
|| মোঃ আরিফুল ইসলাম | নিজস্ব প্রতিনিধি ||
বাংলাদেশে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাও একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেখানে কারিগরি ও দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে, সেখানে মাদ্রাসাগুলোতে এই পরিবর্তন কতটা ঘটছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বর্তমানে দেশের অনেক মাদ্রাসায় সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি বিষয়ে পাঠদান শুরু হলেও, বাস্তবভিত্তিক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ এখনো সীমিত। ছাত্ররা যেমন বলছেন, যুবসমাজের কর্মদক্ষতা ও আত্মনির্ভরতার বিষয়টি এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
রাজধানীর বকশীবাজারে অবস্থিত দেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা। এখানে হাজারো শিক্ষার্থী পড়ছে কামিল, অনার্স ও স্নাতক পর্যায়ে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করছেন পাঠ্যক্রমে কিছু আধুনিক বিষয় যুক্ত হলেও, দক্ষতা অর্জনের সুযোগ এখনো সীমিত।
ঢাকা আলিয়ার কামিল শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, আমরা যারা মাদ্রাসায় পড়ছি, তাদের একটি বড় অংশের স্বপ্ন থাকে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সমাজে অবদান রাখার। তবে এখন সময় পাল্টেছে। শুধু কুরআন, হাদিস ও ফিকহ জানলেই হবে না, আমাদের আইটি জানতে হবে, নেতৃত্ব দিতে জানতে হবে, এমনকি আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাও অর্জন করতে হবে।
ইমরান মনে করেন, পাঠ্যক্রমে কিছু আধুনিক বিষয় থাকলেও বাস্তবে সেই শিক্ষার প্রয়োগ বা চর্চা খুবই সীমিত। আমরা কম্পিউটার শিক্ষা বই হিসেবে পড়ি, কিন্তু হাতে কম্পিউটার ব্যবহার করার সুযোগই নেই অনেক সময়। এই গ্যাপ থাকলে বাস্তব জগতে টিকে থাকা কঠিন।
এ প্রতিষ্ঠানের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আল আমিন জানান, আমি চাই উদ্যোক্তা হতে। একটা স্টার্টআপ দিতে চাই প্রযুক্তি নিয়ে। কিন্তু যেই জায়গায় আমরা পড়ছি, সেখানে এই ধরনের চিন্তা বা প্রস্তুতির সুযোগ খুব সীমিত। কারিগরি বা সফট স্কিল শেখানো হয় না, অথচ বাস্তব জীবনে সেটাই দরকার।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেখানে স্টার্টআপ বা ফ্রিল্যান্সিং করছে, আমরা তখনো টাইপ শেখার জায়গা খুঁজি। অনেকেই বাইরে গিয়ে নিজের খরচে কোর্স করে, কিন্তু সবাই তো পারে না। আমরা যদি মাদ্রাসা থেকেই অন্তত মৌলিক দক্ষতা পেতাম তাহলে পিছিয়ে পড়তাম না।
আল আমিন মনে করেন, মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে ইসলামি আদর্শের সঙ্গে আধুনিক বাস্তবজ্ঞান ও উদ্যোক্তা হওয়ার শিক্ষা একসঙ্গে থাকতে পারে। ধর্মীয় শিক্ষা আমাদের আদর্শ শেখায়, কিন্তু জীবনের প্রয়োগ শেখায় দক্ষতা। এই দুইয়ের সমন্বয়ই দরকার।
তিনি বলেন, ঢাকা আলিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানে সুযোগ থাকা উচিত কোডিং শেখার, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক ডিজাইন কিংবা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো ট্রেনিংয়ের। মাদ্রাসা শিক্ষাকে যদি সমান গুরুত্ব দিতে চাই, তাহলে শিক্ষার্থীদেরও আধুনিক দক্ষতায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
এ ধরনের মতামত এখন শুধু ছাত্রদের মধ্যে নয়, সকলের মনে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ উচ্চশিক্ষিত হলেও, তারা নানা কারণে প্রতিযোগিতামূলক চাকরি ও উদ্যোক্তা ক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ঘাটতি।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সম্প্রতি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে কিছু আধুনিক বিষয় যুক্ত করেছে যেমন, কম্পিউটার শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা ও ব্যবসায় উদ্যোগ। তবে বাস্তবে এসব বিষয়ের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং দক্ষতা অর্জনের পরিবেশ তৈরি এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানে চ্যালেঞ্জের মুখে।
বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য যুবদের কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার দক্ষতা অর্জন এই প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসা শিক্ষাকে নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে উঠে আসা এই চাহিদা যদি নীতিনির্ধারকরা শোনেন তবে বদলে যেতে পারে একটি বড় জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ।