বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

আধ্যাত্মিকতার পূর্ণজাগরণ কেন জরুরী?

আধ্যাত্মিকতা কি? আর বর্তমানে এর প্রয়োজনই বা কি? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের চারপাশের বর্তমান অবস্থার দিকে একটু তাকাতে হবে। আজ আমাদের চারিদিকে এক অশান্তির পরিবেশ। সর্বত্রই বীভৎস তান্ডবে মেতে উঠেছে সভ্য মানুষের দল। মানুষ হিংসায়, লালসায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। মানুষের অন্তরস্থিত শয়তানি শক্তি যেন আবার বীরবিক্রমে জেগে উঠেছে আর তারই দাপট চলছে সর্বত্র।

সাধারণ মানুষ এক চরম দুঃখ, হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অভাবনীয় প্রগতি, উন্নতির যুগেও মানুষ নিজেকে কত অসহায় বোধ করছে। ব্যক্তি জীবনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অনৈক্য, বিবাদ, মতভেদ সবকিছুই যেন চরমসীমায় পৌঁছেছে। আর সর্বক্ষেত্রে সংশয়, নিরুৎসাহ, অবিশ্বাস, আদর্শগত উৎসাহের অভাব, ভবিষ্যত সম্বন্ধে আশাভঙ্গ- এই হলো তার সাধারণ লক্ষণ। তাই এখন একটি বিরাট প্রশ্ন হলো মানবজাতির গন্তব্য কোথায়?

এই দুঃখ, দুর্দশা ও অশান্তির মধ্যে তার জীবনের লক্ষ্য কি? বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় মত এই জ্বলন্ত সমস্যার সমাধান বিভিন্ন সময়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধ থেকে গেছে এবং তা কেবলমাত্র সাময়িকভাবে সফল হয়েছে। মানব সমাজের সমস্যা সকল এখন যেরূপ জটিল হয়েছে তাতে মন-বুদ্ধির দ্বারা সে সবের সমাধান আর সম্ভব নয়- চাই অন্তরস্থিত চেতনার জাগরণ।

পৃথিবীর বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মহান চিন্তা ও অনুভবের প্রদীপ প্রজ্বলিত করে জগতে আলো বিচ্ছুরিত করেছেন। তাদের চিন্তা ও ভাবধারায় পৃথিবীতে এসেছে বহু পরিবর্তন, বিপ্লব, প্রতিবিপ্লব। মানুষের দৃষ্টি ও সৃষ্টি হয়েছে অধিকতর প্রসারিত, বিস্তৃত ও সূক্ষ্ম। চিন্তাসম্পদে জগতের জ্ঞানভান্ডার হয়েছে নানাভাবে ঋদ্ধ।

কিন্তু ইন্দ্রিয়াতীত যে সত্য, সেই সত্যের নাগাল তারা পাবেন কোথা থেকে? কিন্তু সেই সত্যের দিশা ছাড়া আমরা আমাদের জীবনের উৎস ও পরিণতিকে ব্যাখ্যা করতে পারি না, ফলে কর্তব্য ও উদ্দেশ্যকেও যথার্থতায় অবলোকন করতে পারি না। সঠিক পথ যদি না থাকে, গন্তব্য অধরা থাকবেই। দৃষ্টিভঙ্গির সঠিকতা যদি না থাকে, সাফল্য ও বিজয় নিশ্চিত হবে না।

ইসলাম তাই সকল কালের সকল পয়গম্বরদের শিক্ষা ও পয়গামকে আমাদের সামনে হাজির করেছে। যার সারবস্তু ও চূড়ান্ত উপসংহার হচ্ছে আল কুরআন।

সেখানে মানুষের জ্ঞানলাভের সহজাত উপায়ের স্বীকৃতি রয়েছে। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা, বাস্তব যাচাই-বিশ্লেষণ, জ্ঞানীয় প্রথা, প্রজ্ঞা ইত্যাদিকে অব্যাহতভাবে উদ্বুদ্ধ ও প্রণোদিত করেছে। যা মূলত দার্শনিকদের বিচরণের দুনিয়া। কিন্তু সেই দুনিয়ার ওপরে মোকাশাফা বা অন্তর্চক্ষু উন্মোচন, ইলহাম বা অন্তরে অবতরণকৃত অভিজ্ঞান, মুশাহাদা বা আধ্যাত্মিক প্রত্যক্ষণের মতো স্তরও নির্দেশ করেছে। এর মাধ্যমে অতীন্দ্রিয় জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অর্জিত হয়। কিন্তু এগুলোও সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। সংশয়ের ঊর্ধ্বে যে সুনিশ্চিত সত্য, সে হচ্ছে ওহি। আল কুরআন সেই ওহির অবিকৃত ও সর্বশেষ, চূড়ান্ত হেদায়েত।

আমরা ইতিহাসের গতিপথে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এটি ক্রমবর্ধমানভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ধ্যান এবং মননশীলতা আধ্যাত্মিক অনুসারীদের জন্য কেবল বিলাসিতা বা রহস্যময় অনুশীলন নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনে মেডিটেশন একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে গেছে।

ক্রমাগতভাবে ক্রমবর্ধমান স্ট্রেস এবং সংযোগ বিচ্ছিন্নতার মাত্রার সাথে সাথে ধ্যান এবং মননশীলতা চর্চা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে উন্নত করে তোলে এবং এটি একটি মৌলিক অনুশীলন যার উপর জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব নির্মিত হয়।
মানুষ হলো এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বিস্ময়, কিন্তু সে নিজের মূল্য সম্পর্কে অমনোযোগী এবং বিশ্বাসের অভাবের কারণে স্বজাত-রহস্যে অজ্ঞাত। মানুষ ভেতরে ও বাইরে রহস্যময় এক মহা-বৈশ্বিক উপাদানের প্রতিনিধি। যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে গভীর চিন্তা করে, অর্থাৎ ধ্যানমগ্ন হয় তখনই সে বিস্ময়কর চোখধাঁধানো রহস্যের সন্ধান পায়। মানুষের আত্মার রহস্য ও এর জ্ঞাত-অজ্ঞাত শক্তিসমূহ উন্মোচন করতেই খাজা’জী উদ্ভাবিত ‘সুফি মেডিটেশন’ অপরিহার্য।
কুরআনে উল্লেখ আছে- ‘সেদিন তো ধন-সম্পদ বা সন্তান-সন্ততি কারও কোনো কাজে লাগবে না; তবে (তার কথা আলাদা) যে একটি সুস্থ হৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে হাজির হবে।’ সূরা আশ শুআরা: ৮৮-৮৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *