
|| প্রফেসর ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী ||
আজ ১৮ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই দিবসকে সম্ভাব্য যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের চেষ্টা করছি কয়েক বছর থেকে।
আমাদের উদ্দেশ্য যদি থাকে আরবি দৈনন্দিন জীবনে নয়; শুধু দিবস পালনে। তাহলে এ দিবস পালনে কোন যথার্থতা বা সার্থকতা নেই।
আমাদের দেশে অনেক কামিল মাদ্রাসায় আরবি ভাষা সাহিত্যে অনার্স খোলা হয়েছে। দু/একটি সরকারি কলেজেও আরবি ভাষা সাহিত্যে অনার্স রয়েছে। বাংলাদেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগ রয়েছে। ভাষা ইনস্টিটিউটও রয়েছে কয়েকটি।
কিন্তু আরবি ভাষা শিখা এবং এর আন্তর্জাতিকতা বিষয়ে আমাদের এ দেশীয় আরবি শিক্ষিতদের তেমন কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয় না। কয়েক বছর থেকে শুধু এ দিবসটি পালন এবং আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ রয়েছি আমরা। এর উন্নয়নে দৈনন্দিন জীবনে এর বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিকীকরণের বিষয়ে কোনরূপ পদক্ষেপ আমাদের দেশে নেই।
আরবি বিষয়ে আমাদের দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী পণ্ডিতদের মাঝে নেতিবাচক আচরণ বরাবরই পরিলক্ষিত হয়। তারা না বুঝে না জেনে অজ্ঞতাবশত এ ভাষাকে নিছক একটি ফকিরী ভাষা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এবং আরবি শিক্ষিতদের তারা সেভাবেই মূল্যায়ন করে থাকেন।
এছাড়া আমাদের সমস্যা তো রয়েছেই। আমরা যারা আরবি পড়ি এবং পড়াই তারা এর আধুনিক প্রযুক্তিগত বিষয়টিকে একেবারেই আড়াল করে রাখি। এখনো আমরা গতানুগতিক ধাঁচে পড়ে এবং পাঠদান করে থাকি।
শুধুমাত্র একটা কাগজে সার্টিফিকেটের জন্য অন্য কোন বিভাগে চান্স না পেলে বিভাগটিতে ভর্তি হয়ে থাকি। যারা ভর্তি হন তারা যে খুব মানের তাও নয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সিলেবাস কারিকুলাম ওভাবে আধুনিকীকরণ না হওয়ায় আমাদের শিক্ষার্থীরা কিছুই জানতে বা শিখতে পারে না। তাই একজন শিক্ষার্থী আরবি বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স করার পরেও তার পেটে বোমা মেরে একটি আরবি শব্দ বের করা যায় না এরকম নজির একেবারে কম নয়।
এভাবে চলতে থাকলে আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরবি বিভাগ অদূর ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমার প্রস্তাবনা হলো
আরবি বিভাগের সকল কোর্স আরবি মিডিয়ামে পাঠদান করানো।
প্রথম বর্ষেই দুটি সেমিস্টারে ভাষা বিষয়ে এভাবে দক্ষ করে তোলা যে দ্বিতীয় বর্ষে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী অনায়াসে যে কোন বিষয়ে আরবিতে লিখতে পারে।
আরবি রচনা বিষয়ে একাধিক কোর্স রাখা যেতে পারে। যাতে একজন শিক্ষার্থী নিজ থেকে রচনা লিখতে পারেন।
কথোপকথন (حوار) একাধিক কোর্স রাখা যেতে পারে। ক্লাসে এগুলোর বেশি বেশি মৌখিকভাবে চর্চা বাধ্যতামূলক করা।
প্রতিমাসে আরবি বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা।
প্রশ্নে সাহিত্য বা কাব্যাংশ থেকে আর কোন অনুবাদ না দেওয়া।
প্রশ্নের গতানুগতিক ধারা পাল্টে ফেলানো। ইংরেজি সাহিত্যের ধাঁচে সকল ধরনের প্রশ্ন আপটুডেট করা।
শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে ছোট ছোট আরবি গল্প রচনায় অভ্যস্ত করা।
আরবী ছোট গল্পের আলোকে নাটক মঞ্চস্থ করা।
সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে আরবি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা।
একাডেমি থেকে একটি করে আরবী পত্রিকা প্রকাশ করা।
সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় আরবী একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা।
একাডেমির অধীনে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা রচনা প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা করা।
কৃতি শিক্ষার্থীদেরকে মধ্যপ্রাচ্যে উচ্চতর গবেষণার জন্য মনোনয়নের ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধিতে আরবিবিদদের অবদানের মূল্যায়ন করা।
আরবি ভাষা সাহিত্য বিষয়ক মানসম্পন্ন থিসিস/গ্রন্থ প্রকাশের ব্যবস্থা করা।
বাংলা ভাষায় আরবিবিষয়ক রচনাবলী সংগ্রহ করে রচনা সামগ্রী প্রকাশ করা।
রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সেতুবন্ধন স্থাপন করা। এবং আরবি দক্ষ জনশক্তি সে দেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করা।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিটি বিভাগে একটি করে আরবি ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা।
সমন্বিতভাবে এভাবে প্রচেষ্টা ব্যয় করলে আরবি ভাষা আর ফকিরি ভাষা নয় দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সবচাইতে বড় মাধ্যম হবে বাংলাদেশের আরবি ভাষা। এর সমৃদ্ধিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অত্যাবশ্যক।
লেখক: প্রফেসর, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ও সাবেক ডিন, থিওলজী এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
