বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯

ভূ-রাজনীতি: অ, আ, ক, খ

কূটনৈতিক বিষয়টি অনেক জটিল এবং কুটিল। সম্প্রতি কিছু সিদ্ধান্ত ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপট অনেকটা পাল্টে দিয়েছে। হিসাব কিন্তু এখন অনেকটা ভিন্ন। তবে হিসাব করে ভাবতে হবে—সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তি বহুদিনের কূটনৈতিক আলোচনার ফল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে যৌথ সামরিক মহড়া, আফগানিস্তানে মার্কিন হুমকি, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্যান্য রাষ্ট্রের ফিলিস্তিনকে সমর্থন—সব মিলিয়ে এখন ভূ-রাজনীতি অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠেছে। মার্কিন শুল্কনীতির আগ্রাসনের মধ্যে ভারত, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে চলা প্রাণবন্ত আলোচনা ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন ইঙ্গিত বহন করছে কি না, তা আমাদের বুঝতে হবে। সম্প্রতি নেপালের ঘটনা অবাক করেছে; তরুণদের আন্দোলনের ফলে শুধু সরকারের পতন নয়, বহুদিনের এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার অবসানও ঘটেছে।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরোধীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় চলেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছে। এই দেশগুলি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ভারতের কূটনৈতিক ভূমিকা কতটা জোরালো হতে পারে, এটি এখন দেখার বিষয়।

মার্কিন আগ্রাসানমূলক শুল্কনীতির কারণে ভারতের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক কিছুটা খারাপ হলেও মোদি সরকার তার নীতি অবিচল রেখেছে। ভারতের সাধারণ জনগণও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন জানিয়েছে। ইরানে মার্কিন আগ্রাসনের বিরোধিতায় ভারতও জোরালো ভূমিকা রেখেছে। আশা করা যায়, ভারত কূটনৈতিক কৌশলে এগিয়ে থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন দিতে জোরালো ভূমিকা রাখবে। ভারতীয় জনগণ যেমন ইরানের পাশে ছিল, ঠিক তেমনি ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে রয়েছে।

অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫-৩: বাংলাদেশ-মার্কিন যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি মার্কিন কূটনীতির একটি সাফল্য এবং কৌশলের বাস্তবায়ন। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশকে সদস্য হিসেবে পেতে চেয়েছে। মার্কিন শুল্কনীতির আগ্রাসনে বহু দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

নেপাল বিষয়টিকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আন্দোলনের শেষে জনগণ ৮০ বছর বয়সী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে বেছে নিয়েছে। তিনি ভারতে বেনারসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি দূর্নীতিগ্রস্ত নেপালে অনেক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। দূর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার পাশাপাশি তিনি দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাজ করছেন।

নেপালের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রীর পদ বরাবরই পুরুষদের দখলে ছিল। সেই ধারা বদলেছে ১২ সেপ্টেম্বর, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির ঐতিহাসিক নিয়োগের মাধ্যমে। তার নিয়োগ একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। নেপালের মতো দেশে যেখানে প্রগতিশীল আইন এবং ভবিষ্যৎমুখী সংবিধান বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে কার্কির নেতৃত্ব উল্লেখযোগ্য।

জাতীয় জনশুমারী অনুযায়ী নেপালের জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী। ২০১৫ সালের সংবিধান ফেডারেল পার্লামেন্টের প্রতিনিধি সভা ও জাতীয় পরিষদে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে। তবুও দেশটিতে নারীর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব অনেক দূর।

৮৫,৫১৩ জন সিভিল সার্ভিস কর্মচারীর মধ্যে ২০.৬৪ শতাংশ নারী। তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে এবং আরও বেশি নারী প্রার্থী দিতে নেপালের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সামাজিক চাপ তৈরি করা প্রয়োজন। বৈষম্যমূলক আইন পরিবর্তনও জরুরি। তাই আইন ও রাজনীতি বোঝা নারীদেরই নেতৃত্ব দিয়ে নারীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

কার্কির মন্ত্রিসভায় ইতিমধ্যে তিনজন নারী সদস্য যুক্ত হয়েছে। নির্বাচনের সময় আরও পর্যাপ্ত সংখ্যক নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে। একজন নারী দেশের নির্বাহী প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে এগুলো বাস্তবায়ন করলে ভবিষ্যতে সরকারের প্রধানদের ওপর ইতিবাচক চাপ তৈরি হবে।

তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি ক্ষমতাচ্যুত হন। সমালোচকরা তাঁর মনোনয়নকে অসাংবিধানিক দাবি করলেও “ডকট্রিন অব নেসেসিটি” এবং জেন-জির ডিজিটাল ভোটের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য জেন-জিরা প্রথম সারির অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীকে বাদ দিয়ে কার্কির ব্যাপারে একমত হয়। আমরা কার্কির সফলতা কামনা করি।

নেপাল আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। গণতন্ত্রের জন্য নেপাল এগিয়ে গেলে এই বিপ্লব সফল হবে। ভারত ও চীন নেপালের কার্কি সরকারের প্রতি সহযোগিতা বাড়িয়েছে। সার্কের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও নেপালের পাশে রয়েছে। সুশীলা কার্কি শুধু নেপালের নয়, সারা বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি নারীর অগ্রযাত্রায় নারীকে নারী নয়, একজন মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন।

লেখাটির শেষ দিকে দেখা যায়, অনেক দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য সমর্থন প্রকাশ করেছে। আশা করা যায়, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি আরও সমর্থন বাড়বে। যারা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের ত্যাগ কখনও বৃথা যাবে না। আমরা প্রতিবাদ জানাই সকল প্রকার হত্যাকাণ্ডের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *