরবর্তী মাদানী জীবনের ঊষালগ্নে শুরু হলেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নির্দেশে সর্বপ্রথম হজ্জের জন্য আযান দিয়েছিলেন মুসলিম মিল্লাতের জনক হযরত ইবরাহীম (আ.)। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইবরাহীম (আ.) হজ্জ করার জন্য আবু কুবাইস পর্বতে আরোহণ করে একটি ঘোষণা প্রচার করেছিলেন। সম্ভবত উদ্দেশ্য ছিল, অনেক দূরের লোকেরাও যেন ঘোষণা শুনতে পায়। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন মাজিদে ঘোষণা করেন,
وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ –
এবং মানুষের মধ্যে হজ্জের জন্য ঘোষণা প্রচার করো। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।
পৃথিবীর মধুরতম শব্দ-সুর নামাযের জন্য আযান প্রচলনের একটি সুন্দর ঘটনাপ্রবাহ রয়েছে। মহান আল্লাহ স্বপ্নযোগে তাঁর কয়েকজন পুণ্যাত্মা বান্দার হৃদয়ে ঢেলে দিয়েছিলেন এই পবিত্র ধ্বনি। অবচেতনে তাঁদের শিখিয়েছিলেন তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণার এই অভিনব পদ্ধতি। ইসলামের প্রাথমিক যুগে পবিত্র নগরী মক্কায় দ্বীন পালন ও প্রচারে নানা বাধা-বিপত্তি এবং প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান ছিল। তাই তখন আযান ছাড়াই নামায পড়া হতো। “আযানের প্রচলন হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায়হিজরতের পর। তিনি মক্কায়সালাত আদায়করতেন আযান ও ইকামাত ছাড়াই।”
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কী জীবনের অবসান ঘটিয়ে মদীনায় হিজরতের পর ইসলামের শুভ সূচনা হলেও প্রথম দিকে সংঘবদ্ধভাবে নামায আদায় করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই তিনি জামাআতের সাথে নামায আদায়ের জন্য মসজিদ নির্মাণ করেন। মুসলমানদের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য একত্রিত করতে তিনি একটি সুনির্দিষ্ট সংকেত নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং সাহাবায়ে কেরামের সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করেন। বিভিন্নজন বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন।
পরামর্শ সভায় ৪টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয় :
১. ঝা-া উড়ানো
২. আগুন প্রজ্জ্বলন
৩. শিঙ্গা বাজানো
৪. ঢোল বাজানো।
পরমার্শ সভার ৪টি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যাত হয়। কারণ, প্রথমত: ঝা-া উড়ালে সব মানুষ তা তাদের ঘর-বাড়ি বা দূর থেকে দেখতে পাবে না। দ্বিতীয়ত: আগুন প্রজ্বলন অগ্নি উপাসকদের কাজ। তৃতীয়ত: শিঙ্গা বাজানো খ্রিস্টানদের কাজ। আর চতুর্থত: ঢোল বাজানো ইয়াহুদীদের কাজ। ফলে, রাসুলুল্লাহ (সা.) উপরোক্ত মতামতগুলো গ্রহণ না করে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) বা হযরত ওমর (রা.)-এর প্রস্তাবের ভিত্তিতে বর্তমান প্রচলিত আযানের বিধান চালু করেন, যা তাঁর প্রিয় সাহাবীদের অনেকেই স্বপ্নযোগে অবগত হন। হাদীসে এসেছে,
أَخْبَرَنِي نَافِعٌ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، كَانَ يَقُولُ كَانَ الْمُسْلِمُونَ حِينَ قَدِمُوا الْمَدِينَةَ يَجْتَمِعُونَ فَيَتَحَيَّنُونَ الصَّلاَةَ، لَيْسَ يُنَادَى لَهَا، فَتَكَلَّمُوا يَوْمًا فِي ذَلِكَ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ اتَّخِذُوا نَاقُوسًا مِثْلَ نَاقُوسِ النَّصَارَى. وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ بُوقًا مِثْلَ قَرْنِ الْيَهُودِ. فَقَالَ عُمَرُ أَوَلاَ تَبْعَثُونَ رَجُلاً يُنَادِي بِالصَّلاَةِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ يَا بِلاَلُ قُمْ فَنَادِ بِالصَّلاَةِ ”.
নাফী’ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইব্নু ওমর (রা.) বলতেন যে, মুসলমানগণ যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন তাঁরা সালাতের সময় অনুমান করে সমবেত হতেন। এর জন্য কোনো ঘোষণা দেয়া হতো না। একদা তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। কয়েকজন সাহাবী বললেন, নাসারাদের ন্যায় নাকূস বাজানোর ব্যবস্থা করা হোক। আর কয়েকজন বললেন, ইয়াহুদীদের শিঙ্গার ন্যায় শিঙ্গা ফোঁকানোর ব্যবস্থা করা হোক। ওমর (রা.) বললেন, সালাতের ঘোষণা দেয়ার জন্য তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পার না? তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে বিলাল, উঠ এবং সালাতের জন্য ঘোষণা দাও।
আলোচ্য হাদীস থেকে জানা যায়, জামাতের জন্য সবাইকে একত্র করার পদ্ধতি নির্ধারণের প্রথম বৈঠকে রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত ওমরের প্রস্তাব পছন্দ করলেও আহ্বানের শব্দ কী হবে সে সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সে বৈঠক মুলতবি হয়ে যায়। সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে করতেই যার যার বাড়ি চলে যান এবং রাতের ঘুমে অনেকেই স্বপ্নযোগে আযানের শব্দগুলো সম্পর্কে অবগত হন। আর এ স্বপ্নটা আল্লাহর পক্ষ থেকে ছিল বলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন। হাদীসে এসেছে-
عن عبد الله بن زيد بن عبد ربه قال: “لما أمر رسول الله – صلى الله عليه وسلم – بالناقوس يعمل ليضرب به للناس لجمع الصلاة، طاف بي وأنا نائم رجل يحمل ناقوسًا في يده، فقلت: يا عبد الله، أتبيع الناقوس؟ قال: وما تصنع به؟ فقلت: ندعو به إلى الصلاة. قال: أفلا أدلك على ما هو خير من ذلك؟ فقلت: بلى قال: فقال: تقول: الله أكبر الله الي أخره و كذا الاقامة فلما أصبحت أتيت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فأخبرته بما رأيت ، فقال: إنها لرؤيا حق إن شاء الله ، فقم مع بلال فألق عليه ما رأيت فليؤذن به ، فإنه أندى صوتاً منك ، قال: فقمت مع بلال فجعلت ألقيه عليه ويؤذن به ، قال: فسمع بذلك عمر وهو في بيته فخرج يجر رداءه يقول: والذي بعثك بالحق لقد رأيت مثل الذي رأى ، قال: فقال النبي -صلى الله عليه وسلم-: فلله الحمد-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আবদে রাব্বিহী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের জন্য একত্র হতে যখন ঘন্টা বাজানোর নির্দেশ দিলেন (সেদিন) আমি স্বপ্নে দেখলাম- এক ব্যক্তি তার হাতে একটি ঘন্টা নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি এ ঘন্টাটা বিক্রি করবে? লোকটি বললো, তুমি এই ঘন্টা দিয়ে কি করবে? আমি বললাম, আমরা এই ঘন্টা বাজিয়ে মানুষদেরকে নামাযের জামাআতে আসতে আহ্বান জানাবো। সেই ব্যক্তি বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পন্থা বলে দিবো না? আমি বললাম, হাঁ অবশ্যই। তিনি বললেন, তুমি বলো, ‘আল্লাহু আকবার’ হতে শুরু করে আযানের শেষ বাক্য পর্যন্ত আমাকে বলে শোনালেন। এভাবে ইকামতও বলে দিলেন। ভোরে উঠে আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হলাম। যা স্বপ্নে দেখলাম, সব তাঁকে শোনালাম। তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ স্বপ্ন সত্য। এখন তুমি বেলালের সাথে দাঁড়িয়ে যা স্বপ্নে দেখেছো, তাকে বলতে থাকো। আর সে আযান দিতে থাকুক। কারণ, তার কণ্ঠস্বর তোমার চেয়ে জোরালো। অতএব, আমি বিলালের সাথে দাঁড়িয়ে গিয়ে তাকে বলতে লাগলাম। আর তিনি আযান দিতে থাকলেন। বর্ণনাকারী বলেন, নিজ বাড়িতে হযরত ওমর (রা.) আযানের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি চাদর টানতে টানতে বেরিয়ে একথা বলতে বলতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে আসলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি। তিনি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ।
