বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯

নাগেশ্বরীতে ধর্মান্তর ইস্যুতে আলেম সমাজের সংবাদ সম্মেলন‎

|| ‎মোঃ রফিকুল ইসলাম | নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে রাজারহাটের দুই হিন্দু মেয়ের ইসলাম ধর্ম গ্রহণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই প্রেক্ষাপটে স্থানীয় আলেম সমাজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় নাগেশ্বরী পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড মসজিদের দ্বিতীয় তলার ক্যাডেট মাদরাসায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

‎সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ধর্মান্তর ইস্যুকে কেন্দ্র করে হাফেজ ফেরদৌসের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালানোর সময় নারীদের পর্দা ভঙ্গ করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আলেম সমাজ বলেন, প্রশাসনের এ ধরনের কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঘাত করেছে।

‎সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নে হাফেজ ফেরদৌসের ভূমিকা আলোচনায় উঠে আসে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দুই হিন্দু মেয়ের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং লালমনিরহাট আদালতে এফিডেভিট প্রক্রিয়ায়ও সহযোগিতা করেছেন। তবে এসব প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

‎আরেক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, হাফেজ ফেরদৌস সাহেবের বাসায় পুলিশের পাশাপাশি ইসকনের ২৫-৩০ জন সদস্য হামলা চালিয়েছে—এ দাবির সত্যতা কতটুকু। জবাবে তিনি বলেন, “আমি পুলিশের সঙ্গে হাতে লাল সুতা বাঁধা সিভিল পোশাকধারী লোকজনকে দেখেছি।” তিনি ঘটনাস্থলের ভিডিও ধারণ করেছেন বলে দাবি করেন, তবে সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

‎আলেম সমাজের প্রতিনিধি মুফতি আতাউর রহমান বিক্রমপুরী বলেন,
‎“চলমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা আপাতত কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। বিশেষ করে দুর্গাপূজা উপলক্ষে আমরা চাই হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক। তবে পূজা চলাকালীন সময়ে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার আমরা নেব না।”

‎তিনি আরও বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টির সমাধান চাই। কিন্তু দুর্গাপূজা শেষে যদি ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হয়, তাহলে আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের ডাক দেব।”

‎সংবাদ সম্মেলনে আলেম সমাজ প্রশাসনের আচরণের সমালোচনা করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের ভূমিকা ছিল পক্ষপাতদুষ্ট ও অযৌক্তিক। তারা কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মাহফুজ, নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ, রাজারহাট থানার ইনচার্জ  এবং ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান।

‎সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—
‎মাও. মো. আমিনুল ইসলাম, মুহতামিম, জামিয়া হামিউস সুন্নাহ্ কেরামতিয়া মাদরাসা, নাগেশ্বরী, মুফতি আব্দুল হান্নান, মুহতামিম, চন্ডিপুর কওমী মাদরাসা, নাগেশ্বরী, মাও. সিরাজুল ইসলাম, সান্জুয়ারভিটা কওমী মাদরাসা, নাগেশ্বরী, মাও. শহিদুল ইসলাম, মুহতামিম, খাতুনে জান্নাত মহিলা মাদরাসা, নাগেশ্বরী,মাও. আতাউর রহমান, সেক্রেটারি, আযাদী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাও. ফেরদৌস, বিশিষ্ট দায়ী, মুহতামিম, সাবিলুর রাশাদ মাদরাসা, নাগেশ্বরী,আব্দুল মাজিদ, মুহাদ্দিস, জামিয়া হামিউস সুন্নাহ্ কেরামতীয়া কওমী মাদরাসা, নাগেশ্বরী, মুফতি নজরুল ইসলাম, মনিরচর কওমী মাদরাসা, নাগেশ্বরী, ‎মো. হয়রত আলী, মুহতামিম, তেলিয়াণী পাড়া মাদরাসা, নাগেশ্বরী।

‎সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন,“রাজারহাট থানায় করা অভিযোগে নং ৭৭৮/১৬/৯/২৫ এর ভিত্তিতে এবং রাজারহাট থানা পুলিশের টিম সহযোগিতা চাইলে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত অনুসারে হাফেজ ফেরদৌসের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তল্লাশিতে হাফেজ ফেরদৌস এর বড় ভাই সহযোগিতা করেছেন। এ অভিযানে পুরুষ পুলিশের পাশাপাশি মহিলা পুলিশও উপস্থিত ছিলেন, তবে পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্যের সাথে ৪/৫ জন সিভিল পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্য ছিল এতেই তারা ধারনা করে নেন ইসকন সদস্য ছিল। কোনোভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কিছু ঘটেনি।”

‎তিনি আরও বলেন, “সিভিল পোশাকে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকায় তাদের ইসকন সদস্য বলে দাবি করা হচ্ছে। আসলে এটি ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমাদের তল্লাশি অভিযানের পূর্ণ ভিডিও সংরক্ষিত আছে।”

‎সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে আলেম সমাজ বারবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান। তারা বলেন, কোনোভাবেই যেন ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। একই সঙ্গে প্রশাসনের প্রতি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে ঘটনার দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *