
গত কয়েক দিনে দেশে পণ্যমূল্য বেশ কিছুটা কমেছে। মূলত সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ থাকায় পণ্যের দাম কমেছে বলে বলা হয়েছে। দেশে পণ্যমূল্য যে কেবল চাহিদানির্ভর নয়, এ ঘটনা থেকে বিষয়টি আবারও বোঝা যাচ্ছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ পুলিশ-শূন্য হয়ে পড়েছিল। গত দুই দিনে তারা আবার আংশিক কার্যক্রম শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও মাঠে নেই। পুরোনো সিস্টেম বা ব্যবস্থার এখনো পুনঃপ্রবর্তন হয়নি। অর্থাৎ উৎস থেকে বাজারে পণ্য আনতে যে দফায় দফায় চাঁদা দিতে হতো, সেই বাস্তবতা এখন নেই।
এদিকে ছাত্ররা বাজারে বাজারে ঘুরছে; দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে তার প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। ফলে পণ্যের দাম কমেছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করতে শোনা যায়: এখন থেকে কেউ চাঁদা দেবেন না। কেউ কোন নেতার নাম ভাঙিয়ে চাঁদা দাবি করলে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।
এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো আমলে না নিলে সামগ্রিকভাবে দেশের বাজারব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি হবে না। যেমন মধ্যস্বত্বভোগী। দেশের ব্যবসায়ীরা বলেন, উৎস থেকে পণ্য পাইকারি বাজার পর্যন্ত আসতে অন্তত চারবার হাতবদল হয়। যতবার হাতবদল হয়, ততবার পণ্যের দাম বাড়ে। এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেক মানুষ যুক্ত। এর সঙ্গে অনেকের রুটিরুজি জড়িত; কিন্তু এই ব্যবস্থা ভাঙা না গেলে সামগ্রিকভাবে পণ্যের দামে বিশেষ প্রভাব পড়বে না বলেই ধারণা করা যায়।
দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শুল্ক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে এক কেজি চিনি আমদানিতে ৪৩ টাকা কর দিতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ফল আমদানিতেও গত কয়েক বছরে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানিতেও সময়-সময় শুল্ক বাড়ানো-কমানো হয়। এমনকি চাল আমদানিতেও একসময় ৬০ শতাংশের বেশি শুল্ক দিতে হতো। পরবর্তীকালে তা কমানো হয়েছে। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা বারবার বলে আসছেন, উচ্চ শুল্ক থাকলে পণ্যমূল্য কমানো কঠিন।
বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ ক্রেতাদের আচরণ। এক শ্রেণির মানুষের হাতে বিপুল কালো টাকা থাকায় তারা পণ্যের দাম নিয়ে চিন্তিত নন। এতে বাজারে প্রভাব পড়ে। এ কারণে দুর্নীতির চক্র ভাঙা না গেলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া কঠিন।