অত্র হাদীসের আলোকে বলা যায়, রাসুলুল্লাহ্ (স.) এই আযান আল্লাহর পক্ষ হতে বলে মনে করে তা গ্রহণ করেন এবং সেই মোতাবেক আযান প্রচলন শুরু করেন। হযরত বেলাল হাবশী (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ও মুসলিম মিল্লাতের প্রথম মুয়ায্যিন। সেই সময়কাল থেকেই মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে আযান প্রচলিত হয়ে আসছে। পৃথিবীতে যতদিন চন্দ্র-সূর্য উদিত হবে ও অস্ত যাবে অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুয়ায্যিনের কণ্ঠে আযানের পবিত্র সুর ধ্বনিত হতে থাকবে।
আযানের গুরুত্ব ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
আযান মুসলিম মিল্লাতের জন্য এক বিরাট ঐক্যের প্রতীক। এটি আল্লাহর আনুগত্য স্বীকারপূর্বক পৃথিবীর সকল কাজ পরিত্যাগ করে মসজিদ পানে ছুটে যাবার জাতীয় আহ্বান। এ বাণীর মর্ম অনুধাবনকারীগণই সাফল্যের পথে মহান ¯্রষ্টার স্মরণে ধাবিত হয়। আল্লাহ্ তা’আলা এ সম্পর্কে পাক কুরআনে ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ –
হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে নামাযের জন্য আহ্বান করা হয় (আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে (নামাযের দিকে) ধাবিত হও। আর ক্রয়-বিক্রয় বর্জন করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।
আযানের আবেদন শাশ্বত। নিত্যদিন সকাল-সন্ধ্যা পৃথিবীর সর্বত্র সব সময় মসজিদের মিনারে মিনারে বাজে আযানের সুমধুর সুর। আযানের ধ্বনিতে জেগে ওঠে পৃথিবী, জেগে ওঠে মানবহৃদয়। আযানের মধুর বাণী শুনে পাপ-পঙ্কিলতার জীবন ছেড়ে আল্লাহর আনুগত্যের পথে ধাবিত হয় মানুষ। আযানের গুরুত্ব ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য উপলব্ধি করে মহাকবি কায়কোবাদ (১৮৫৮-১৯৫২ খ্রি.) ‘আযান’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছেন,
“কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।
নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।
নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়ায্যিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুগ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।”
আযান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার এক অপূর্ব দান ও বড় নেয়ামত। মানব সমাজে এর গুরুত্ব অত্যধিক। অন্তঃকরণ পরিশুদ্ধকরণের একটি বিশেষ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত এই আযান। আযানের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা হয়, কল্যাণের পথে আহ্বান জানানো হয়। আযানের ধ্বনি বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়-মনে সাড়া জাগায়, তাকে কল্যাণের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দেয়। নামাযের জামাআতে শরিক হওয়ার জন্য আযানের ভূমিকা অতুলনীয়। আযান শুনে যত বেশি লোক নামাযের জন্য আসবে, জামাআত তত বড় হবে, যা জামাআতের প্রধান লক্ষ্য। নামাযের মধ্যে শয়তান মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। উদ্দেশ্য হলো- মুমিনের নামায বিনষ্ট করার মাধ্যমে সাফল্যের পথে বাধা সৃষ্টি করা। কেননা, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। এ বিষয়টি কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।
আর এই প্রকাশ্য শত্রুকে তাড়ানোর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে আযান এমন এক শক্তিশালী অস্ত্র যে, এর শব্দ ধ্বনিত হওয়া মাত্র শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে। আযান শুনলে শয়তান পালায় আর নামাযের সময় হলে শয়তান আসে, এর দ্বারা বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, নামাযের চেয়ে আযানের মর্যাদাও কম নয়। যদিও আযান না দিলেও নামায হয়ে যায়, কিন্তু আযান দ্বারা যে মহা ফায়দা ও ফজীলত অর্জন করা যায়, তা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاَةِ أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهُ ضُرَاطٌ حَتَّى لاَ يَسْمَعَ التَّأْذِينَ، فَإِذَا قَضَى النِّدَاءَ أَقْبَلَ، حَتَّى إِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلاَةِ أَدْبَرَ، حَتَّى إِذَا قَضَى التَّثْوِيبَ أَقْبَلَ حَتَّى يَخْطُرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهِ، يَقُولُ اذْكُرْ كَذَا، اذْكُرْ كَذَا. لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ، حَتَّى يَظَلَّ الرَّجُلُ لاَ يَدْرِي كَمْ صَلَّى”.
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন যে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌছে যে, সে কয় রাকাআত সালাত আদায় করেছে, তা মনে করতে পারে না।
অত্র হাদীসের আলোকে বলা যায়, মানবকুলের বড়শত্রু শয়তানকে উচিত শিক্ষা দেয়ার হাতিয়ার হচ্ছে ঐশী শব্দবোমা আযান, যা পৃথিবীর সর্বত্র সর্বসময়ে ধ্বনিত হচ্ছে। তাই এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনুধাবন করে শয়তানের ধোঁকা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে পরিশুদ্ধ ইবাদত পালনের দিকে মনোনিবেশ করা অত্যন্ত জরুরী। তবেই নামাযের উদ্দেশ্য পূরণ হবে, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হতে পারবে মানবসমাজ। ত্রুটিমুক্ত নামায মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রেখে সাফল্যের পাথে ধাবিত করে। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ-
নিশ্চয়ই নামায সকল অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।
আযান ইসলামী ঐতিহ্যের প্রতীক, এ বিষয়টি চিত্রায়িত হয়েছে কবি আল-মাহমুদের ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ নামক কবিতায়। তিনি লিখেছেন,
“যেখানে আযান দিতে ভয় পান মোমেনেরা,
আর মানুষ করে মানুষের পূজা,
সেখানেই আসেন তিনি,
খিলজীদের সাদা ঘোড়ার সোয়ার।”
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন তার কবিতায় আযানের সুর শুনে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন এভাবে-
“মসজিদ হইতে আযান হাকিঁছে
বড় সকরুণ সুর
মোর জীবনে রোজ কেয়ামত
ভাবিতেছি কত দূর।।”
আযানের মর্মার্থ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অন্তিম তামান্নার কথা আবেগ মাখা আকুতি প্রকাশ করেছেন এভাবে-
“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই,
যেন গোরে থেকেও মোয়ায্যিনের আযান শুনতে পাই।”
আযানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- এর মাধ্যমে রক্তপাত হতে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। কেননা, আযান হচ্ছে ইসলামের এমন একটি অন্যতম নিদর্শন, যা মানবসমাজে মুসলিম জাতিসত্তার পরিচয় দান করে। বিশ্বজাহানের নবী, রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন, মুসলমানগণ কোনো যুদ্ধাভিযান পরিচালনাকালে যদি অপর প্রান্ত থেকে আযানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে রক্তপাত ঘটানো থেকে বিরত থাকতে হবে। হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا غَزَا بِنَا قَوْمًا لَمْ يَكُنْ يَغْزُو بِنَا حَتَّى يُصْبِحَ وَيَنْظُرَ، فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا كَفَّ عَنْهُمْ، وَإِنْ لَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا أَغَارَ عَلَيْهِمْ، قَالَ فَخَرَجْنَا إِلَى خَيْبَرَ فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ لَيْلاً، فَلَمَّا أَصْبَحَ وَلَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا رَكِبَ وَرَكِبْتُ خَلْفَ أَبِي طَلْحَةَ، وَإِنَّ قَدَمِي لَتَمَسُّ قَدَمَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم. قَالَ فَخَرَجُوا إِلَيْنَا بِمَكَاتِلِهِمْ وَمَسَاحِيهِمْ فَلَمَّا رَأَوُا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالُوا مُحَمَّدٌ وَاللَّهِ، مُحَمَّدٌ وَالْخَمِيسُ. قَالَ فَلَمَّا رَآهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، خَرِبَتْ خَيْبَرُ، إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ”.
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই আমাদের নিয়ে কোনো গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতেন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করতেন না; বরং লক্ষ্য রাখতেন, যদি তিনি আযান শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হতে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে অভিযান চালাতেন। আনাস (রা.) বলেন, আমরা খায়বারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম এবং রাতের বেলায় তাদের সেখানে পৌঁছলাম। যখন প্রভাত হলো এবং তিনি আযান শুনতে পেলেন না; তখন আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ার হলেন। আমি আবু তালহা (রা.)-এর পিছনে সওয়ার হলাম। আমার পা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পায়ের সাথে লেগে যাচ্ছিল। আনাস (রা.) বলেন, তারা তাদের থলে ও কোদাল নিয়ে বেরিয়ে আমাদের দিকে আসলো। হঠাৎ তারা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দেখতে পেলো, তখন বলে উঠল, ‘এ যে মুহাম্মাদ, আল্লাহ্র শপথ! মুহাম্মাদ তাঁর পঞ্চবাহিনীসহ!’ আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের দেখে বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কওমের আঙ্গিণায় অবতরণ করি, তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হয় মন্দ।’
অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম একটি শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দের ধর্ম। এ ধর্মে নেই কোনো হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিশোধ পরায়ণতা। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো- রক্তপাত ঘটানো থেকে বিরত থাকা। কেননা ইসলাম রক্তপাতকে নিরুৎসাহিত করেছে। এ ক্ষেত্রে আযান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এর মাধ্যমে ইসলাম যে একটি উদার, মানবতার ধর্ম ও শান্তিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, তা বিশ্বের দরবারে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে ।
মুয়ায্যিনের মর্যাদা:
মসজিদের মিনার হতে আযানের বাক্যগুলো যার কণ্ঠে সুরণিত হয় অর্থাৎ যে ব্যক্তি আযান দেয়, ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় তাকে মুয়ায্যিন বলা হয়। আযান দেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি আমল। কেননা, ¯্রষ্টার দিকে আহ্বান করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ‘আযান’, যে কাজটি মুয়য্যিনগণই করে থাকেন। আর মহান আল্লাহ তাদেরকে উত্তম মর্যাদাবান হিসেবে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কুরআনের বাণী-
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ –
তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা কার? যে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি মুসলিমদের একজন ।
পৃথিবীর আকাশ-বাতাস মুখরিত করে যারা পবিত্র ধ্বনির মাধ্যমে মানুষকে আহ্বান জানাবে, কেয়ামতের দিন তারা (মুয়ায্যিনগণ) বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবেন। হাদীসে এসেছে-
عَنْ مُعَاوِيَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ্রالْمُؤَذِّنُونَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِগ্ধ.
হযরত মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি। ‘কিয়ামতের দিন লোকদের মধ্যে মুয়ায্যিনগণের ঘাড়সর্বাপেক্ষা লম্বা হবে।’ অর্থাৎ তাদের মর্যাদা সর্বাপেক্ষা বেশি হবে।
মুয়ায্যিনদের জন্য বিশেষ মর্যাদার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ মর্যাদার কারণ হলো তারা মুসলমানগণের আমানতদার। এ আমানতের গুরুত্ব এত বেশি যে, তাদের সঠিক সময়ে আযান দেয়ার কারণে মুক্তাদীগণ জামাআতে উপস্থিত হতে পারে এবং সিয়াম পালনকারীগণ সময়মত ইফতার করে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাসিল করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য দোয়া করেছেন। হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ্রالْإِمَامُ ضَامِنٌ، وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ، اللَّهُمَّ أَرْشِدِ الْأَئِمَّةَ، وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَগ্ধ.
হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমামরা হলেন উম্মতের দায়িত্বশীল আর মুয়ায্যিনরা আমানতদার। হে আল্লাহ! আপনি ইমামদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন আর মুয়ায্যিনদের ক্ষমা করে দিন।’
বর্তমান সময়ে মানুষ আযান দেয়াকে সাধারণ কাজের মতই মূল্যায়ন করে থাকে; কিন্তু এর মর্যাদা এবং গুরুত্ব এতই বেশি যে, তা অনুধাবন করতে পারলে তারা লটারীর মাধ্যমে আযান দেয়া শুরু করত। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا”.
হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যদি মানুষেরা আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারের ফজীলত সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করত, তাহলে তার জন্য তারা লটারীর ব্যবস্থা করত। আর যদি তারা প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের ফজীলত জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে দিত। আর যদি তারা এশা এবং ফজর সালাতের ফজীলত সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করত, তাহলে তা হাসিলের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসত।
মুয়ায্যিনের কণ্ঠে ধ্বনিত আযানের আওয়াজ যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এবং আল্লাহর মাখলুকাতের ভিতর যত সৃষ্টি এই সুমধুর ধ্বনি শুনবে, শেষ বিচারের দিনে আযান প্রদানকারীর পক্ষে সাক্ষীর পাল্লা ততবেশি ভারী হবে। সেদিন চন্দ্র-সূর্য, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, গাছ-পালা, পশু-পাখি এবং প্রত্যেক প্রাণী ও নিষ্প্রাণ দুনিয়াতে যাদের কাছে মুয়ায্যিনের আযান পৌঁছত, সবাই তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। আর মুয়ায্যিনের জন্য রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত, সুউচ্চ মর্যাদা ও জান্নাতের সুসংবাদ। এর স্বপক্ষে হাদীসের বাণী-
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي صَعْصَعَةَ الأَنْصَارِيِّ، ثُمَّ الْمَازِنِيِّ عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ قَالَ لَهُ “ إِنِّي أَرَاكَ تُحِبُّ الْغَنَمَ وَالْبَادِيَةَ، فَإِذَا كُنْتَ فِي غَنَمِكَ أَوْ بَادِيَتِكَ فَأَذَّنْتَ بِالصَّلاَةِ فَارْفَعْ صَوْتَكَ بِالنِّدَاءِ، فَإِنَّهُ لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ وَلاَ إِنْسٌ وَلاَ شَىْءٌ إِلاَّ شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ”. قَالَ أَبُو سَعِيدٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তাকে তার পিতা সংবাদ দিয়েছেন যে, আবু সাঈদ খুদরী (রা.) তাঁকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বক্রী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালোবাসো। তাই তুমি যখন বক্রী নিয়ে থাকো বা বন-জঙ্গলে থাকো এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন উচ্চকণ্ঠে আযান দাও। কেননা, জীন্, ইনসান বা যে কোনো বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়ায্যিনের আওয়াজ শুনবে, সে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবু সাঈদ (রা.) বলেন, এ কথা আমি আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট শুনেছি।
অপর একটি হাদীসে বর্ণিত আছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রالْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَهُ مَدَى صَوْتِهِ، وَيَشْهَدُ لَهُ كُلُّ رَطْبٍ وَيَابِسٍ. وَشَاهِدُ الصَّلَاةِ يُكْتَبُ لَهُ خَمْسٌ وَعِشْرُونَ صَلَاةً، وَيُكَفَّرُ عَنْهُ مَا بَيْنَهُمَاগ্ধ. (رواه احمد و ابو داؤد و ابن ماجه)
হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুয়ায্যিনের আযান ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সকল বস্তু তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে। ঐ আযান শুনে যে ব্যক্তি সালাতে যোগ দিবে, সে ২৫ সালাতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। মুয়ায্যিনও উক্ত মুসল্লির সমপরিমাণ সওয়াব পাবে এবং তার দুই আযানের মধ্যবর্তী সকল (সগীরা) গুনাহ মাফ করা হবে’। (আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
মুয়ায্যিনদের জান্নাতের সুসংবাদ প্রদানের ঘোষণা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ্রمَنْ أَذَّنَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً ; وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِينِهِ فِي كُلِّ يَوْمٍ سِتُّونَ حَسَنَةً، وَلِكُلِّ إِقَامَةٍ ثَلَاثُونَ حَسَنَةًগ্ধ.
হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বার বছর যাবৎ আযান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তার প্রতি আযানের জন্য ৬০ নেকি ও একামতের জন্য ৩০ নেকি লেখা হয়’।
কুরআন-হাদীসের আলোকে মুয়ায্যিনের মর্যাদা প্রমাণিত। আযান দেয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন মর্যাদার অধিকারী হওয়ার যায়, অন্যদিকে দিনে ও রাতে অন্যদের চেয়ে অধিক সময় ইবাদত-বন্দেগী করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যার ফলে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠে। অতএব, মুয়ায্যিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনুধাবনপূর্বক শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে এ বরকতপূর্ণ আমলের সহিত সম্পৃক্ত করে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহ লাভের মাধ্যমে সফলতার শীর্ষে উন্নীত হওয়া আমাদের কর্তব্য।
আযানের জবাবের গুরুত্ব
আযানের জবাব দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি এবাদত। যখন আযান হয়, তখন কুরআন তিলাওয়াত বন্ধেরও নির্দেশ এসেছে। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী, যে ব্যক্তি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত আযানের জবাব দেবে, আযানের পর দরূদ ও দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাকে দুনিয়ার জীবনে পরিশুদ্ধ করবেন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামতের ময়দানে সুপারিশ করে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। একজন মুসলমানের জন্য এটি অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। ইসলামী শরীয়তে আযানের জবাব দেয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আযানের গুরুত্ব ও এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, আযান শোনার সাথে সাথে এর জবাব দেওয়াটাও জরুরী। আর এই জবাব দেওয়ার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে মুয়ায্যিনের আযান বলার সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতারও তা উচ্চারণ করা। আর অপরটি হচ্ছে আযান শুনে জামাআতে উপস্থিত হওয়া। হাদীসে মুয়ায্যিনের সাথে সাথে আযানের শ্রোতাকে এর জবাব দেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে তার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়টির দলিল উপস্থাপনে নি¤েœ কয়েকটি হাদীস উপস্থাপন করা হলো-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا مِثْلَ ما يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ”.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনতে পাও, তখন মুয়ায্যিন যা বলে তোমরাও তার অনুরুপ বলবে।
অপর একটি হাদীসে এসেছে-
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، قَالَ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ يَحْيَى، نَحْوَهُ. قَالَ يَحْيَى وَحَدَّثَنِي بَعْضُ، إِخْوَانِنَا أَنَّهُ قَالَ لَمَّا قَالَ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ. قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ. وَقَالَ هَكَذَا سَمِعْنَا نَبِيَّكُمْ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ.
ইসহাক ইবন রাহওয়াই (র.) … ইয়াহইয়া (র.) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। ইয়াহইয়া (র.) বলেছেন, আমার কোনো ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুয়ায্যিন যখন “হাইয়া ‘আলাস সালাহ” বলল, তখন তিনি (মুআবিয়া (রা.) “লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বললেন। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের নবী (সা.) কে আমরা এরুপ বলতে শুনেছি।
নি¤েœাক্ত হাদীসে আযান শোনার সঙ্গে সঙ্গে মুয়ায্যিনের সাথে জবাব দেয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ ; فَقَالَ أَحَدُكُمُ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ; قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ. ثُمَّ قَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، قَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، ثُمَّ قَالَ: حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، قَالَ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، ثُمَّ قَالَ: حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، قَالَ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ. ثُمَّ قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ،قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ ثُمَّ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ; قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِنْ قَلْبِهِ، دَخَلَ الْجَنَّةَগ্ধ.
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন মুয়ায্যিন আযানের সময় ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলবে, তখন তোমরাও ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলবে। অতঃপর মুআয্যিন যখন ‘আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, তখন তোমরাও ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে। অতঃপর মুয়ায্যিন যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলবে, তখন তোমরাও ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলবে। অতঃপর মুয়ায্যিন যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ্’ বলবে, তখন তোমরা বলবে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। অতপর মুয়ায্যিন যখন ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলবে, তখন তোমরা বলবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। অতঃপর মুয়ায্যিন যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, তখন তোমরা ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, অতঃপর মুয়ায্যিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, তখন তোমরাও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে। তোমরা যদি আন্তরিকভাবে এরূপ বলো, তবে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
মুমিন জীবনের সফলতা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনপূর্বক পরকালে জান্নাত লাভ। যারা আযান শুনে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে হাদীসে বর্ণিত পন্থায় এর পরিপূর্ণ জবাব প্রদান করবে, তাদের জন্য প্রিয়নবী (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: ্রكُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَامَ بِلَالٌ يُنَادِي، فَلَمَّا سَكَتَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ هَذَا يَقِينًا دَخَلَ الْجَنَّةَগ্ধ
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে ছিলাম, অতঃপর বেলাল (রা.) আযান দিলেন। যখন বেলাল চুপ করলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে আযানের জবাব দিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’
উপরোক্ত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করে বাস্তবতার নীরিখে বলা যায়, আযানের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অনুধাবন করে এর জবাব দিলে হৃদয়ে এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভূত হয়, ঈমানী চেতনা জাগ্রত হয়, আল্লাহর স্মরণে মসজিদপানে ছুটে যেতে অনুপ্রাণিত করে এবং পাপমুক্ত থেকে ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। তাইতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বশরীরে আযানের জবাব দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে তার তুলির ছোয়ায় লিখেছেন-
“মসজিদে ঐ শোনরে আযান,
চল নামাযে চল।
দুঃখে পাবি সান্ত¡না তুই
বক্ষে পাবি বল।”
এ জাবাব দেয়ার মাধ্যমে মুমিনের হৃদয়-মন প্রফুল্ল হয়। এতে করে আল্লাহ তা’আলার নিকট থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর রেজাম-ি হাসিল করার মাধ্যমে দুনিয়াবী কল্যাণ ও আখেরাতের সফলতা লাভের পথ সুগম হয়। তাই সকল মুমিন-মুসলমানের দায়িত্ব হলো- আযান শোনার সাথে এর জবাব প্রদান করা এবং মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা।
আযানের দু‘আর গুরুত্ব
ইসলামী সমাজে মুমিন জীবনের প্রতিটি পরতে প্রভাব বিস্তারের জন্য আযান যেভাবে গুরুত্ব বহন করে, তেমনি তার জবাব পরবর্তী দোয়ার গুরুত্বও অপরিসীম। আযান মানবাত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, এর সুর শ্রবণকারী সকল সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে। এ ঐশী বাণী মানুষকে আল্লাহর স্মরণে ধাবিত করে। ফলে, কলুষমুক্ত করে জীবন। মানুষের বিপদাপদ ও সকল অশুভ থেকে মুক্তি এবং কল্যাণ প্রাপ্তির অন্যতম মাধ্যম দোয়া। মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কবুল হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু সময়ের কথা হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে। আর আযান পরবর্তী সময়ের গুরুত্ব এতই বেশি যে, মহান আল্লাহ পাক এ সময়ে তাঁর বান্দার কোনো প্রার্থনা ফিরিয়ে দেন না; বরং তা গ্রহণ করেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ্রلَا يُرَدُّ الدُّعَاءُ بَيْنَ الْأَذَانِ وَالْإِقَامَةِগ্ধ. (رواه ابو داؤد و الترمذي)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু‘আ প্রত্যাখ্যাত হয় না অর্থাৎ কবুল হয়। (আবু দাউদ, তিরমিযি)
আযান শেষে দু‘আ করা সুন্নাত। আযান শেষে দরূদ শরীফ পড়েনি¤েœাক্ত দোয়া পাঠ করতে হয় :
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدَاً الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحْمُودَاً الَّذِي وَعَدْتَهُ وَارْزُقْنَا شَفَاعَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَتِه إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ-
আযান ও তার জবাব পরবর্তী দু‘আ পাঠকারীর জন্য বিশেষ মর্যাদা ও পুরস্কার রয়েছে। দু‘আ হচ্ছে বান্দা ও তার রবের মাঝে কথা বলার অন্যতম মাধ্যম। আর দু‘আ কবুলিয়াতের সময়ে এ দু‘আ করার মাধ্যমে বান্দা তার রবের নিকট থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ লাভ করে এবং আল্লাহর প্রিয় হাবীবের প্রশংসা করার মাধ্যমে খোদার সন্তুষ্টি ও তাঁর রহমত লাভপূর্বক রাসুলের শাফা‘আত লাভ নিশ্চয়ন করে। কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে আল্লাহ তা‘আলার নিকট একমাত্র শাফাআতকারী হবেন তাঁর পেয়ারা হাবীব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। আর তিনিই ঘোষণা দিয়েছেন, আযানের দু‘আ পাঠকারী তাঁর শাফাআতপ্রাপ্ত হবেন। এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ ”.
হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে দু‘আকরে : “আল্লাহুম্মা রব্বা হা’যিহিদ দা’ওয়াতিত তা’ম্মাহ ওয়াস্সালা’তিল ক্বা’য়িমাহ, আ’তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাহ, ওয়াব’আছহু মাকা’মাম মাহ্মূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ”। -কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।
عن سعد بن أبي وقاص عن رسول الله صلي الله عليه و سلم أنه قال من قال حين يسمع المؤذن اشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له و أن محمدا عبده و رسوله رضيت بالله ربا و بمحمد رسولا و بالاسلام دينا غفر له ذنبه-
হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আযান শ্রবণের পর নিম্নের দু‘আটি পাঠ করে, তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। অর্থাৎ, বলবে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাই নেই, সে একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল। আমি সন্তুষ্ট আল্লাহকে রব (প্রভু) হিসেবে পেয়ে, মুহাম্মদকে রাসুল হিসেবে পেয়ে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে।
عن عبدالله بن عمرو بن العاص أنه سمع النبي صلي الله عليه و سلم يقول:إذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول، ثم صلوا عليّ فإنه من صلى علي صلاة صلى الله عليه بها عشرًا، ثم سلوا الله لي الوسيلة، فإنها منزلة في الجنة لا تنبغي إلا لعبد من عباد الله وأرجو أن أكون أنا هو، فمن سأل لي الوسيلة حلت له الشفاعة.
আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুআয্যিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে, তাই বলবে। তারপর আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ, যে আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তা’আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দু‘আকরবে। ওসীলা হলো জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোনো এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশা করি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দোয়া করবে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
মহান রাব্বুল আলামীন সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। আর তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদেরকে বাছাই করে ধন্য করেছেন। দুনিয়ার জীবন শেষে কিয়ামত পরবর্তী শেষ বিচার দিবসের কঠিন মুহূর্তে একমাত্র শাফাআতকারী হবেন তিনি। আর তাঁর প্রশংসা করার একটি বিশেষ মাধ্যম হচ্ছে আযানের দু‘আ। এ দু‘আর মাধ্যমে রাসুলের সাথে তাঁর উম্মতের ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং সফলতা লাভের দার উন্মোচিত হয়। অতএব, উল্লেখিত হাদীসগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এর উপর আমল করা অতীব জরুরী।
শেষ কথা :
আযান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরধ্বনি ও আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামী নিদর্শন বা প্রতীক। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য আযান প্রচারিত হয়। আযানের ধ্বনি মুমিনের মর্মে মর্মে বেজে ওঠে। মুয়ায্যিনের কণ্ঠে আযানের বাণীগুলো মহান আল্লাহর মহিমা ও বড়ত্বের ঘোষণা। আযান নামাযের জন্য ডাক দেয়। স্মরণ করিয়ে দেয় পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনতরী বেয়ে পরকালের যাত্রী হবার।
বিশ্বলোকের সর্বসময়ের রণীত ধ্বনি হচ্ছে আযান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের গণিতশাস্ত্রবিদগণের গবেষণা অনুযায়ী পৃথিবীতে দিন-রাতের এমন কোনো মুহূর্ত নেই যে আযানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত না হয়। আযান কল্যাণের পথে মানুষকে আহ্বান করে। ফজরের পবিত্র আযানের আওয়াজে পৃথিবীর ঘুম ভাঙে, ঘুম ভাঙে মুসলমানের। আযানের মাধ্যমে তাদের তাওহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য এবং নামায ও কল্যাণের আহ্বানে দিন শুরু হয়। ঘোষণা করা হয়, হে মানব! ওঠো, ঘুমের চেয়ে নামায উত্তম। শুধু স্রষ্টার ইবাদত নয়, জাগতিক বিচারেও ফজরের আযানের এই আহ্বান কল্যাণের বাহক। আধুনিক যুগের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সকালের নির্মল বায়ু, সূর্যালোক ও কায়িক পরিশ্রমকে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে মত দিয়েছেন। এ সকল বিচারে আযান এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আযানের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মর্মার্থ।
জাগরণের প্রতীক আযানের সুর মহাকল্যাণের হাতছানি দেয়। ডেকে নিয়ে যায় সাফল্যের পথে। আযানের মৌলিক আবেদন হচ্ছে- জামাআতের সাথে নামায আদায় করা। নবী করিম (সা.)-এর সাহাবায়ে কেরাম আযানের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্যের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে এর যথার্থ মূল্যায়ন করে সাফল্যের পথ যাত্রী হয়েছেন। অতএব, আমাদের সকলের উচিত, আযানের গুরুত্ব ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনুধাবন করে এর যথার্থ মূল্যায়নপূর্বক নিজেদের জীবন সার্থক ও সাফল্যম-িত করা। মহান আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন ॥