রবিবার, জুলাই ২৭

ইবিতে পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ভর্তি ছাত্রদল নেতা

|| রাজিব মিয়া | নিজস্ব প্রতিনিধি ||

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালার বাইরে গিয়ে পুনঃভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ছাত্রদল নেতা আনোয়ার পারভেজসহ ছয়জন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিকূলতার কারণে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ভর্তি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করতে না পারেন, তবে তার পুনঃভর্তির সুযোগ থাকে না। কিন্তু সেই নিয়ম উপেক্ষা করেই ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ছয় শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি এমন শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে প্রশাসন। অর্ডিন্যান্সের বাইরে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাজনৈতিক বিবেচনার কথা বললেও ভর্তি হওয়া সবাই রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে পুনঃভর্তির আবেদন করেননি। এদের মধ্যে একজন পারিবারিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করেন বলে জানা গেছে। পারিবারিক কারণ দেখিয়েও রাজনৈতিক বিবেচনায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী হলেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ।

অ্যাকাডেমিক শাখা ও বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার পারভেজ ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে পরিসংখ্যান বিভাগে অনার্স শুরু করেন এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সে ভর্তি হলেও কোর্স শেষ করতে পারেননি। পরে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে পুনঃভর্তির আবেদন করেন। যদিও বিভাগীয় সভায় আবেদনটি বিবেচনায় এনে সুপারিশ করা হয়, অ্যাকাডেমিক শাখা তা নিয়মবহির্ভূত হিসেবে উল্লেখ করে উপাচার্যের দপ্তরে পাঠায়। শুরুতে উপাচার্য অনুমোদন দিলেও অর্ডিন্যান্স লঙ্ঘনের কারণে তা স্থগিত করা হয়।

পরবর্তীতে পারভেজসহ অন্য পাঁচ ছাত্রদল নেতার পুনঃভর্তির বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উঠলে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়টি যাচাই বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ভর্তির জন্য সুপারিশ করা হলে সিন্ডিকেটে তা অনুমোদন হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার পারভেজের আবেদনপত্রে উল্লিখিত পারিবারিক সমস্যাটি বাস্তব নয়। কারণ রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগ থাকলেও, আনোয়ার পারভেজ নিয়মিত ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী আমলে বিভিন্ন সময় আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। এমনকি ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত হলে অবস্থান করতেন। ২০১৭ সালের পর হলে থাকার সুযোগ না পেলেও তাকে ক্যাম্পাসে চলাফেরা, আড্ডা দেওয়াসহ আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে দেখা যেত।

এসব বিষয়ে আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমি গত বছরের নভেম্বর মাসের দিকে প্রথম আবেদন করি। সিন্ডিকেট বাদে ভিসি স্যার আমাকে অনুমতি দিয়ে দেন। পরবর্তীতে যখন সেটা ধরা পড়ে তখন স্থগিত করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমিসহ আরও কয়েকজন আবেদন করি। সিন্ডিকেটে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।

পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যখন অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হব তখন তৎকালীন কমিটির সভাপতি এবং সেক্রেটারি কেউই মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। আরও অনেক নেতা-কর্মী মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি।

ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আড্ডা দেইনি ক্যাম্পাসে, জুমার নামাজ পড়তে আসতাম। এটার সঙ্গে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষার বিষয় এক না। আর আমি যখন খেলাধুলা করতাম তৎকালীন প্রক্টোর রাশেদুজ্জামান স্যার আমাকে নিরাপত্তার জন্য নিয়ে যেতেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অথরিটি যেটা অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে সেটা নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কথা না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও এর আগে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র আমাকে বিতর্কিত করার জন্য এমন করছে একটি মহল। আমি রাজনীতিতে গেলে হয়তোবা অনেকের জন্য সেটা সুবিধাজনক হবে না। আমি মনে করি শুধু আমাদের একটি মহল না, বাইরের কিছু মহল মিলে এই কাজটি করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা জানান, বর্তমান আহ্বায়কসহ অনেকেই সেইসময় নিয়ম মেনে পড়ালেখা সম্পন্ন করেছেন। আমরা পেরেছি, সে কেন পারেনি? ছাত্রত্ব ধরে রাখতে এবং নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার উদ্দেশ্যেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন আনোয়ার।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার প্রেক্ষিতে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। এছাড়া অর্ডিন্যান্স বহির্ভূত অন্য কোনো বিষয় কনসিডার করা হয়নি। পারিবারিক বা অন্য কারণে পড়ালেখা শেষ করতে পারেনি এমন কারো ভর্তির সুযোগ নেই।’

যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নজিবুল হক বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের, আমরা শুধু যাচাই করেছি।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘যারা রাজনৈতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত, কেবল তাদের ক্ষেত্রেই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো ব্যক্তিগত কারণ গ্রহণযোগ্য নয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *