
|| বাপি সাহা ||
ভূ-রাজনীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। মেরুকরণ হচ্ছে দিন বদলের মত। অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের সাথে সাথে পেশী শক্তির হাত থেকে মুক্তি পাবার লক্ষ্যে ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলি প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক শক্তিকে মজবুত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং নিজের শক্তির পরিচয় উপস্থাপন করার জন্য কোন পক্ষ অবলম্বন করে অন্যদেশে হঠাৎ আক্রমণ করে নিজে আবার শন্তিচুক্তি বা সমাঝোতা খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের উপর হামলার সমালোচনা হয়েছে বিশ্বব্যাপী। ফিলিস্তিনের গাজায় যে নারকীয় কর্মকাণ্ড চলছে তার প্রতিবাদ বিশ্বব্যাপী। ক্ষুধার্ত মানুষের উপর হামলা কতটুকু যুক্তিসম্মত তা বিশ্ব বিবেকের প্রতিবাদ সেটা বলে দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাজনীতির থেকে ব্যবসা ভালো বোঝেন সেটা বোঝা যাচ্ছে তার শুল্কনীতিমালা বিশ্লেষণ করলে। বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপ করে পরবর্তীতে আলোচনার দরজা খোলা রেখে ইউএসএ মনোগ্রাম যুক্ত ক্রয় করতে বাধ্য করছেন এটার একটা ভালোদিক রয়েছে, সেটি হচ্ছে দেশের প্রতি তার ভালবাসা বা শ্রদ্ধা দেখাতে এটি কিন্তু চমৎকার নীতি।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অন্যতম এবং বৃহৎবাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। সেই পোশাক শিল্পের যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, সেটি মুক্ত হবার জন্য বাংলাদেশকে তৃতীয় দফা বৈঠকে শর্তের মাধ্যমে মুক্ত হতে হয়েছে। কিন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আবার কখন কি নির্দেশে স্বাক্ষর প্রদান করেন তার ঠিক ঠিকানা নেই। যতদিন সুযোগ থাকে আমাদের ততদিন কাজ করে যেতে হবে। আমাদের অর্থনীতিকে মজবুত করার জন্য আমাদের পোশাক শিল্পের উন্নয়নের জন্য এই বাজারে বেশি বেশি অডৃার যোগারের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলির সাথে এগিয়ে থাকতে হবে কারণ মার্কিন শুল্কনীতির বোঝা পরা অনেক দেশের সাথে এখনও চলছে যা চলমান কতদিন থাকে সেটি দেখতে হবে। বাজার খুঁজতে হবে দ্রুত গতিতে কারণ আমাদের অর্থনীতির চাকার শক্তি আমাদের পোশাক শিল্প। শুল্কনীতি ব্যবহার করে এগিয়ে যাওযা কথা ভাবছে মার্কিন প্রশাসন কিন্তু তা কতটুকু সফল হবে সেটি কিন্তু ভাবার সময় এসে গেছে।
সম্প্রতি ভারতের সাথে অনেকটা জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেক চটে গিয়েছেন ভারতের উপর কারণ হিসাবে বলেছেন ভারত রাশিয়ার থেকে তেল ক্রয় করেছে এবং অব্যহত রেখেছে। ফক্স নিউজের “সানডে মনিং” ফিউচার অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী সিএফন মিলার বলেন, মার্কিন প্রশাসনের এই চটে যাওয়া অবস্থায় নয়াদিল্লি ঘোষণা দিয়েছে ভারতের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে সাময়িক সরঞ্জাম ও জ্বালানি কেনা অব্যাহত থাকবে। রাশিয়ার কাছ থেকে সাময়িক সরঞ্জাম ও জ্বালানি কেনার জেরে ভারতের পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের নির্দেশে স্বাক্ষর করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার অনেকটা কঠিন অবস্থানে গিয়ে বলেই দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো যুদ্ধ বিমান এবং অস্ত্র কেনা হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী যুদ্ধ বিমান বিক্রি আগ্রহ প্রকাশ করলেও তা ক্রয়ের আগ্রহ নেই ভারতের। ভারত তার নিজস্ব অর্থনীতিকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে আগ্রহী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদিত পণ্যের বাজার খুঁজছে আর শ্রম নির্ভর উৎপাদিত পণ্য বিশ্ব বাজারে প্রবেশের পক্ষে ভারত কাজ করে চলেছে। মার্কিন চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে তাকে মোকাবেলা করতে ভারত আগ্রহী। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার হিসাবে চীনের কাছাকাছি ভারত।
ইতিমধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারত সফরের ঘোষাণা দিয়েছেন। ক্রেমলিন ভারতের পাশে রয়েছে বলেছে বার্তা দিয়েছে। যাই হোক, চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্ক সমস্যা সমাধান এখনও আলোচনার টেবিলে। ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা আগামী ১৫ আগস্ট আলাস্কায় হবে। ইউক্রেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে জানা গেছে শুধু ইউক্রেন বিষয় নিয়ে এই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে কিনা সেটা আমাদের সন্দেহ। ভারত ও চীনের সাথে কিভাবে সমাঝোতা করা যায় সেটি কিন্ত থাকবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এর আলোচনায়।
ব্রিকস ইতিমধ্যে মার্কিন শুল্কনীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে সবমিলিয়ে মার্কিন শুল্কনীতির বিপক্ষে অবস্থান তৈরি হচ্ছে। ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করা হয়েছে ভারতে পররাষ্ট্র দফরত বিষয়টি নিশ্চিত করেছে অনেকটা শক্ত অবস্থানে ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এর সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, মিলার একথা স্বীকার করলেও তিনি আবার বলেছেন, মার্কিন প্রশাসনকে বাস্তববাদী হয়ে উঠতে হবে। বাস্তববাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্কনীতি নিয়ে কতদূর যেতে পারবে সেটি কিন্ত এখন দেখার বিষয় যদি হোঁচট খায় তাহলে ক্ষতি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের অনেক সিদ্ধান্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ককে। মুক্ত অর্থনীতির এই বিশ্বে একা পথ চলা অনেক কঠিন।
ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত আর মস্কোর সমর্থন ভারতের পক্ষে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইরানের পাশে থেকে যে কূটনৈতিক পরিচয় দিয়েছে সেটি কম নয়। ভারত এ সময়ে তার এক সময়ের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতদের কাজে লাগিয়ে কূটনৈতিক কার্যক্রমকে একটি নতুন পর্যায়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে যা অবক করে দেওয়ার মত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি চাইবে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, না কি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। রাশিয়া, চীন ও ভারত নতুন একটি জোট প্রকাশিত হবে সেটি এখন অপক্ষোর পালা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে শুধু তেল কিনছে না অস্ত্রও কিনছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ভালো বন্ধু একথা বলতেই হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে ট্যারিফ ভীতির মধ্যে রেখে বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন মুলুক এটা বুঝতে শিখেছে “বাণিজ্যে লক্ষীর বসতি”।
এখন দেখতে হবে অবশেষে সমাঝোতা বা বাকযুদ্ধ চলমান থাকে তাহলে পরিবর্তন হতে পারে ভূ-রাজনীর্তি। এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী দিনগুলির জন্য।
লেখক: বাপি সাহা, উন্নয়নকর্মী।