
|| অপু দাস | জেলা প্রতিনিধি (রাজশাহী) ||
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িতদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে এই বিশেষ বাহিনী।
সাম্প্রতিক সময়েও অপরাধ দমনে র্যাবের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে এক যাত্রীকে হত্যা করার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মামলার মূল অভিযুক্ত বাসচালককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৫ ও র্যাব-১-এর যৌথ আভিযানিক দল।
মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ইং তারিখ বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী মহানগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন লিলি হল মোড় থেকে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী চট্টঃ মেট্রো ব-১১-০৭৮০ নম্বরের ‘রাহুল ডিলাক্স পরিবহন’-এর একটি বাসে ওঠেন মোঃ আলাউদ্দিন (৩৪)। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার বোন রুমি খাতুন (২৭), তার শিশুসন্তান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তারা গোদাগাড়ী উপজেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
বাসে ওঠার পর বসার জন্য কোনো আসন না পাওয়ায় আলাউদ্দিন বাসের হেলপারের কাছে সিটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার তার অনুরোধ উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে বাস চালিয়ে নিতে থাকেন। একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তারা কোনো গুরুত্ব না দেওয়ায় যাত্রীদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
একপর্যায়ে হেলপার ও সুপারভাইজার ক্ষিপ্ত হয়ে আলাউদ্দিনকে মারধর করেন। এরপর চালকের নির্দেশে কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন হড়গ্রাম নতুনপাড়া এলাকার মাজেদ অ্যান্ড সন্স স্টক ইয়ার্ডের সামনে চলন্ত অবস্থায় বাস থেকে আলাউদ্দিনকে পাকা সড়কের ওপর ফেলে দেওয়া হয়। এতে তিনি মাথার পেছনসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।
ঘটনার সময় আলাউদ্দিনের বোন প্রতিবাদ করলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার শিশুসন্তানকে বাসে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ও পিছন দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসের সহায়তায় প্রায় ৩০০ গজ দূরে গিয়ে বাসটি ব্যারিকেড দিয়ে থামানো হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার বাস ফেলে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে আলাউদ্দিনের ভাই দুলাল হোসেন মোবাইল ফোনে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় গুরুতর আহত আলাউদ্দিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং তারিখ দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই নৃশংস ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে ঘটনাটি দেশজুড়ে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ঘটনার পর নিহত আলাউদ্দিনের ভাই দুলাল হোসেন বাদী হয়ে রাজশাহী মহানগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানায় বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে রুজু হয় এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোপন তথ্য ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-৫ সদর কোম্পানি, রাজশাহী এবং র্যাব-১ সিপিএসসি, পোড়াবাড়ী, গাজীপুর-এর যৌথ আভিযানিক দল ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানাধীন মোহাম্মদী নগর লতিফপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মামলার মূল অভিযুক্ত বাসচালক মোঃ রুবেল ইসলাম (২৯), পিতা ওয়াজেদ আলী, সাং চকপাড়া, দেওপাড়া, থানা গোদাগাড়ী, জেলা রাজশাহীকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। পরবর্তীতে তাকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজশাহী জেলার চারঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
