
|| আন্তর্জাতিক ডেস্ক ||
অবরুদ্ধ গাজায় তীব্র শীতকালীন ঝড় ও প্রবল বৃষ্টির তাণ্ডবে মানবেতর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক ফিলিস্তিনি নারীর মৃত্যু হয়েছে, যা ইসরায়েলি অবরোধ ও ত্রাণ সরবরাহে কড়াকড়ির ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়কে নতুন করে সামনে এনেছে। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও ধ্বংসলীলায় বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকায় হানা দিয়েছে শক্তিশালী শীতকালীন ঝড়। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়ায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অস্থায়ী তাঁবুগুলো ভেঙে পড়েছে এবং অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এই চরম আবহাওয়ার মধ্যে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষ তীব্র ঠান্ডায় ভুগছেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ঝড়ের কবলে পড়ে এক ফিলিস্তিনি নারী প্রাণ হারিয়েছেন এবং অনেক শিশু ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে হাড়কাঁপানো শীতে এক নবজাতকেরও মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের চেয়েও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের আরোপিত ত্রাণ সহায়তার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে যে, প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র, তাঁবু, জ্বালানি এবং ওষুধবাহী ট্রাকগুলোকে সীমান্তে আটকে রাখা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দীর্ঘ পরিদর্শন প্রক্রিয়া এবং ‘নিরাপত্তা’র অজুহাতে ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে না পারায় আশ্রয়হীন মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিশেষ করে উত্তর গাজায় ক্ষুধার পাশাপাশি এখন আশ্রয়ের অভাব মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে গাজায় প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র এক-চতুর্থাংশ ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে আগামী দিনগুলোতে আরও প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত অবকাঠামো ও অস্থায়ী শিবিরগুলোকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলবে। ফিলিস্তিনিরা এখন এমন এক সংকটের মুখোমুখি, যেখানে একপাশে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা আর অন্যপাশে প্রকৃতির রুদ্ররূপ ও ইসরায়েলি অবরোধ—সব মিলিয়ে তাদের বেঁচে থাকাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
