
|| ডাঃ আনোয়ার সাদাত ||
একজন মানুষের অন্য মানুষের প্রতি কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, যা অবশ্যই পালন করতে হবে। কুরআন ও হাদিসে বান্দার হক বা মানুষের অধিকারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এর লঙ্ঘনকারীর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
অধিকার আদায় ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। তাই অপর মুসলমানের প্রত্যেকটি অধিকার যথাযথ পালন করতে হবে। কোনো মানুষের ধন-সম্পদ অবৈধ পন্থায় ভোগ না করতেও সতর্ক করা হয়েছে। অন্যের প্রাপ্য আদায় করে দেওয়া ইবাদতও বটে।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)
একজন মুসলমানের ওপর অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, অন্যের সকল হক-অধিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রদান করা।রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি অন্যায়-নিপীড়ন করেছে বা কারো অধিকার হরণ করেছে, সে অর্থ-কড়ি দিয়ে তা পরিশোধের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আগে যেন মিটিয়ে দেয়, অন্যথায় তার প্রতিদান হিসেবে প্রতিপক্ষের নেক আমল ঋণদাতাকে দেয়া হবে, এমনকি তার কাছে ঋণ-সমপরিমাণ নেক আমল না থেকে থাকে, তবে ঋণদাতার বদ আমল প্রতিপক্ষের ঘাড়ে তুলে দেয়া হবে। ’ (বুখারি )
এ সম্পর্কে ইসলামী শরিয়তের বিধান হলো- যে পর্যন্ত এক বান্দা অন্য বান্দার হক (যার হক সে নষ্ট করেছে) যথাযথভাবে আদায় না করবে বা বান্দার থেকে ক্ষমা চেয়ে না নেবে সে পর্যন্ত আল্লাহও তাকে ক্ষমা করবেন না। একজন মানুষের কাছে অন্য মানুষের টাকা-পয়সা থেকে নিয়ে তার ইজ্জত-আব্রুসহ সবকিছুই আমনত। তা রক্ষা করা প্রত্যেক মানুষ বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। কারও নামে মিথ্যা রটানো, কিংবা কারও ইজ্জত-আব্রু নষ্ট করে তাকে কষ্ট দেওয়ার দ্বারা মূলত তার হক নষ্ট করা হয়। একজন মানুষের কাছে অন্য মানুষের টাকা-পয়সা থেকে নিয়ে তার ইজ্জত-আব্রুসহ সবকিছুই আমনত। তা রক্ষা করা প্রত্যেক মানুষ বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। কারও নামে মিথ্যা রটানো, কিংবা কারও ইজ্জত-আব্রু নষ্ট করে তাকে কষ্ট দেওয়ার দ্বারা মূলত তার হক নষ্ট করা হয়। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাৎ করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ সূরা আহজাব, আয়াত ৫৭, ৫৮।
তৎকালীন যুগে মুনাফিকরা বিভিন্নভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুমিন মুসলমানদের কষ্ট দিয়ে তাদের হক নষ্ট করত। আলোচ্য আয়াত দুটিতে আল্লাহ রসুল ও মুমিন নারী-পুরুষদের কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। যারা এই হুকুমকে মানবে তারা সফলকাম হবে, আর যারা মানবে না তাদের জন্য ইহ ও পরকালে মহাশাস্তি রয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলমান তো সে যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকবে।’ অর্থাৎ কোনো মুসলমান তার হাতের ব্যবহার ও জবানের ভাষা দ্বারা কাউকে কষ্ট দিতে পারে না। শুধু মানুষ কেন? কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়ার বিধান ইসলামে নেই।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
লেখক: ইসলামিক স্কলার, সাংবাদিক ও চিকিৎসক (খুলনা)।