|| আব্দুর রহিম ||
নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্ব হলেও এনটিআরসি শতভাগ স্বচ্ছভাবে শিক্ষক দিতে পেরেছে। আর নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ার কারণ এনটিআরসিকে শতভাগ ক্ষমতা প্রদান করা হয় নাই। পিএসসির আদলে একটা স্বতন্ত্র শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন করা দীর্ঘ দিনের দাবি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো খসড়া নীতিমালা তৈরি করা পর্যন্তই শেষ আর কোনো খোঁজ খবর নেই।
অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, সহকারী সুপার, ইবতেদায়ী প্রধান এখন নিয়োগ দেয়া হয় ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে। ফলে এখানে যোগ্য, দক্ষ, শিক্ষা বান্ধব লোকের চাইতে টাকার পাওয়ার বেশি। ফলে যোগ্য লোক এই পদে আসতে পারে না। এর সাথে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি তো এই ধ্বংসের মূল অস্ত্র। যার প্রমাণ নিজ প্রতিষ্ঠান।
সেখানে যার সার্টিফিকেট নেই সে এখন সুপার পদে। তিনি আবার নিয়োগ দিয়েছেন ফাযিল ফেল করা লোককে।
আপনি যে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এর প্রমাণ পাবেন, যে শিক্ষা বান্ধব ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং আর্দশ, দক্ষ, যোগ্য লোকের অভাবে প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলছে।
ম্যানিজিং কমিটির সদস্য হলেন রাজনৈতিক নেতা।তিনি ছাত্র জীবনে পড়াশোনা করেন নাই। তিনি বলতেন পড়াশোনা দিয়ে কী হবে? আর এখন তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের ম্যানিজিং কমিটির সদস্য। তিনি এসেছেন পদের জন্য আর টাকা আয়ের ধান্দায়। তিনি আর অধ্যক্ষ, সুপার মিলে এখন গদিতে। তাই আচ্ছা মতো প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ভোগ করবেন।
একজন শিক্ষা বান্ধব, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি আরেক জন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির মর্ম বুঝেন।দুর্নীতি আর চুরিকে সে অপরাধ ও ঘৃণা মনে করেন।আর যিনি সারা জীবন চুরি ও দুর্নীতির মধ্যে ছিলেন, সে সে-রকম লোককে পদে বসায় যে তার মতো। যোগ্য লোককে নয়।
কিছু লোকের অবৈধ ইনকাম ও অযোগ্য লোকেরা প্রতিষ্ঠান প্রদান হওয়ার সুযোগ বন্ধ হবে তাই তারা এনটিআরসি এর মাধ্যমে নিয়োগ হোক এটা চায় না।
তারা এটা বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার এক শ্রেণির লোক মামুর বাড়ির আবদার করেন যে আমরা জমি দিয়েছি আমাদেরকে কিছু দিবেন না? সব এনটিআরসি নিয়ে যাচ্ছে। যদি আপনাদের মাতবারি ধরে রাখতে চান তাহলে এমপিও ভুক্তি থেকে ছুটে আসেন।
যেসব অনিয়ম হচ্ছে :
১. জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় না।
২. আঞ্চলিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সব পত্রিকা কিনে নেন। যাতে কিছু নিদির্ষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ জানতে না পারে।
৩. শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে জনবল কাঠামো নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না।
৪. অ্যকাডেমিক সনদ জাল থাকে। সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সনদ সত্যায়িত না করে নিজেই সীল বানিয়ে সত্যায়িত করে থাকেন। যার ফলে জাল সনদ ধরা পরে না।
৫. ডিপ্লোমার (কম্পিউটার, ল্যাব ইত্যাদি) অনেক সনদ জাল থাকে।
৬. টাকার বিনিময়ে নিয়োগ।
৭. রাজনৈতিক প্রভাবে যোগ্য লোক নিয়োগ পান না।
৮. প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অন্যান্য পদের নিয়োগ পরীক্ষা হয় নামে মাত্র!
৯. পরীক্ষার আগেই সিলেকশন হয়ে যায় কে পরবর্তী প্রতিষ্ঠান প্রধান হচ্ছেন।
১০. অনেক সময় যিনি পরীক্ষায় প্রথম হন তাকে নিয়োগ প্রদান করা হয় না।
একটা প্রতিষ্ঠানের মূল রূপকার হলেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু তিনি যদি অযোগ্য ও চামচা হন, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কী চারদিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি যেই প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করছি একসময় সেই প্রতিষ্ঠান থেকে এ+ সহ ঢাবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেন। বর্তমানে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার সনদ জাল! শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
এইভাবে কিছু নামকরা প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি সব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই নাজুক।
অনেকেই আবার নিজেরা এই পদে আসতে পারবে না সেই ভয়ে এনটিআরসি এর অধীনে চলে যাক সেটা চান না।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি করে আসছে যোগ্যতা ও স্বচ্ছতাভিত্তিক নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এনটিআরসি -এর অধীনে পদগুলো নেওয়া। কিন্তু কাদের ইশারায় এটা বাস্তবায়ন হয় না সেটাই মূল বিষয়। কিছু কিছু লোক দাবি করেছেন যে তারা প্রতিষ্ঠান করতে জমি দিয়েছেন। তাই সবকিছু এনটিআরসি এর অধীনে হলে তারা কী পাবে?
তাদেরকে কিছু দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কী?
কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বর্তমানে বেশিরভাগ নিয়োগ হচ্ছে টাকার বিনিময়ে ও রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায়। অধ্যক্ষ- সুপার চৌদ্দ লক্ষ, সহসুপার দশ লক্ষ বাকি পদে ছয় লক্ষ করে নেওয়া হচ্ছে।
লেখক : শিক্ষক, সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডি. ডি. এফ. আলিম মাদরাসা, বরিশাল।