
|| ধর্ম ডেস্ক ||
শীতকালকে মুমিনের ইবাদতের জন্য এক অনন্য সুযোগ বা ‘বসন্তকাল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাড়কাঁপানো ঠান্ডার কারণে অলসতা আসা স্বাভাবিক হলেও, ইসলামে এই সময়ে ইবাদতে কোনো মৌলিক শিথিলতা বা অবহেলার সুযোগ নেই। বরং এই সময়ে ইবাদতের মাধ্যমে অধিক সওয়াব অর্জনের বিশেষ সুযোগ রয়েছে।
ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হলো, ইবাদত আল্লাহর একটি আদেশ যা যেকোনো পরিস্থিতিতে পালনীয়। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইসলাম মানুষকে কিছু ‘রুখসত’ বা সহজ নিয়ম প্রদান করেছে। শীতকালে ইবাদতের ক্ষেত্রে শিথিলতা এবং সুযোগগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
১. অজুর ক্ষেত্রে সুযোগ ও ফজিলত
শীতের তীব্র ঠান্ডায় অনেকে অজু করতে অলসতা বোধ করেন। তবে হাদিস অনুযায়ী, কষ্টের সময় পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করা গুনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম।
- হাদিস: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমি কি তোমাদের এমন কিছু জানাব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মুছে দেবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? সাহাবিরা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন—কষ্ট থাকা সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গরূপে অজু করা…” (সহিহ মুসলিম: ২৫১)।
- সহজ নিয়ম: যদি পানি অত্যন্ত ঠান্ডা হয় এবং গরম করার ব্যবস্থা থাকে, তবে গরম পানি দিয়ে অজু করাতে কোনো বাধা নেই। এমনকি অজুর পর শরীর মুছে ফেলাও জায়েজ।
২. তায়াম্মুমের অনুমতি
যদি পানি অত্যন্ত ঠান্ডা হয় এবং তা ব্যবহার করলে অসুস্থ হয়ে পড়ার নিশ্চিত বা প্রবল সম্ভাবনা থাকে, অথচ গরম করার কোনো ব্যবস্থা না থাকে, তবেই কেবল অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করার অনুমতি রয়েছে (সুরা নিসা: ৪৩)। তবে সামান্য ঠান্ডার অজুহাতে নামাজ ত্যাগ করা বা তায়াম্মুম করা গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. মোজার ওপর মাসেহ
শীতকালে পা ধোয়া বেশ কষ্টকর মনে হলে শরিয়ত ‘চামড়ার মোজা’ (Khuffayn) ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে মুকিম অবস্থায় ১ দিন ১ রাত এবং মুসাফির অবস্থায় ৩ দিন ৩ রাত মোজা না খুলেই তার ওপর মাসেহ করা যায়। বর্তমান সময়ে উলামায়ে কেরাম বিশেষ ধরনের মোটা সুতি বা সিন্থেটিক মোজার ওপরও মাসেহ করার অনুমতি দিয়েছেন, যা শীতকালীন ইবাদতকে অনেক সহজ করে দেয়।
৪. মুমিনের বসন্তকাল: ফজিলতের সুযোগ
শীতকালে ইবাদতে শিথিলতার পরিবর্তে বরং ইবাদত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল” (মুসনাদে আহমাদ)। এর কারণ হলো:
- দীর্ঘ রাত: শীতের রাত অনেক বড় হয়, তাই পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও শেষ রাতে উঠে ‘তাহাজ্জুদ’ আদায় করা সহজ।
- ছোট দিন: দিন ছোট হওয়ায় খুব অনায়াসেই নফল বা কাজা রোজা রাখা যায়। একে হাদিসে ‘শীতল গনিমত’ বলা হয়েছে।
৫. জামাতে নামাজ ও শীতার্তের সেবা
শীতের ভোরে ফজর ও রাতে এশার নামাজ জামাতে আদায় করা কষ্টের হলেও এর সওয়াব বহুগুণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডার সময়ের নামাজ (ফজর ও এশা) পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” (বুখারি: ৫৭৪)। এছাড়া শীতকালে আর্তমানবতার সেবায় বস্ত্র দান করাও মহান ইবাদত।
পরিশেষে বলা যায়, শীতকালে ইবাদতে কোনো অলসতা বা শিথিলতা কাম্য নয়। বরং ইসলামের দেওয়া সহজ নিয়মগুলো (যেমন—গরম পানি ব্যবহার বা মোজার ওপর মাসেহ) গ্রহণ করে এই ‘বসন্তকাল’কে নেক আমলের মাধ্যমে কাজে লাগানোই একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
