
|| মাওলানা আল-আমিন ||
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে সতর্ক করতে মহান আল্লাহ কিছু কিছু বিপদ-আপদ দিয়ে থাকেন। দুর্যোগের সময় মানুষকে সর্বদা ধৈর্য ধারণ করতে হয়। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন,
“আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।” (আল- কোরআন, সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)
দুর্যোগকালীন সুন্নতি আমল
কিছু কিছু সুন্নতি আমল করার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝোড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা উচিত। এছাড়াও আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,
“দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তার কাছে তওবা করো। (বুখারি: ২/৩০; মুসলিম: ২/৬২৮)”
নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত বা দোয়া-দরুদ পাঠ করা হলো আল্লাহর জিকিরের সর্বোত্তম উপায়। ইস্তিগফার, তাসবিহ পাঠ ইত্যাদি দুর্যোগের সময় জিকিরের উপায় হতে পারে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে,
“প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া বইলে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে যেতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন। (মিশকাত শরিফ: ৬৯৬)”
আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচতে মানুষের পরিশুদ্ধ আমল করা প্রয়োজন। তিনি যে আমলে খুশি হন, সে আমল বেশি বেশি করা উচিত। নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা ইত্যাদি ভালো কাজ করতে হবে। হাদিসে এসেছে,
“সদকা মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে। (তিরমিজি: ৬০০)”
ভারি বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ার দোয়া
“اللّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ وَبُطُونِ الأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ ”
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের চারপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের ওপর নয়। হে আল্লাহ! পর্বতমালা, পাহাড়ের ঢাল, উপত্যকা এবং গাছপালার উপর বর্ষণ করুন।
সর্বোপরি, দেশে চলমান ভয়াবহ বন্যা থেকে রক্ষার জন্য মহান রবের দরবারে আমাদের চাইতে হবে- হায় আল্লাহ! তুমি বাংলাদেশের বন্যা দুর্গত যমিনকে আদেশ করোঃ
وَقِیلَ یَـٰۤأَرۡضُ ٱبۡلَعِی مَاۤءَكِ وَیَـٰسَمَاۤءُ أَقۡلِعِی…
অর্থ: “আদেশ হলো, হে জমীন তোমার পানি গিলে ফেল,
হে আকাশ, পানি বর্ষণ বন্ধ করো!” (আল-কোরআন, সুরা হূদ : ৪৪)
যেমন তুমি হযরত নূহ আ.-এর পক্ষে আকাশ ও জমীনকে যেভাবে আদেশ করেছিলে, আমাদের উপর সেরূপ রহম করো। আমিন।
লেখক: ইসলামিক স্কলার, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ।