শুক্রবার, নভেম্বর ১৪

খুলনায় দুই সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

খুলনা মহানগরীতে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার দুই সাংবাদিকের ওপর প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) বেলা সোয়া ৩টার দিকে নগরীর শিববাড়ী মোড়ের সুলতান ডাইন রেস্টুরেন্টের সামনে এ হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

আহতরা হলেন—বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সহকারী মহাসচিব, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সহ-সভাপতি ও খুলনা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য, দৈনিক আমার দেশ খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন (Ehetashamul Haq Shaon) এবং খুলনা ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ, খুলনা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য, দৈনিক আমার দেশ এর স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক প্রবাহ এর মফস্বল সম্পাদক কামরুল হোসেন মনি (Kamrul Moni)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত এহতেশামুল হক শাওনকে চিহ্নিত করে বেধড়ক মারপিট করে। তাকে রক্ষা করতে গেলে কামরুল মনি ওপরও হামলা চালানো হয়। দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি পিটুনিতে তারা গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আহত এহতেশামুল হক শাওন বলেন, “ফোনে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। শিববাড়ী মোড়ে পৌঁছামাত্রই ৮-১০ জন যুবক আমাকে ঘিরে ফেলে এবং অতর্কিতে হামলা চালায়। বাঁচার জন্য আমি হোটেল টাইগার গার্ডেনে ঢুকে পড়ি, কিন্তু তারা কামরুল মনিকেও পিটিয়ে আহত করে।”

কামরুল হোসেন মনি বলেন, “শাওন ভাইয়ের ওপর হামলা হলে আমি এগিয়ে যাই। তখন আমাকেও বেদম মারধর করা হয়। এটি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত হামলা।”

হামলার ঘটনায় খুলনার সাংবাদিক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এক যৌথ বিবৃতিতে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়া মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয়, কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানা, নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ নূরুজ্জামান ও সোহরাব হোসেন পৃথক বিবৃতিতে একই দাবি জানান।

বিএফইউজে-এর সহ-সভাপতি ড. মো. জাকির হোসেন, আবু তৈয়ব, মো. রাশিদুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী সদস্য শেখ দিদারুল আলম ও এইচ এম আলাউদ্দিনও হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।”

স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ, হামলার পর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার আধাঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেনি।
মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানা বলেন, “প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণ।”

খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় দুর্বৃত্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, “সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *