শনিবার, অক্টোবর ১১

চাঁদাবাজি না থাকায় কমেছে নিত্যপণ্যের দাম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি নেই বললেই চলে। দেশের সবচেয়ে বড় নিত্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কমেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। যার প্রভাব পড়েছে খুরচা বাজারেও।

আগে যেখানে নানা অজুহাতে প্রতি ঘণ্টায় দাম ওঠানামা করত, সেখানে রবিবার (১১ আগস্ট) থেকে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) পর্যন্ত বাজারে সব পণ্যের দাম রয়েছে স্থিতিশীল। প্রশাসনের মনিটরিং টিমের পাশাপাশি নিয়মিত বাজারের খোঁজখবর নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থান থেকে নিত্যপণ্য খাতুনগঞ্জের বাজারে আসতে বেশ কয়েকবার চাঁদা দিতে হতো। এখন চাঁদা আদায়ে জড়িতরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।

খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির একটি সূত্র বলছে, যারা চাঁদাবাজি করত তারা পালিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল আছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। উল্টো কমেছে বেশিরভাগ পণ্যের দাম। ডিও বাণিজ্য বন্ধ হলে পণ্যের দাম আরও কমে আসবে।’

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদাররা জানান, ‘বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৯৫-৯৭ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা, চায়না পেঁয়াজ ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। চায়না রসুন ১৭৫ টাকা, আলু ৪৫ টাকা, আদা ২১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পণ্যের দাম আগের সপ্তাহে ১০ টাকা করে বেশি ছিল।’

চট্টগ্রাম মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বেনাপোল, যশোর কিংবা ঢাকা থেকে এক ট্রাক পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে এলে একাধিক স্থানে চাঁদা দিতে হতো। এর মধ্যে ছিল পৌরসভার নামে টোল, সরকারদলীয় রাজনৈতিক দলের নামে চাঁদা এবং পুলিশের নামেও চাঁদা আদায় করা হতো। প্রতি গাড়ি থেকে অন্তত চার হাজার টাকা নিত তারা।

‘সরকার পতনের পর থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ আছে। চাঁদা আদায়ে জড়িতরা পালিয়ে গেছে। এটা যেন আজীবন বন্ধ থাকে। তাহলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না।’ তবে বেচাকেনা কিছুটা কমেছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।

সবজির দামও কমেছে। কারওয়ান বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পেঁপের কেজি ছিল ৭০ টাকা। পটোল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা কেনা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহদুয়েক আগে এসব সবজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। গতকাল ৭০ টাকা কেজিতে বরবটি, বেগুন ও শসা বিক্রি হতে দেখা যায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে এসব সবজি ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কাঁচামরিচ কোথাও ২০০ আবার কোথাও ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

আলুর দরও কমেছে। মাসখানেক আগে আলুর কেজি ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। এখন খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন। পাড়ামহল্লায় বিক্রি হচ্ছে আরেকটু বেশি দরে। ডিমের ডজন ১৭০ টাকা থেকে কমে সম্প্রতি ১৪৫ টাকা হয়। তবে গতকাল প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা দরে।

ব্রয়লার মুরগির দাম কমে প্রতি কেজি হয়েছিল ১৬০ টাকা। এখন আবার দাম বাড়ছে। গতকাল ব্রয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। তবে সোনালি জাতের মুরগির দর কমেছে। এটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে এর কেজি ছিল ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা।

গরুর মাংস এত দিন ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। সম্প্রতি তা অনেক জায়গায় ৭৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।

ইলিশের দাম তেমন কমেনি। এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে কমবেশি দেড় হাজার টাকা। আধা কেজি ওজনের ইলিশের দাম পড়ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

চালের দর কমানো বেশি জরুরি। কারণ ভাতের বিকল্প নেই। কারওয়ান বাজারের মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘এখন পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক। পণ্য আনা-নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে না। তবু মিলাররা চালের দর বাড়িয়েছেন। সরকার মিলগুলোতে তদারকি করলে দাম কমে আসবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *