শুক্রবার, অক্টোবর ১০

অপহরণের প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর খুলনার খাদ্য পরিদর্শককে উদ্ধার

|| শেখ শাহরিয়ার | খুলনা প্রতিনিধি ||

নদী পথে ট্রলার যোগে অস্ত্রের মুখে অপহরণ, পরিত্যক্ত ঘরে আটকে রেখে নির্মম মারধর এবং পাঁচ লাখ টাকার বেশি চাঁদার দাবি ,এমন এক ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন খুলনার খাদ্য পরিদর্শক সুশান্ত কুমার মজুমদার। গত রবিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর ৪নং ঘাট এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন ব্যক্তি।

অপহরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। পুলিশের একাধিক টিম সাড়ে ৫ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে খুলনার তেরখাদা উপজেলার আজগড়া বিআরবি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় সুশান্তকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর শরীরে চোখে, পায়ে ও বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে। বাঁ চোখ ফুলে আছে, পায়ের ওপর রয়েছে কালচে দাগ।

ঘটনার বর্ণনায় সুশান্ত কুমার বলেন, ‘কয়েকজন জাপটে ধরে আমাকে একটি ট্রলারে তুলে ফেলে। এরপর শুরু হয় মারধর। চোখ বেঁধে, পা চেপে ধরে আমাকে নিয়ে যায় একটি ঝুপড়ি ঘরে। সেখানে অস্ত্র ঠেকিয়ে দাবি করা হয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হলেও স্ত্রীর নম্বরে কল ঢুকছিল না। পরে ঘাটের এক ঠিকাদার সোহাগের নম্বরে ফোন করতে বাধ্য করা হয়।

পরে মোটরসাইকেলে করে তাঁকে একটি স্কুলের পাশে এনে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। যাওয়ার সময়ও চোখ বাঁধা ও মুখে গুঁজে দেওয়া হয় ন্যাকড়া। একপর্যায়ে মারধরের পর বিকাশ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়।

খাদ্য পরিদর্শক সুশান্ত কুমার সন্দেহ করছেন, রেজা ও বাবু নামের দুই ব্যক্তি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। রেজা আগে তাঁর কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা ব্ল্যাকমেল করে নিয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি। বাবু নামের এক ব্যক্তি আবার তাকে গত শুক্রবার এক “লিডারের” সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রেজা শেখপুরা এলাকার বাসিন্দা এবং তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা তোলার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বলছে, রেজা নিজেকে জেলা যুবদলের এক নেতার ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার সানওয়ার হোসাইন (মাসুম) জানান, অপহরণের খবর পাওয়ার পর খুলনা ও তেরখাদা থানার একাধিক ইউনিট রাতেই অভিযান চালায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে অপহরণকারীরা সুশান্তকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ এখন পর্যন্ত সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছে, যার মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সুশান্তর স্ত্রী মাধবী রানী মজুমদার জানান, ঘটনার রাতে প্রথমে ২০ হাজার এবং পরে ২৫ হাজার টাকা পাঠানো হয় অপহরণকারীদের মোবাইলে। তবে সুশান্ত উদ্ধার হওয়ার পর সেসব টাকা অপহরণকারীরা তুলতে পারেনি। তিনি জানান, ‘আমার স্বামী কারও সঙ্গে কোনো বিরোধে ছিলেন না। রেজা ও বাবুর আগেও আমাদের কাছে চাঁদা চেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করার কাজ চলছে। অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *