
|| ডা. আনোয়ার সাদাত ||
মানুষ অসুস্থ হলে সাধারণত শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় সে আত্মীয়-স্বজন ভাই বোনদের কাছ থেকে সান্তনা ও সেবা সুশ্রূষা পেতে চায়। একজন অসুস্থ মুসলিম ভাই তো আরেকজন সুস্থ মুসলিম ভাইয়ের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশা করে। এটা হচ্ছে এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের হক বা অধিকার বিশেষ।
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত এবং সহিহ বুখারী ও মুসলিম শরিফে উল্লেখ রয়েছে- এক মুসলমান উপর আরেক মুসলমানের পাঁচটি হক। তার মধ্যে সালাম ও হাচির জবাব দেওয়া ছাড়াও ওপর তিনটি হক বা অধিকার হলো রুগ্নের পরিচর্যা করা, জানাজায় অংশগ্রহণ করা এবং দাওয়াত কবুল করা।
ইসলামের দৃষ্টিতে কেউ অসুস্থ হলে সেবা-শুশ্রূষা ইত্যাদি পাওয়া তার অধিকার। রোগী ও অসুস্থকে দেখতে যাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নতও বটে। রোগীকে দেখতে যাওয়ার সময় তার খোঁজখবর নেয়া, প্রয়োজনে তার সেবাযত্ন করা এবং তার রোগমুক্তির জন্য দোয়া করার ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম।
আরেক হাদিসে আছে, হযরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তদের অন্ন দাও, রোগীদের সেবা করো এবং বন্দিদের মুক্তি দাও। (বুখারি ৫৬৪৭)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোগীকে সেবা করতে যায়, আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী তাকে লক্ষ করে বলেন, তুমি মুবারক হও এবং মুবারক হোক তোমার এই পদচারণা। তুমি জান্নাতে নিজ আবাস তৈরি করে নিলে।’ (ইবনে মাজাহ ১৪৪৩)
রোগীর খোঁজ-খবর রাখার ফজিলতের বিষয়ে হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি তার অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ তার কাছে অবস্থান করে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে।’ (তিরমিজি ৯০৯)
হযরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কোনো মুসলমান অপর (অসুস্থ) মুসলমানকে সকালে দেখতে গেলে ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। যদি সে সন্ধ্যাবেলা তাকে দেখতে যায়, তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি করা হয়।’ (তিরমিজি ৯১১)
আর রোগীর আর্থিক সমস্যা থাকলে অবশ্যই এব্যপারে তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
লেখক: ইসলামিক স্কলার, সাংবাদিক ও চিকিৎসক (খুলনা)।
