বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯

বার্লিনে জলবায়ু সম্মেলনে প্রেসিডেন্সির অধ্যাপক ড. জুলফিকার আলী

|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||

জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে উপকূলীয় নারীদের জীবন কথা তুলে ধরলেন প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জুলফিকার আলী।

বিশ্বের ৩৫ টি দেশের প্রায় ৭০ জন গবেষক, পরিবেশবাদী, শিক্ষক, ডোনার এজেন্সি ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে ২৯–৩০ সেপ্টেম্বর জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত হলো – “4th Global Summit on Advances in Earth Science and Climate Change”যার মূল প্রতিপাদ্য—“Earth’s Future: Harnessing Science, Technology, and Equity for a Sustainable Planet।”। এই সম্মেলনে Distinguished Speaker হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও বিজনেস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জুলফিকার আলী তুলে ধরলেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় নারীদের জীবন সংগ্রাম ও স্বাস্থ্য সংকটের চিত্র। তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে তৈরি বিউটিফুল বাংলাদেশ নামে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন যা উপস্থিত শিক্ষক, গবেষক ও উপস্থিত সকলের দৃষ্টি কেড়েছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা নীরবে লড়ছেন এক অদৃশ্য সংকটের সঙ্গে। জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ও দারিদ্র্যতা তাদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে ভয়াবহভাবে ব্যাহত করছে। অথচ এই সংকটের জন্য দায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা ও উন্নত দেশগুলোর নিরব ভূমিকা।

বার্লিনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের উপকূলীয় নারীদের স্বাস্থ্য সংকট তুলে ধরে তিনি আরো বলেন- আমাদের এই সমস্যার জন্য দায়ী পৃথিবীর ধনী দেশগুলো তাই তাদের এই দায় নিতে হবে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা নীরবে লড়ছেন যে অদৃশ্য সংকটের সঙ্গে আজও তা বহির্বিশ্বের জলবায়ু নিয়ে কাজ করা গবেষকদের দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ও দারিদ্রতা তাদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে ভয়াবহভাবে ব্যাহত করছে।

প্রফেসর আলীর আলোচনায় উঠে এসেছে উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের নীরব স্বাস্থ্য-সংগ্রামের কথা। লবণাক্ত পানির কারণে বিশুদ্ধ জলের অভাব মাসিককালীন স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। অনেক নারী বাধ্য হয়ে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করছেন, যা জরায়ুজনিত রোগ ও শারীরিক ব্যথার কারণ হচ্ছে। আবার দারিদ্রতা ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের অভাবে কিশোরীরা মাত্র বারো বছর বয়স থেকেই মাসিক বন্ধ করতে কনট্রাসেপটিভ পিল ব্যবহার করছে। এটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্যও দীর্ঘমেয়াদি বিপদ ডেকে আনছে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন সাধারণত ফসল, কৃষি বা নদীভাঙনের সঙ্গে বেশি আলোচিত হয়। কিন্তু নারীর দেহ ও মর্যাদা কীভাবে এই পরিবর্তনের চাপে ভেঙে পড়ছে, সেই দিকটি এখনো যথেষ্ট আলোচনায় আসেনি। প্রফেসর আলী সেই নীরব যন্ত্রণার গল্প বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন তাঁর কনসেপ্ট পেপারে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, উপকূলীয় অঞ্চলে এই সংকট কেবল স্বাস্থ্য নয়, নারীর অধিকার, নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদার প্রশ্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা তাই শুধু পরিবেশ বা ইকোসিস্টেম রক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি নারীর জীবন, স্বাস্থ্য ও প্রজনন সক্ষমতার উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রফেসর আলীর গবেষণা প্রমাণ করে যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু কৃষি বা অবকাঠামোতে সীমাবদ্ধ নয়,এটি নারীর স্বাস্থ্য, অধিকার ও সামাজিক মর্যাদার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। তাঁর এ উপস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক গবেষণাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জুলফিকার আলী দীর্ঘ দুই দশক ধরে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অঙ্গনে সক্রিয়। তিনি এখন পর্যন্ত ১০টি গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে তার ৪০ টিরও বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *