বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯

খুলনায় বেড়েছে কুকুর-বিড়ালের উপদ্রব: আতঙ্কে নগরবাসী

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

খুলনা শহরে বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালের উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। অলিগলি ও প্রধান সড়কগুলোতে ১০ থেকে ১৫টি কুকুরের দলবদ্ধ বিচরণে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, রিকশাচালক ও পথচারীরা প্রায়ই আতঙ্কিত হচ্ছেন। হঠাৎ আক্রমণ, কামড় বা আচড়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। বিশেষ করে রাতে চলাচলকারীরা কুকুরের তাড়া খাওয়ার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন নিয়মিত।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে খুলনা সদর হাসপাতালের এন্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন কক্ষে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। শতাধিক নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুসহ অনেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন টিকা নেওয়ার জন্য।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী এখানে ভ্যাকসিন নিতে আসেন; অনেক সময় সংখ্যা একশোরও বেশি হয়। প্রতিবছর গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ কামড় বা আচড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু, কিশোর ও মহিলার সংখ্যা বেশি।

কামড়ের ধরণ ও ক্ষতের গভীরতা অনুযায়ী তিন থেকে পাঁচ ডোজে ভ্যাকসিন কোর্স দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপো (CMSD) থেকে এসব টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হলেও মাঝে মাঝে ঘাটতি দেখা দেয়। তখন রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিকেও একই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন (খাদ্য নিরাপত্তা ও জুনোটিক রোগ নিয়ন্ত্রণ) ড. পেরু গোপাল বিশ্বাস জানান, ২০২৩ সালে বেওয়ারিশ প্রাণী নিয়ন্ত্রণে ‘স্ট্রিট ডগ ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ চালু হয়েছিল। বর্তমানে তা বন্ধ থাকলেও চলতি অর্থবছরে ৩১টি ওয়ার্ডের প্রায় তিন হাজার পথকুকুরকে র্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথ (WOAH) এই কর্মসূচিতে সহায়তা করছে।

সিটি কর্পোরেশনের নগর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, তারা কুকুরের গণ-টিকাদান, আহত প্রাণীর চিকিৎসা এবং কামড়ের ঘটনার পর আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। তবে নাগরিকদের দাবি, শুধু টিকাদান নয়—খাদ্য, আশ্রয় ও দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনাও জরুরি।

এদিকে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলোও এগিয়ে এসেছে। “Khulna Cat Society” ও Guardians of Paws and Claws (GPC) ফেসবুক গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে পথ বিড়ালদের চিকিৎসা, টিকাদান ও আশ্রয় দিয়ে আসছে। উদ্ধার করা বিড়ালদের চিকিৎসা শেষে দত্তক দেওয়ার ব্যবস্থাও করছে সংগঠনগুলো।

খুলনা জেলা প্রাণি হাসপাতালের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ সাহিদুল ইসলাম এই প্রতিনিধিকে বলেন, “বর্তমানে খুলনা পশু হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে কুকুর ও বিড়ালদের এন্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এতে তাদের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়, যা জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করে এবং মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি কমায়। তাই যারা বাড়িতে কুকুর বা বিড়াল পালন করেন, তাদের দ্রুত টিকা দেওয়া উচিত।”

আইনজীবী ও প্রাণী অধিকারকর্মী শিল্পি রহমান বলেন, “কামড়ের ঘটনা ঘটলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত ক্ষতস্থান সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেওয়াই জীবন রক্ষার উপায়। পাশাপাশি বেওয়ারিশ প্রাণীর জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, নিয়মিত টিকাদান ও স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালু করতে হবে।”

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, একবার র্যাবিস (জলাতঙ্ক) প্রকাশ পেলে তার কোনো চিকিৎসা নেই, এবং এতে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ। তাই সময়মতো টিকা নেওয়াই জীবন বাঁচানোর একমাত্র উপায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *