
কারোরই অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, দেশের অধিকাংশ মানুষের চিন্তা-চেতনায় জাগরণ তৈরি হয়েছিল বলেই আজকের এই ক্ষমতার পরিবর্তন। এই পটপরিবর্তনের মূল ভূমিকায় ছিল দেশজুড়ে কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী সাহসী আন্দোলন। বিনিময়ে ঝরেছে অনেক প্রাণ, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। দেশের সর্বস্তরে বৈষম্য বিরাজমান ছিল বলেই অর্জন হয়েছে ছাত্র-জনতার বিজয়ের প্রথম ধাপ। এখন প্রয়োজন এই বৈষম্য দূর করা।
বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে নিঃস্বার্থভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। আহত-নিহত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অনেক শিক্ষার্থী। বিজয়োত্তর ভেঙে পড়া দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ পুড়ে যাওয়া থানা ও সরকারি স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানেও অংশ নিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
অথচ এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি আর বেসরকারি শিক্ষার মাঝে রয়েছে বিরাট বৈষম্য। একদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আদায় করা হয় ভ্যাট ও নানা রকম ট্যাক্স! কি বিচিত্র!!
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি গবেষণা কাজের জন্য সরকারিভাবে অর্থায়ন করা হয়। আমাদের দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই ব্যবস্থা আছে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্থায়ন করা তো দূরে থাক, উলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১৫% ট্যাক্স আদায় করে সরকার।
এখন বিষয় হচ্ছে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিটা কোথায়?
আমরা জানি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ব্যয় বাদ দিলে যে অর্থ থাকে তা বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে জমা হয়, যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজে ব্যবহৃত হয়, হয় নানা উন্নয়ন কাজ। এই ফান্ড থেকে সরকার যখন ১৫% ট্যাক্স কেটে নিয়ে যায়, তখন গবেষণার ফান্ডও ১৫% কমে ১০০% থেকে ৮৫% তে নেমে আসে। দেশের ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে গবেষণা কাজের বিকল্প নেই।
আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশী নাগরিকরা কাজ করে প্রচুর অর্থ নিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরা বেকার জীবন-যাপন করছে। আমরা পিএইচডি ও গবেষণা করতে বিদেশ যাই, অন্য দেশ যেখানে আমাদেরকে গবেষণা কাজে স্কলারশিপ দেয়, গবেষণার ফলাফল তাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগায়। অথচ আমাদের সরকার গবেষণার অর্থ ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ কেটে নিয়ে যায়।
ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে অতিতেও আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় এসেছে, তবে সেটা ছিল বেতনের সাথে অতিরিক্ত, তাই চোখে পড়েছে। আর এখন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আবার তাদেরই ঘাড়ে !!
অতএব, শিক্ষায় বৈষম্য লাঘবে অনতিবিলম্বে সর্বস্তরের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সকল প্রকার ভ্যাট ও ট্যাক্স বাতিল এখন সময়ের দাবি।