|| আব্দুল হামিদ সরকার ||
কাঁদতে চাই আমি —–
কিন্তু জলশূন্য আখি, শুকিয়ে যাওয়া পলির মতো
অভিনয়ের সংলাপে করি চেষ্টা
অঝোরে কাঁদার জন্য ব্যাকরণ খুঁজি
নাট্যশালার কর্মীরা যেমন কাঁদে।
কাঁদতে চাই আমি —–
কিন্তু কিছু হারালে তো কাঁদবো?
কি ছিলো তাও তো জানি না?
উপন্যাসের করুন কাহিনীতে কাঁদবো
তবে তা যে কৃত্রিমতায় ভরা, তাহলে কাঁদবো কেন?
কান্নাটাও অনেক চড়া দামে কেনা
চোখের জল যত্রতত্র পড়বেই বা কেন?
কাঁদতে চাই আমি —-
কিন্তু পারছি না কাঁদতে, অরণ্যে ও বটের ছায়ায়
কাঁদতে গিয়েছিলাম, চোখে ঝর্ণার নহর বইলো না।
ফিরলাম অশ্রুহীন আখি নিয়ে,
লোকালয়, জনপদে বললো সবে,
কি আশ্চর্য লোকটি কাঁদতে চায়?
কাঁদতে চাই আমি—-
কিন্তু কৃত্রিম জলে সিক্ত হয়ে নয়, নহে কোনো মুখোশে
পৃথিবীর কোনটি মানুষ, কোনটি রোবট?
কোনটি মুখোশ চেনা বড়ো দুষ্কর। রোবটও কাঁদে
পুতুলও কান্নার আওয়াজে মাতায় সবাইকে
কার্টুনের কান্নায় কি জল বয়ে যায়?
তবু্ও বলে সবে কান্না।
কাঁদতে চাই আমি —-
কিন্তু মানব দেহের চোখ দিয়ে কাঁদতে চাই
লেবাস সর্বস্ব নিষ্ঠুর চোখে নয় কান্না
অযথা মুঠো মুঠো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে লাভ কি?
কৃত্রিমতার হাসি, আর অভিনয়ের বাঁশিতে
কাঁদতে চাই না আমি।
কাঁদতে চাই আমি —
অবশেষে দুচোখ বেয়ে এলো জল
রাস্তায় ক্ষুধার্ত শিশুর আহাজারি
পরকীয়া প্রেমের বলি ফুটফুটে দুধের শিশু
অগ্নিদাহনে দগ্ধ মানুষের হাহাকার
আমি কাঁদলাম, যেমনটি চেয়েছিলাম কাঁদতে।
ছেড়াবস্ত্রে পেটের ভুখ নিবারনে
বৃদ্ধ পিতার রিক্সার প্যাডেলে হাড্ডিজাগা দু’পা
পীড়া দেয় মোর দেহ আঙিনায়,
বানের জলের মতো ধেয়ে আসা আখি়ভরা জল
অবশেষে কাঁদলাম আমি।
কাঁদতে চাই আমি —-
কিন্তু কোনো ফটোসেশনে লোক দেখানো কান্না নয়
নহে নকলের গায়ে আসলের সাইনবোর্ড,
অসাম্যে আসে কান্না,
ধনী দরিদ্রের বিভাজনে আসে কান্না
কাঁদবো আমি– নহে কোনো বাহানার কান্না।
কাঁদতে চাই আমি —
দেহ মন উজার করে
কান্নার লোনা জলের গাঁথুনি হয় যেন দৃঢ়
মিছে কান্নার মিঠা জলে, স্বকীয়তা নেই তার তরে
আমি কাঁদতে চাই এমন জলে।
— আব্দুল হামিদ সরকার
(৪/২/২৫)
লেখক: বিশিষ্ট কবি ও ঔপন্যাসিক এবং সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বেলকুচি বহুমুখী মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ। রচনাকাল: ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।